প্রায় ১২’শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনছে চট্টগ্রাম বন্দর
জানা যায়, পরিবেশ রক্ষার নামে ২০১০ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে দুটি জাহাজ। কেনার পর থেকেই সেগুলো পড়ে রয়েছে অব্যবহৃত অবস্থায়। একইভাবে এখন আবার নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) জন্য কেনা হচ্ছে এক হাজার ১২০ কোটি টাকার ৬১টি সরঞ্জাম! অপারেটর চূড়ান্ত হওয়ার আগে ৩৬০ কোটি টাকায় ছয়টি কি গ্যানট্রিক্রেন কেনার দরপত্রও আহ্বান করে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরে গভীর সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চিঠি দিয়ে এনসিটির জন্য এ মুহূর্তে যন্ত্রপাতি না কিনতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ভুল বোঝাবুঝি নিরসন করতে তাদের সঙ্গে কথা বলব।
জানা গেছে, কেনাকাটাকে সামনে রেখে বিদেশ সফরের সুযোগ থাকায় গত ২০ মাসে বিদেশ সফরে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের ৩৪টি দল। এসব দলের বিদেশে কেটেছে ১৮৫ দিন। প্রতিটি দলে নূ্ন্যতম দু’জন থেকে সাত জন কর্মকর্তা ছিলেন। এক কর্মকর্তা সাতবারও বিদেশ সফর করেছেন। এভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের ৬৩ কর্মকর্তা বিদেশ সফর করেছেন একাধিকবার। যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ঠিকাদারের খরচেই বিদেশ গেছেন তারা সবাই। বন্দর অর্ডিন্যান্সে এমন সুযোগ থাকায় যন্ত্রপাতি কেনাকে ঘিরে বসেছে দুর্নীতির হাট। বিদেশ সফর খাতে বাড়ছে বন্দরের খরচের বহরও। ২০১১-১২ অর্থবছরে এই খাতে বন্দরের খরচ হয় এক কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে খরচ হয় এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এ বাজেট আরও বাড়িয়ে করা হয় দুই কোটি টাকা!
আরও জানা গেছে, বন্দর ব্যবহারকারীরা বেসরকারি উদ্যোক্তা দিয়েই সর্ববৃহৎ এ টার্মিনাল পরিচালনা করতে চান। মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছা এ টার্মিনাল অপারেট করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই বন্দর ফান্ড থেকে এক হাজার ১২০ কোটি টাকা নিয়ে ৬১টি সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আছে ৬০০ কোটি টাকার ১০টি রেল মাউন্টেড কি গ্যানট্রিক্রেন, ২৮০ কোটি টাকার ২০টি রাবার টায়ার্ড গ্যানট্রিক্রেন, ৮০ কোটি টাকার ১০টি স্ট্রাডল ক্যারিয়ার, ৩৬ কোটি টাকার ২০টি রিচ স্ট্রিকার, ২৪ কোটি টাকার ১০টি সাইড লোডার ও ২৫ কোটি টাকার একটি রেল মাউন্টেড গ্যানট্রিক্রেন।
প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরে সর্ববৃহৎ টার্মিনাল এনসিটি নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে। এরপর সাত বছর গত হলেও এ টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একবার বেসরকারি অপারেটর দিয়ে এ টার্মিনাল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এখন আবার বন্দরকে দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনা করতে চায়।
সূত্র: দৈনিক সমকাল