ফুটবল থেকে পর্বতে, প্রতারণা যুগে যুগে

sports-fake‘স্পোর্টসম্যানশীপ’ বলে ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে যার দ্বারা বিভিন্ন ক্রীড়ায় স্বচ্ছতা এবং ক্রীড়াবিদের সততার বিষয় বোঝানো হয়ে থাকে। অবশ্য শব্দটি খেলার বাইরে অন্যান্য ন্যায্যতার ক্ষেত্রেও ব্যবহ্নত হয়। বিভিন্ন নিয়মকানুন আর রেফারিদের চোখ ক্রীড়াবিদদের উপর সবসময় থাকে ‘স্পোর্টসম্যানশীপ’ নিশ্চিত করার জন্য। অনেকসময় নানা কারণ এবং প্রলোভনে ক্রীড়াবিদরা ‘স্পোর্টসম্যানশীপ’ ঠিক রাখতে পারেন না। দ্রুতগতিতে সাফল্যের আশায় ক্রীড়াবিদরা আশ্রয় নেন প্রতারণার এবং হারিয়ে ফেলেন তাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত।

ফুটবল, অ্যাথলেটিক থেকে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণ ক্রীড়া পর্বতারোহনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে নানা প্রতারণার ঘটনা। প্রিয়.কম পাঠকদের জন্য তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো।

ফুটবল

শুরুতের আসি ফুটবল জাদুকর দিয়াগো ম্যারাডোনা ঈশ্বরের হাত প্রসঙ্গে। ম্যারাডোনা ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়াটার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবার অলক্ষে হাত দিয়েই একটা গোল দিয়ে ফেলেন। ফলে সেমিফাইনালে পরাজিত হয়ে ইংল্যান্ড ছিটকে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে। সেই হাতকে ম্যারাডোনা ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটনের সঙ্গে লাফিয়ে ম্যারাডোনা গোল করেছিলেন। ম্যারাডোনা লাফানোর সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছিলেন যে শিলটনকে ডিঙ্গিয়ে মাথা দিয়ে বল স্পর্শ করা সম্ভব নয়, তাই তিনি হাত চালিয়ে দেন বলের ওপরে। ফলাফল সেই ‘বির্তকিত গোল’।

বেশকিছুদিন আগে ফুটবল সাময়িকী ‘ওয়ার্ল্ড সকার’ এ ওই ম্যাচটি সম্পর্কে কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে ম্যারাডোনার ভাষ্যমতে-

“ছিয়াশির বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনাল। তৎকালে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় বৈরি সম্পর্কের কারণে ম্যাচটি হয় তপ্ত ও শ্বাসরুদ্ধকর। আশির দশকের শুরুতে এই দুটি দেশের মধ্যে সংঘটিত ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে মাঠের উত্তেজনা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল।

ফকল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে সবাই কথা বলছিল। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা যেন ফকল্যান্ড উদ্ধারের লড়াইয়ে মাঠে নামছে। তবে ফকল্যান্ড নিয়ে ভেবে আমরা মনোযোগ নষ্ট করতে চাইনি। আমরা চাচ্ছিলাম যেকোনো মূল্যেই ম্যাচটা জিততে। জয় ছাড়া সেদিন আমাদের ভাবনায় আর অন্য কিছুই ছিল না।

বিধাতাকে ধন্যবাদ, খেলাটি ২-১ গোলে জিতে আমরা সেবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠি। দলের পক্ষে দুটো গোলই ছিল আমার। প্রথম গোলটি ছিল বিতর্কিত। আমি হাত দিয়েই করেছিলাম সেই গোলটি। আর দ্বিতীয় গোলটি অসাধারণ। ওই গোলটি আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতোই।

গোলটা আমি করেছিলাম ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটনের সঙ্গে লাফিয়ে। লাফানোর সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম শিলটনকে ডিঙ্গিয়ে মাথা দিয়ে বল স্পর্শ করা সম্ভব নয়। তাই হাত চালিয়ে দিলাম।

শিলটনের মতো অভিজ্ঞ গোলরক্ষক বুঝতে পারেনি যে আমি হাত দিয়ে গোল করেছি। ব্যাপারটা তার দৃষ্টিতে আনে ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় টেরি বুচার। টেরি চিৎকার করতে থাকে, হাত, সে হাত ব্যবহার করেছে। পুরো দল টেরির সঙ্গে শামিল হয় প্রতিবাদে। গোলটি বাতিল হয়।

গোল করেই আমি ছুটে গিয়েছিলাম কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে। দেখি, আমার সতীর্থরা কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপারটা যেন ওরাও ঠিক বুঝতে পারছে না।

আমি তাদের বললাম, এ কী করছ তোমরা, আমার দিকে ছুটে এসো। আমাকে জড়িয়ে ধরো। গোলটা উদ্যাপন করতে হবে। নয়তো রেফারি তা বাতিল করে দেবে। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা আমার দিকে ছুটে এল। আমরা স্বাভাবিকভাবেই গোল উদযাপন করলাম। ততক্ষণে রেফারি ও লাইন্সম্যানের চোখে ধুলো দেওয়া হয়ে গেছে। ইংলিশ ফুটবলারদের প্রতিবাদের মুখেও লাইন্সম্যান জোর গলায় বলছে, ‘ওটা গোল’।

আর দ্বিতীয় গোলটি? অমন গোল স্বপ্ন দেখে সব ফুটবলারই। আমার সৌভাগ্য যে আমি ওই ধরনের একটা গোল করেছিলাম।

প্রথম গোলটিকে আমি ‘ঈশ্বরের হাত’ হিসেবে অভিহিত করেছিলাম। কেন করেছিলাম তার ব্যাখ্যায় দিচ্ছি। ঈশ্বরই তো আমাদের হাত দিয়েছেন। আর আমি ঈশ্বর-প্রদত্ত ওই হাত ব্যবহার করেই গোলটা করেছিলাম।

তবে ওই গোল নিয়ে আমার মধ্যে একটা খচখচানি আছে। সবাই চাইলে, সেই গোলটির জন্য আমি প্রকাশ্যে ক্ষমাও চাইতে পারি। খুব সম্ভবত আমার তাই করা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমা চাইলেও ইতিহাস পরিবর্তন করে দেওয়ার কোনো সুযোগ কারও হাতে নেই। সেবার আমরা বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। আমি হয়েছিলাম বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।”

সেই বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা পার পেয়ে গেলেও বির্তক তার পিছু ছাড়েনি। ড্রাগ এবং নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা বিষয়ে ম্যারাডোনা সবসময় মিডিয়াতে যোগান দিয়েছেন মুখরোচক খবর। ম্যারাডোনার প্রতিপক্ষ বা শত্রুরা সুযোগ পেলেই ‘ঈশ্বরের হাত’ এর পাপের শাস্তি হিসেবে ম্যারাডোনার পরের জীবনে অশান্তিকে ঈশ্বরের শাস্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

অ্যাথলেটিক

অ্যাথলেটিক যেন প্রতারণার স্বর্গরাজ্য, নানা ঘটনা আর উদাহরণে ঠাসা। কখনো ড্রাগ নিয়ে জয়, কখনো ট্রেনে চড়ে ম্যারাথন দৌড়।

অ্যাথলেটিকস এ সর্চেয়ে বড় প্রতারণা বলে গণ্য করা হয় প্রমীলা দৌড়বিদ ‘রোজি রুজ’ এর পাতাল ট্রেনে চড়ে ম্যারাথন জয়ের ঘটনা। ১৯৮০ সালে নিউইয়র্কে প্রমীলা ম্যারাথনে রেকর্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন রোজি। দীর্ঘপথ দৌড়ের পরও তার শরীরের ঘাম নেই দেখে বিচারকদের মনে তাৎক্ষনিক সন্দেহ দেখা দেয়, যদিও রোজি বলেন যে তিনি অ্যান্টি-সোয়েটিং (ঘাম না হওয়ার) হরমোন নিয়েছেন। তবে তাতে কাজ হলো না, রোজির সহ-দৌড়বিদরা বললেন, রোজিকে তারা তাদের সাথে দৌড়াতে দেখেননি বা কাউকে রোজি অতিক্রম করেনি।

পুলিশ সাথে সাথে তদন্তে নেমে পড়ে, বের হতে থাকে একের পর এক প্রমাণ। পাতাল ট্রেনের কিছু যাত্রী বলে বসলেন, তারা রোজিকে ম্যারাথন দৌড়ের পোশাক পড়ে ট্রেনে ভ্রমণ করতে দেখেছেন।

সাথে সাথে প্রতারণার অভিযোগে বাতিল হয়ে গেলো রোজির রেকর্ড এবং ম্যারাথন জয়ের দাবি।

সিউল অলিম্পিক এ নিষিদ্ধ স্টেরোয়েড নিয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে বিশ্বরেকর্ড করেন ‘বেন জনসন’।

ড্রাগ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ার পরে তার পদক, রেকর্ড এবং ক্যারিয়ার সব চলে যায় অন্ধকারে।

আরেক প্রমীলা দৌড়বিদ ম্যারিয়ন জোনসের পরিণতি আরও মর্মান্তিক, ড্রাগ এবং প্রতারণার দায়ে তার পাঁচটি স্বর্নপদক বাতিলসহ আদালতে মিথ্যা বলার দায়ে জেল খাটতে হয়েছে।

ক্রিকেট

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া ক্রিকেটেও প্রতারণার ছড়াছড়ি, বেটিং-ফিক্সিং-সেটিং যেনো ছেলেখেলা হয়ে উঠেছে। ভারতের সাবেক অধিনায়ক আজহার উদ্দীন, অজয় জাদেজা, দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যান্সি ক্রোনিয়ে, পাকিস্তানের সেলিম মালিক, সালমান বাট, আতাউর রহমান, দানেশ কানেরিয়াসহ বর্তমানে বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুল এর নাম চলে এসেছে নানা প্রতারণার ঘটনায়।

কখনো সেইসব ঘটনা মিথ্যা আবার কখনো তা ষড়যন্ত্র বলে প্রচারিত হলেও সময়ের ব্যবধানে তা ‘প্রতারণা’ বলে প্রমানিত হয়েছে। ওইসব ক্রিকেটারের বর্ণিল অতীত তাদের বর্তমান পাপ-প্রতারণার অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।

পর্বত অভিযান

পর্বত অভিযান নি:সন্দেহে একটি গৌরবময় ঝুঁকিপূর্ণ ক্রীড়া। এক্ষেত্রেও অন্যান্য ক্রীড়ার মতো প্রতারণার সুযোগ রেয়েছে। কারণ অন্যন্য ক্রীড়ায় যেমন বিচারক, দর্শক এবং মিডিয়া ঘীরে থাকলেও এখানে সেই ব্যবস্থা নেই। পর্বতারোহীর অতীতের সততা-সাফল্য এবং সহযাত্রীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে যাচাই করা হয় পর্বত জয়ের বিষয়টি। তবে প্রমাণ হিসেবে পর্বতারোহীর ছবি, ভিডিও এবং যাত্রাপথের বর্ণনা শুনে দেওয়া হয় সার্টিফিকেট।

সম্প্রতি পর্বতারোহনের ব্যাপারে অসংখ্য ভূয়া দাবি এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহের ঘটনা ঘটছে। অর্থের বিনিময়ে এবং সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-গাইডদের যোগসাজসে ঘটছে এধরণের নানান ঘটনা। সেইসাথে অভিযোগ উঠলে ‘তদন্ত কমিটি/কমিশন’ ঘটনের মাধ্যমে নিস্পত্তি হচ্ছে অভিযোগ। কমিশন তদন্ত করে কখনও সঠিক বা কখনও ভূয়া বলে বাতিল করে দিচ্ছেন সার্টিফিকেট।

দ্রুত পর্বত আরোহণের বেশ কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন অষ্ট্রিয়ার পর্বতারোহী ‘ক্রিসশিয়ান স্ট্যাঙল’। তারপরেও তার সামনে বাঁধা হয়ে ধারায় পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত ‘কে-২’, ছয়বার চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন। জেদ চেপে বসে, ছলেবলে যেভাবেই হোক জয় করতেই হবে। অবশেষে ২০১০ সালে তিনি হঠাৎ দাবি করে বসেন তিনি ‘কে-২’ জয় করেছেন। পাকিস্তানে অপেক্ষাকৃত কম অভিযান হলেও ওইবছর বেশকিছু অভিযান হয়েছিল, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেবছর কেউ সফল হতে পারেনি। শুধু ক্রিসশিয়ান দাবি করলেন তিনি পেরেছেন। ওইসময়ে অন্যান্য ব্যর্থ অভিযাত্রীরা দাবি করলেন, আবহাওয়া এতই খারাপ ছিল যে কারো পক্ষে সেসময় অভিযান সফল করা সম্ভব ছিল না।

শুরু হলো সন্দেহ, আর পর্বতারোহনের বিষয়ে সন্দেহ অনেকটা ‘এটেম্পট টু মার্ডার’ এর মতো। নানা কথাবার্তা আর জেরার মুখে বের হয়ে ক্রিসশিয়ানের দাবি ভূয়া, তিনি স্বীকার করলেন, ১০০০ মিটার নীচে দাড়িয়ে তিনি ‘কে-২ পর্বত’ শৃঙ্গের মতো দেখতে একটি এলাকায় দাড়িয়ে তিনি ছবি তুলেছেন।

পর্বতারোহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে দক্ষিণ কোরিয়ান পর্বতারোহী ‘ও ইয়ান সান’ এর ঘটনাকে। হিমালয়ে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৪টি শিখরে ওঠা ‘প্রথম নারী’ হিসেবে দাবিদার ‘ও ইয়ান সান’ বির্তক বিশ্বের সকল পর্বতারোহীদের জন্য ওক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল ইয়ান সান দাবি করলেন তিনি ওই ১৪ পর্বত জয় করেছেন। এরপর শুরু হলো প্রশংসা আর সর্ম্বধনার বন্যা। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্পরেটদের কাছে ও ইয়ান সান একটি আলোচিত নাম হয়ে থাকলেন। পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ‘লৌহ মানবী’ এর খেতাব। বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপণ আর লোভনীয় অফার আসতে থাকলো তার কাছে। কিন্তু ওই সন্মান টিকলো মাত্র তিন সপ্তাহ, ১৭ মে তার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন স্পেনের এক নারী পর্বতারোহী ‘পাসাবান লিজারিবার’, তিনিও ও ইয়ান সানের ৪/৫ বছর আগে হতে ১৪ পর্বত জয়ে চেষ্টা করছেন এবং সফল হয়েছেন।

পাসাবানের দাবি অনুসারে ২০০৯ সালে ও ইয়ান সান নেপালের কাঞ্চনজঙ্গা জয় করতে পারেননি, তিনি পর্বত চূড়া না উঠেই সুবিধামতো স্থানে ছবি তুলে ভূয়া দাবি করেছেন। পাসাবান বলেন ওই একই সময় তিনিও কাঞ্চনজঙ্গা করেছিলেন কাজেই ওই সময়ের ঘটনা তিনি জানেন, কারণ একটি অভিযানে একইসময়ে যারা পর্বতে ওঠেন তারা এতোটাই ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন যে প্রতি মূহুর্তের হিসেব এবং ফলাফল তাদের জানা থাকে।

পাসাবানের দাবি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন ও ইয়ান সান। বিভিন্ন প্রমান হাজির করলেন জাতির সামনে, শেরপা লিডাররা বললেন ‘হ্যা’ তিনি উঠেছেন। এমনকি নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন ও ইয়ান সানের পক্ষ নিয়ে বললেন ‘হ্যা’ তিনি উঠেছেন। সম্মেলনে কেঁদেকেটে একশেষ ‘লৌহ মানবী’, কিন্তু তার চোখের পানি মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলো।

‘কোরিয়ান আলপালাইন ফেডারেশন’ বিষয়টি সমাধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলো। কমিটি ও ইয়ান সানের ছবি, বর্ণনা ইত্যাদি চুলচেড়া বিশ্লেষন এবং শেরপাদের জেরা করতে থাকলেন। ‘ক্রস চেক’ এর এক পর্যায়ে দুজন শেরপা তথ্য গরমিল করে ধরা পড়ে স্বীকার করলেন তাদের অভিযানে পর্বত জয় হয়নি। এইবার নরম হলেন কথিত ‘লৌহ মানবী’, তিনিও স্বীকার করলেন যে, তিনি উঠতে পারেননি, খারাপ আবহাওয়ার কারণে চূড়ার কিছুটা নীচ থেকেই তিনি ফেরত আসেন।

একটি ব্যর্থ অভিযানের ভূয়া দাবিতে অন্ধকারে হারিয়ে গেলো ও ইয়ান সানের বাকি ১৩টি কষ্টকর জয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ফিরিয়ে নেয় খেতাব, কর্পরেটদের লোভনীয় অফার চলে যায় এবং পর্বতারোহীদের মন থেকে হারিয়ে যায় ও ইয়ান সানের নাম।

একটি ঘটনা না উল্লেখ করলেই নয়, দাবিতে সন্দেহ হলেও অনেক সময় তা টিকে যা তদন্ত কমিটির কাছে গ্রহণযোগ্য হলে। সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্ট বিজয়ী নেপালের ‘প্রেমবা দর্জি শেরপা’ এর ক্ষেত্রে, ২০০৪ সালে মাত্র ৮ ঘন্টা ১০ মিনিটে তিনি জয় করেন এভারেস্ট। তার আরেকটি মজার রেকর্ড তিনি ২০০৫ সালে মনি মুলেপাটিকে এভারেস্টের চূড়ায় বিয়ে করেন। তিনি মোট ৬বার উঠেছেন এভারেস্টে। তার আরেকটি কীর্তি তিনি এভারেস্টের চূড়ায় ‘গৌতম বুদ্ধ’ মূর্তি স্থাপন করেছেন। (সূত্র- ইউকিপিডিয়া)।

তার দ্রুত অভিযানটি ওইরকম সন্দেহের মুখে পড়লে তদন্ত কমিটির কাছে তিনি সাক্ষী, প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়ে প্রমাণ করেন তিনি সফল হয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ীর দাবিদার মুসা ইব্রাহীমের বিষয়েও নানা সন্দেহ এবং তার অতীতের বিভিন্ন অভিযানের ব্যর্থ প্রমাণ থাকায় বির্তক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ‘নেপাল পর্বত’ পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী হিসেবে নাম না থাকা নিয়ে মিডিয়াতে সংবাদ প্রচার এবং এখন পর্যন্ত মুসা ইব্রাহীম বিষয়টি নিয়ে কোনো সংবাদ সম্মেলন, বির্তকের পর আবারও সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে না পারায় সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend