সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাপানের কাছে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার জাপানে বাংলাদেশের বন্ধু এবং ঢাকায় নিযুক্ত টোকিওর সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যদিয়ে তার চারদিনের সফরসূচি শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক সুসংহত করতে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। বৈঠক শেষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপান এবং দুদেশের জনগণের মধ্যকার চমৎকার সম্পর্ক লালনের জন্য বন্ধু ও রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনাদের অবদান কখনো শোধ হবে না। আপনারা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু এবং আমাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে ঢাকা ও টোকিওর মধ্যেকার সম্পর্ক সুসংহত করতে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী জাপানের শ্রদ্ধাভাজন বন্ধুদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
আকাসাকা প্যালেসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের মহান বন্ধু এবং জাপানে বাংলা ভাষা, দর্শন ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রচারক প্রফেসর তুশোয়োশি নারার বিধবা স্ত্রী মিসেস নারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো এ্যাবের আমন্ত্রণে আজ রবিবার সকালে টোকিও পৌঁছান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা ও সদিচ্ছায় জাপানের অনেক রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরে দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতি জোরদার করতে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে গেছেন।
তিনি নতুন চিন্তা-ভাবনা ও কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রশংসনীয় এই প্রয়াস অব্যাহত রাখতে তাদের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর তাকাশি তুশোয়োশি নারা, তাকাশি হায়াকাওয়া ও জেনারেল ফুজিওয়ারার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, তারা চলে গেছেন, কিন্তু তারা চিরকাল আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত থাকবেন এবং তাদের অবদান সব সময় বাংলাদেশের মানুষকে প্রেরণা জোগাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্ব ও সম্মানের যে, আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরেছি। এই সম্মিলন আমাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য আমাদের বীরোচিত সংগ্রামে শক্তি ও প্রেরণা জোগাতে আপনাদের ও আপনাদের পরিবারের অনন্য অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের নিদারুণ প্রয়োজনের সময় আপনাদের নিঃস্বার্থ ও আন্তরিক সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম যে ক’টি দেশ সফর করেন জাপান ছিল তার অন্যতম।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী জাপানের অনেক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তার আলাপ-আলোচনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন।
তিনি আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ লক্ষে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের নীতি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে বরদাশত না করা। এরই অংশ হিসেবে আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার স্বাধীনতার চেতনা এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা ও বহুমত সহিষ্ণু সমাজ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ করে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে জাপানকে আমাদের পাশে চাই- আমরা জাপানের সমর্থন চাই।’
বাংলাদেশকে জাপানের সার্বিক সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যা ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত অধ্যাপক নারা এবং অন্যান্য জাপানী প্রয়াত বন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।