দেশ ছাড়লেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম খলিল
জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে গেলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম খলিল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই পালিয়ে গেলেন কাফরুল এলাকার ত্রাস, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম।
আইন প্রয়োগকারী সবকটি সংস্থাকে অন্ধকারে রেখে ১৬ মে ভোরে কঠোর গোপনীয়তায় তাকে কারাগার থেকে বের করে দেয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে নির্বিঘ্নে ভারতে পাড়ি দেন তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই বিদেশ পাড়ি দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিল তার ক্যাডাররা। দেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিমের জামিনে বের হওয়া নিয়ে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে আটক কোনো ব্যক্তি এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ জামিনে বের হলে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের অবহিত করে। তবে ইব্রাহিমের ব্যাপারে আমরা রীতিমতো অন্ধকারে ছিলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ইব্রাহিমের নির্বিঘ্ন জামিন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখেন। সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ ট্র্যাজেডির দিকে গণমাধ্যমসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে ১৬ মে সকালে কঠোর গোপনীয়তায় কারাগার থেকে বের করে দেওয়া হয় ইব্রাহিমকে। ইব্রাহিমকে মুক্ত করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা। এজন্য ইব্রাহিম তাকে নগদ ছয় কোটি টাকা দেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে ইব্রাহিম ভাষানটেক এলাকায় তার দখলে থাকা একটি অমীমাংসিত জমির সিংহভাগই ওই নেতাকে দিয়ে দেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ফরমান আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার (জামিন শাখা) তরিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ইব্রাহিমের বের হওয়ার তথ্যটি গোপন রাখার চেষ্টা করেন। তিনি বারবার দাবি করে আসছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম নামে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কোনো বন্দী নেই।
কারা সূত্র জানায়, ইব্রাহিমের হাজতি নং- ছিল ১৩২১১/১৪ ইং। ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মোট ১০টি মামলা এবং একটি জিডি রয়েছে।
২০০৭ সালের ১৩ অক্টোবর ইব্রাহিমকে ভারত থেকে নিয়ে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইব্রাহিমের বাবার নাম আবু তাহের। গ্রেপ্তারের সময় ভাষানটেক ২নং বস্তি এলাকায় তার পরিবার বসবাস করত।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তি পেলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। তাদের মুক্তির আগেই তাই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। আর শীর্ষ সন্ত্রাসী হলে তো কথাই নেই। এভাবে চলতে থাকলে কারাগারে থাকা অপর শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও জামিনে মুক্তি পেয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাফরুল এলাকার মানুষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিমের নাম শুনলেই আতঙ্কিত হন। জীবনে কখনো ছাত্রদল কিংবা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থেকেও বিএনপি ও যুবদলের শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে বাগিয়ে নিয়েছিলেন কাফরুল থানার যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ। চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পাওয়ার পর কয়েকজন ব্যবসায়ীর বাসায় ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ইব্রাহিমের ক্যাডাররা। নিরাপত্তার ভয়ে তারা থানাকেও অবহিত করার সাহস পান না। নীরবে চাঁদা দিয়েই নিজেদের জীবন রক্ষা করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, ইব্রাহিম জেলে থাকলেও বাইরে থেকে তার গ্রুপকে এখন সমন্বয় করছেন ইব্রাহিমের স্ত্রী জ্যোৎস্না। বর্তমানে চারটি স্তরে বিভক্ত ইব্রাহিমের প্রায় ৩শ’ ক্যাডার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সাত-আটটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা কাজ করছে। ইব্রাহিম গ্রুপের ক্যাডাররা বেশির ভাগই বয়সে কিশোর। ভ্যানচালক, গ্যারেজ মিস্ত্রি, গার্মেন্ট শ্রমিকের আড়ালে তারা এসব কাজ করছে।