শেরপুরে নাকুগাও স্থলবন্দর দুই লেন সড়ক নির্মাণে চলছে ভূমি অধিগ্রহণ : রাতারাতি ফসলি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

Nakugaon-Pic-1-220x162নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি : বাংলা-ভুটান ভায়া ভারত ট্রানজিট রুট পরিকল্পনা মাথায় রেখে শেরপুরের নকলা উপজেলা সদর থেকে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাও স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৯ কিলোমিটার দুই লেন সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। ওই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২শ ৩৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে বাংলা-ভুটান ট্রানজিট স্থাপন খুবই সহজতর হয়ে উঠবে। ভুটানের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত সূচিত হবে। কারণ, রাজধানী ঢাকা থেকে ভারত সীমান্তবর্তী নাকুগাও স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২শ কিলোমিটার। আর নাকুগাও স্থলবন্দর থেকে ভুটানের দূরত্বও প্রায় একই।

এদিকে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সড়কের দু’পাশে প্রায় ১শ ১২ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট জমি অধিগ্রহণের পূর্বেই সম্ভাব্য জমিগুলোতে বেশি টাকা পেতে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা প্রশাসনের কোন নির্দেশনা মানছে না।

জানা যায়, কৃষিমন্ত্রী ও এলাকার সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় একনেকে গৃহীত নকলা-নাকুগাও স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৯ কিলোমিটার দুই লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সড়কের দু’পাশে ১শ ১২ একর ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রায় ৩/৪ একর জমির অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ না করতেই সড়কের দু’পাশের উঁচু-নিচু এমনকি ফসলি জমিতে কাঁচা-পাকা ঘর তৈরির হিড়িক পড়েছে৷ এরই মধ্যে সড়কের দু’পাশের জমির মালিকেরা নকলার ছত্রকোনা থেকে নালিতাবাড়ীর তালতলা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১শ ৫০টি কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন৷ জমি অধিগ্রহণের সময় বেশি ক্ষতিপূরণ পেতেই সড়কের পাশের ফসলি জমিতে স্থাপনা তৈরির হিড়িক পড়েছে৷ অধিগ্রহণের জন্য প্রতি শতাংশ নিচু ও ফসলি জমি ১২ হাজার টাকা, উঁচু জমি ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা, টিনের স্থাপনা/ঘর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, পাকা স্থাপনা/ঘর ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধরা হয়েছে৷ এরই মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া কয়েকজন জমির মালিক অভিযোগ করেন, দুই লেন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পেতে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় শতকরা ৫ টাকা অগ্রিম ঘুষ দিতে হয়েছে৷
Nakugaon Pic-2সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক ঘেঁষে ভবন তোলার জন্য পিলার নির্মাণ করা হয়েছে৷ পিলারগুলোতে রডের সংখ্যা খুবই কম৷ বাটকামারি সেতুসংলগ্ন সড়কঘেঁষে পশ্চিম ও পূর্ব পাশে ৫০-৬০ ফুট লম্বা ভবন তোলার কাজ চলছে৷ এতেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ধানক্ষেতের ওপর বেশ কয়েকটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছত্রকোনা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ‘বেশি টেহা পাওয়ার লাইগা অনেকেই সুধে টেহা আইন্না দিন-রাইত দেধারছে কোনরহম ঘর বানাইতাছে৷’ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য যাঁরা ঘুষ দেন, তাঁরা টাকা বেশি পান৷ ৯ শতাংশ জমি, একটা টিনের ঘর এবং গাছপালার জন্য তিনি এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পেয়েছেন৷ জমি খারিজ করার পর ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় তিনি অগ্রিম ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিয়েছেন৷ জুলফিকার আলী বলেন, ‘সরকার জমির যে দাম নির্ধারণ করছে, এর বাইরে যাওনের কোনো সুযোগ নেই৷ তাই ক্ষতিপূরণ বেশি পাওয়ার আশায় সবাই ঘর তোলতাছে- আমরাও তুলছি’।
এ ব্যাপারে শেরপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শোয়েব আহম্মেদ বলেন, দুই লেন প্রকল্পের জন্য জমি নির্ধারণের সময় একটি জরিপ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। যাঁরা বাড়তি টাকার আশায় দ্রুত ঘর নির্মাণ করে চলেছেন, তাঁদের বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা নয়৷
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. হানিফ উদ্দিন বলেন, নকলা-নাকুগাও স্থলবন্দর সড়কের অবশিষ্ট জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শীঘ্রই শেষ করা হবে৷ বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায় সড়কের দু’পাশে যারা রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ করছেন, এরই মধ্যে তাদের স্থাপনা নির্মাণে নিষেধও করা হয়েছে৷ এরপরও যারা নিষেধ উপেক্ষা করে সড়কঘেষে স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তিনি জানান, জায়গা নির্ধারণের সময় যেহেতু জমির ভিডিও করা হয়েছে, সেহেতু ফুটেজ দেখেই জমির মূল্য নির্ধারণ করা হবে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend