দাঁত তুলতে প্রাণ উৎপাটন
একটি-দুটি নয়, একসঙ্গে ২০টি দাঁত তুলতে গেলেন ভারতীয় ওই দন্তচিকিৎসক। তা আবার মার্কিন মুলুকের এক ষাটোর্ধ্ব নারীর। দাঁত তিনি তুললেন বটে, একই সঙ্গে ওই বৃদ্ধার প্রাণও উৎপাটিত হলো।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের এনফিল্ড ডেন্টাল সার্জারি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে বলে আজ শনিবার পিটিআইয়ের খবরে জানানো হয়।
নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওই খবরে জানানো হয়, জুডিথ গান (৬৪) নামের ওই বৃদ্ধা দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসার জন্য তিনি যান ভারতীয় দন্তচিকিৎসক রশ্মি প্যাটেলের কাছে। চিকিৎসক সব দেখে-শুনে পরামর্শ দিলেন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর দাঁত তুলে ফেলতে হবে। আর কদিন পর তো এমনিতেই দাঁত পড়ে যাবে, তাই ব্যথা তাড়াতে আগেভাগে দাঁত তুলতে এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন জুডিথ। কিন্তু তখনো তিনি জানতেন না, তাঁর মুখ থেকে একটি নয়, একেবারে ২০টি দাঁত তুলে ফেলবেন এই চিকিৎসক। অস্ত্রোপচারের জন্য অজ্ঞান করতে হয়েছিল জুডিথকে। তারপর একে একে ২০টি দাঁত তুলে ফেলা হলো। সফল হলো অস্ত্রোপচার, কিন্তু জুডিথের জ্ঞান আর ফিরল না।
খবরে বলা হয়, এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের এনফিল্ড ডেন্টাল সার্জারি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ কারণে প্যাটেলের দন্তচিকিৎসকের নিবন্ধন সাময়িকভাবে প্রত্যাহার এবং তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
একসঙ্গে এত দাঁত তোলার পরিণতির কথা ভেবে চিকিৎসক প্যাটেলের সহকারী তাঁকে অস্ত্রোপচারের কাজ বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলেন। অস্ত্রোপচারের আগে তিনি জরুরি পরিষেবায় ফোন করার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু প্যাটেল সহকারীর ওই কথায় কোনো তোয়াক্কাই করেননি।
কানেটিকাটের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, সহকারীর অনুরোধ সত্ত্বেও প্যাটেল ২০টি দাঁত তোলার জন্য জুডিথের অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়াটি শেষ করতে চেয়েছিলেন। শেষমেশ জুডিথের অবস্থা বেগতিক দেখে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে ছুটে এসে জরুরি পরিষেবার ৯৯১ নম্বরে ফোনও করেছিলেন প্যাটেল। কিন্তু ততক্ষণে প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেছে জুডিথের।
প্যাটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অজ্ঞান করার পর জুডিথের অক্সিজেন চলাচল, শ্বাস-প্রশ্বাসে যন্ত্রণা হচ্ছে কি না, এ ব্যাপারে মোটেও নজর রাখেননি। তাঁর অমনোযোগী ও অবহেলার কারণেই মৃত্যু হয়েছে জুডিথের।
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক দপ্তরের তদন্তকারী একজন দন্তচিকিৎসক বলেন, ‘এই দাঁতের চিকিৎসার জন্য জুডিথের মৃত্যু হতো না। তাঁর মৃত্যু হয়েছে প্যাটেলের অমনোযোগ ও অবহেলার কারণে।’
আগামী ১৮ জুন স্টেট ডেন্টাল কমিশনের সামনে প্যাটেলের বিরুদ্ধে এই মামলার শুনানি হবে। কর্তব্যকাজে অবহেলার অভিযোগে ২০০৯ সালে প্যাটেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের সময় নোংরা সুতা ও কাপড় ব্যবহার করায় ওই মামলাটি করেছিলেন দোরিন জাসোনিস নামের এক ব্যক্তি। আদালতের রায়ে জরিমানা বাবদ দোরিনকে তিন কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা (পাঁচ লাখ ডলার) দেওয়ারও নির্দেশ ছিল।