একরামুল হত্যাকাণ্ড: আওয়ামী লীগ-বিএনপি ক্যাডারদের যৌথমিশন!
ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামের কিলিং মিশনে ফিল্মি কায়দায় ৩০ জন ঘাতক অংশ নেওয়ার কথা এর আগেই জানা গেছে। কিন্তু এই মিশনে কারা অংশ নিয়েছে, কী তাদের পরিচয়- সবই ছিল অন্ধকারে। কিন্তু এবার সেই আঁধারে আলো পড়তে শুরু করেছে। এরই মাঝে সরাসরি অংশ নেওয়া চারজনের পরিচয় জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরা হলেন- রুটি সোহেল, আবিদ, পারভেজ ও হুমায়ুন। এই চারজনই স্থানীয় অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তবে এবার জানা গেল- কিলিং মিশনে শুধু আওয়ামী লীগ ক্যাডারই নয়, বিএনপি ক্যাডাররাও জড়িত ছিলেন। বলা চলে- এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল উভয়দলীয় ক্যাডারদের এক যৌথ প্রয়াস।
তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম রেঞ্জে পুলিশ সুপারদের বিশেষ বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এ ঘটনায় নেপথ্য অর্থ জোগানদাতা ও সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে জন্য দেশের সবকটি বিমান, নৌ এবং স্থলবন্দরে ছবিসহ সব ধরনের তথ্য পাঠিয়েছে পুলিশ।
ফেনীর পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ পত্রিকাটিকে জানান, তদন্তের স্বার্থে কোনো কিছুই বলা যাবে না। তবে ওই ঘটনা কারা-কেন ঘটিয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। এগুলো এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে জন্য বিভিন্ন ইমিগ্রেশনে তথ্য পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিশ্বাসযোগ্য এক সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গ্রুপ এরই মধ্যে ফেনী সীমান্ত দিয়েই পার্শ্ববর্তী ভারতে চলে গেছে। তবে অন্য আরেকটি গ্রুপ দেশেই অবস্থান করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেতা মাহতাব মিনারের কললিস্ট বের করে এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। একরামবিরোধী কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করতেন মাহতাব মিনার। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে মিনারের সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে জাহিদ হোসেন চৌধুরী নামের আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এক নেতার সঙ্গে। যদিও তাদের সঙ্গে মাহতাব মিনারের যোগাযোগ থাকার কথা ছিল না। পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানায়, মিনার ১৯৯৯ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার চাঞ্চল্যকর সাবি্বর হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল, মামুন ও মাহমুদ মিনারকে আসামি করে ২০০২ সালের ১১ অক্টোবর আদালতে ওই মামলার চার্জশিট জমা দেন। ২০০৪ সাল থেকে চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল মাহমুদ মিনার। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দুর্বৃত্তরা একরামকে তিন দফায় হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। কিলিং মিশনগুলোতে জাহিদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপেরও একই ভূমিকা ছিল বলে জানতে পেয়েছে পুলিশ। তবে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ডাকে ফুলগাজীতে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে ফেনীর সঙ্গে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। ভোর ৬টার আগেই হরতাল সমর্থকরা ফেনী থেকে ফুলগাজী ও পরশুরামের প্রবেশপথ বন্ধুয়া বেইলি ব্রিজ থেকে ফুলগাজী বাজার পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক খাম্বা (পিলার) ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এই সড়কের বন্ধুয়া, আনন্দপুর মুন্সিরহাট ও ফুলগাজীতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষুব্ধরা একরামের প্রকৃত খুনি ও নেপথ্য নায়কদের গ্রেফতারের জোরালো দাবি জানিয়ে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন। হরতালে উপজেলার কোথাও একটি দোকানপাটও খোলা হয়নি। স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। বুধবার চেয়ারম্যান একরামের দাফন শেষে তার সমর্থকরা বন্ধুয়া বেইলি ব্রিজের যে পাটাতন খুলে ফেলেছিল রাতে কর্তৃপক্ষ তা মেরামত করেছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে যে ২৩ জনকে আটক করেছিল তাদের মধ্যে সাখাওয়াত ও ইকবাল নামে দুজনকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে অন্য মামলায় আটক দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় ফুলগাজী আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে একরামের আত্দার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল ও বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও হরতালের কারণে এসব কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি।