সাত হত্যাকাণ্ড: স্পর্শকাতর কথপোকথনের রেকর্ড গোয়েন্দাদের হাতে!
নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনের অপহরণ ও খুনের ঘটনায় অবশেষে জট খুলতে শুরু করেছে। গোয়েন্দদের হাতে এসেছে স্পর্শকাতর কথপোকথনের রেকর্ড। খুব তাড়াতাড়িই হত্যার রহস্য উন্মোচিত বলে আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এক প্রতিবেদনে জানায়, অপহরণের আগে ও পরে গ্রেফতারকৃত র্যাব কর্মকর্তাদের অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ডের খতিয়ান সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সংগৃহীত এসব তথ্য ও উপাত্তের যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে। সাত খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে র্যাব-১১ এর সাবেক পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাকে গত ১৭ ও ১৮ মে গভীর রাতে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের রিমান্ডে নিয়ে গত তিন দিন ধরে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে রিমান্ডের শুরু থেকে সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তা যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদে অসহযোগিতা করেছিলেন গতকাল থেকে তারা কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনজনকে নিরাপদ স্থানে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে বরাবরই সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কেউ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে গত তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তারা। সেসব তথ্য গুরুত্ব সহকারে যাচাই-বাছাই চলছে।
পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, গ্রেফতারকৃত র্যাবের সেই কর্মকর্তারা রিমান্ডে কেমন আছেন? কী খাচ্ছেন? আবার তাদের কীভাবে রাখা হয়েছে? এ বিষয়গুলো নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাধ্যে। আজ শেষ হচ্ছে গ্রেফতার তারেক সাঈদ মাহমুদ ও আরিফ হোসেনের পাঁচ দিনের রিমান্ড। অপর দিকে রবিবার গ্রেফতার সাবেক র্যাব কর্মকর্তা এম মাসুদ রানার রিমান্ডের আজ চতুর্থ দিন চলছে।তদন্ত সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন র্যাবের এই তিন কর্মকর্তা কর্মস্থলে একে অপরের সম্পূরক হয়ে কাজ করলেও রিমান্ডে থাকা অবস্থায় একজন আরেক জনের মুখও দর্শন করতে পারেননি। তাদের তিনজনকে রাখা হয়েছে তিনটি আলাদা কক্ষে। খেতে দেওয়া হচ্ছে পুলিশের মেসের খাবার। কোনো প্রকার পত্রিকা বা মামলা-সংক্রান্ত কোনো তথ্য তারা পাচ্ছেন না। তিন কর্মকর্তাকে পুলিশের আলাদা তিন টিমের ১২ সদস্য পর্যায়ক্রমে আড্ডার ছলে তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিন কর্মকর্তা একে অন্যকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তবে কী বিষয়ে দোষারোপ করছেন তা বলতে রাজি হয়নি সূত্রটি। এতে অনেকটাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে আজ রাতে তিনজনকে মুখোমুখি করা হতে পারে বলে তদন্ত- সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন জানায়, র্যাবের সাবেক কর্মকর্তাদের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় এনে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. দুলাল চন্দ্র চৌধুরী পুনরায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডা. প্রবীর কুমার দাসকে নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, গতকাল সকালে জেলা পুলিশ সুপার লিখিত চিঠির মাধ্যমে রিমান্ডে থাকা র্যাব কর্মকর্তাদের জন্য চিকিসৎক চেয়ে অনুরোধ জানালে বিশেষ প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক নয় শর্তে একজন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে।