চট্টগ্রামে তরুণী খুন: ‘১৬০০ টাকায় ভাড়া করেছিলাম জোছনাকে’
‘১৬০০ টাকায় ভাড়া করেছিলাম জোছনাকে। কথা ছিল সারারাত থাকবো তার সঙ্গে। একটি হোটেল ভাড়া নেবো। এরপর সকালে যে যার মতো চলে যাবো। কিন্তু যখন আমরা রুম ভাড়া নেই তখন সে বেঁকে বসে। এই নিয়ে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। হুমকি দেয় সকাল হলে সবার সামনে রাতের কথা বলে দেবে। মাথায় রক্ত উঠে যায়। কিছু না বুঝেই ধারালো ছুরিটা কোমর থেকে বের করে ওর পেটে ঢুকিয়ে দেই।’চট্টগ্রামে আবাসিক হোটেলে খুন হওয়া তরুণীর ঘটনায় এভাবেই বর্ণনা দেয় অভিযুক্ত জাকির হোসেন। গতকাল সোমবার সকালে ওই তরুণীকে হত্যার পর দ্রুত রুমের দরজা লাগিয়ে দেন হোটেলটির কর্মচারীরা। এরপর পুলিশ এসে রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করে তার কাছ থেকে। আটক করে নিয়ে যায় কোতোয়ালি থানায়। সেখানে জানতে চাইলে মানবজমিনকে জাকির বলে, ‘জোছনা মেয়েটির ছদ্ম নাম। কখনও সে জোছনা বেগম, আবার জোছনা আক্তার। পেশায় সে নিশিকন্যা। তবে অন্য মেয়েদের মতো নয়। চাইলে তাকে পাওয়া খুব দুষ্কর। টাকার প্রতি লোভ ছিল মেয়েটির।’
জাকির আরও জানায়, সেদিন রাত সাড়ে ৯টায় তারা স্টেশন রোড এলাকায় যায়। সেখানকার পার্শ্ববর্তী রেয়াজুদ্দিন বাজারের হোটেল আল-আরাফাতের একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। পরিচয় জানতে চাইলে হোটেল ম্যানেজারকে বলে স্বামী-স্ত্রী। রাত ৩টায় জোছনা তার প্রাপ্য চেয়ে বসলে বিপাকে পড়ে জাকির। কারণ এই সময় তার পকেটে পুরো টাকা ছিল না।
জোছনা তখন বলে, ‘টাকা না থাকলে আমাকে আনছিস্ কেন? এখন সবার সামনে সব কথা বলে দেবো। তখন মুখ দেখাতে পারবি না। আমি অন্য জায়গার সময় নষ্ট করে এখানে এসেছি।’
জাকির থামানোর চেষ্টা করলে মেয়েটি প্রচণ্ড রেগে যায়। এক পর্যায়ে সে ধারালো ছোরা দিয়ে জোছনাকে আঘাত করে। প্রথমে তার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিলে সে মেঝেতে পড়ে যায়। পরে মৃত্যু হয়।
জাকির বলে, ‘আমি জোছনাকে চুপ করতে বলি। কিন্তু সে আমার মা-বাবা ধরে গালাগাল করছিল। আরও বলছিল- সব নাকি বলে দেবে। তার মুখ বন্ধ করতে পেটে ছুরি চালাই। দেখলাম তখনও সে বেঁচে আছে। গোঙাচ্ছে। আওয়াজ বন্ধ করতে গলায় ছুরি বসিয়ে দেই। বুকে ছুরি মারি।’
জাকির আরও বলে, ‘জোছনাকে ভাড়া করার আগে সে আমাকে তেমন পাত্তা দেয়নি। রাগ ধরে গিয়েছিল। এর আগেও আমি এমন অনেক মেয়ের সঙ্গে রাত কাটিয়েছি। কিন্তু ওরা টাকা-পয়সা নিয়ে ঝামেলা করেনি।’
ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণ পরই হোটেল আল-আরাফাতের কর্মচারীরা দরজা লাগিয়ে তাকে আটকে রাখেন। পরে কোতোয়ালি পুলিশ এসে তাকে আটক করে। হোটেল আল-আরাফাতের ম্যানেজার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ওরা ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে রুম ভাড়া নিয়েছিল। শুরু থেকেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। রাত সাড়ে ৩টায় তাদের রুম থেকে চিৎকার আসে। আমরা দৌড়ে যাই। কাছাকাছি গিয়ে শুনতে পাই একটি মেয়ে বাঁচার জন্য চিৎকার করছে।’
‘মেয়েটি ভেতর থেকে জোরে জোরে বলছিল আমাকে ছাড়। নইলে সব ফাঁস করে দেবো। প্রথম দিকে আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও এর ১৫ মিনিট পর গোঙানির আওয়াজ শুনে ভড়কে যাই। বুঝতে পারি কিছু একটা হয়েছে। এরপর বাইর থেকে দরজা লক করে দিয়ে পুলিশকে খবর দেই। তারা এসে লাশ উদ্ধার করে।’
গতকাল সোমবার দুপুরে কোতোয়ালি থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, ‘খুনি জাকির ধরা পড়েছে। তার কাছ থেকে রক্ত মাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, ঘাতক জাকির হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে। সে নগরীর বাজারের একটি জুতার দোকানের কর্মচারী। রাত ৩টায় ঘটনা ঘটার পর ভোররাতে গিয়ে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করি। এই সময় জাকির রুমের ভেতর থেকে পালানোর জন্য রাস্তা খুঁজছিল। এ বিষয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হোটেলের ওই কক্ষ থেকে ছুরি ছাড়াও জোছনার গলকাটা লাশ ও ফ্যানের একটি রক্তমাখা পাখা উদ্ধার করা হয়। তারা দু’জন আল-আরাফাত হোটেলের ১০৪ নম্বর কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল।