বকশীগঞ্জে অনুমোদনহীন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সেবার নামে প্রতারনা চলছে …….
উমর ফারুক বকশীগঞ্জ ॥ জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা পৌর শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার,প্যাথলজি ও কিনিক । সরকারের নীতিমালা উপো করে চলছে এসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কার্যক্রম।রোগীরা সেবার চেয়ে ভোগান্তির শিকারই হচ্ছেন বেশী। এ নিয়ে এলাকার সচেতন মহলের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নামে আসলে এসব কি হচ্ছে? সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পৌর শহরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর মধ্যে আব্দুল হাই স্মৃতি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, নুর ডায়াগনষ্টিক এন্ড কিনিক, আবির প্যাথলজি, বকশীগঞ্জ প্যাথলজি, সরকার প্যাথলজি, মর্ডাণ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, স্বনির্ভর বাংলাদেশ উল্ল্যেখ যোগ্য। এরমধ্যে শুধুমাত্র দুটি সেন্টারের রক্তের বিভিন্ন নমুনা পরীা করার অনুমোদন থাকলেও সেখানে, রক্ত পরীক্ষা ছাড়াও হড়হামেশা চলছে আল্ট্রাসনোগ্রাফী, ইসিজি সহ স্পর্শকাতর এক্সরে এর কাজ। অন্যান্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর বৈধ অনুমোদন না থাকলেও তারাও একই পন্থায় স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজ করে চলেছে । অধিকাংশ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গুলোতে নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের সনদ প্রাপ্ত কোন ট্যাকনোলজিষ্ট। সাধারন মানের কর্মী দিয়েই ফাঁকি ঝুকি দিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজ। এক্সরে করতে পরিবেশ স্বাস্থ্য ও পরমানু বিষয়ক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আবশ্যিক হলেও এখানে এ নিয়মের কোন বালাই নেই। পরিত্যাক্ত ও পুরাতন মডেলের আল্ট্রাসনোগ্রাফী ও এক্সরে মেশীনে চলে পরীক্ষা।সঠিক রোগ নির্ণয় না করতে পেরেও মনগড়া রিপোর্ট রোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সহজ সরল রোগী সাধারন ভুল রিপোর্ট ও চিকিৎসার ফলে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে বলে জানাগেছে।এছাড়াও প্রতিটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারেই সপ্তাহের বিশেষ বিশেষ দিনে আনা হয় ধার করা ডাক্তার। এ নিয়ে আগের সপ্তাহ হতেই পুরো পৌর শহর সহ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আনাচে কানাচে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম করে চলে মাইকিং। গ্রামের সহজ সরল মানুষরা এ প্রচারণায় মুগ্ধ হয়ে রোগী নিয়ে এসকল সেন্টারে আসলেই বিভিন্ন পরীক্ষা নাম করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ। অনেক ক্ষেত্রে অসুখের সাথে সম্পৃক্ততা নেই এরকম পরীক্ষাও এই সেন্টারে আগন্তুক ডাক্তাররা করিয়ে থাকে বলে ভোগান্তির শিকার রোগীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে। রোগী এনে ভোগান্তীর শিকার হয়েছেন এমন এক জৈনক ভোক্তভোগী ব্যাক্তি জানান, ভাই এখানে রোগী না এনে বাড়িতে ফেলে রাখাই অনেক ভাল! তিনি খোভের সাথে বললেন এক সপ্তাহ ধরে রোগী নিয়ে যাতায়াত করছি। প্রথম দিন ডাক্তারের ফিস দিয়েছি ৪০০ টাকা। ডাক্তার দেখেই কাগজে লিখে দিল এগুলো টেষ্ট করে নিয়ে আসেন। কাগজ নিয়ে বেরুতেই ওরা হাত থেকে নিয়ে নিল, বললো দেখি দেখি কি কি টেষ্ট দিয়েছে বলেই ক্যালকুলেটরে হিসাব করতে লাগলো। হিসাব শেষে বললো ১৪৮০ টাকা লাগবে। এরপর অনেক বলে কয়ে ১২০০ টাকা দিয়ে সব পরীক্ষা করেছি। রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে ফের ডাক্তারকে দেখাতে গেছি ডাক্তার রিপোর্ট না দেখেই ঔষধ লিখে দিলো!।
এক সপ্তাহ রোগীকে ঔষধ খাওয়ানোর পরও অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় আজ আবারও নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন পুরাতন রোগী বলে ডাক্তারের সিরিয়ালই পাচ্ছি না। তাদের কাছে নতুন রোগীদের প্রাধান্যই সবচেয়ে বেশী। নতুন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজ শেষ হয়ে গেলেই সে অবহেলার পাত্র। তখন আর সেই রোগীর প্রতি তাদের কোন দরদ-ই থাকে না। একবারের বেশী দু বার কথা বলতে গেলেই দুর্বব্যবহার করা হয়। এরকম অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন যারা এভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে অর্থের অপচয় ঘটিয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে শেষে বাধ্য হয়ে জমি-জমা বন্ধক বা বিক্রি করে শহরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ্যতায় ফিরে এসেছেন। এসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রোগীরা যেন এখন আর তাদের কাছে রোগী নয় নিত্যান্তই খদ্দের। আর এ খদ্দের নিজস্ব ডায়গনষ্টিক সেন্টারে ভেড়াতে প্রতিটি সেন্টারেরই আছে নানান কৌশল। রয়েছে বিশাল দালাল চক্র। এ চক্রের প্রধান কাজই হচ্ছে রোগী সংগ্রহ করা। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দালালরা সরকারি হাসপাতালের আসে পাশে আনাগোনা করে। কিছু কিছু ডায়াগণষ্টিক সেন্টারে আবার নিয়োগ দেয়া হয়েছে রূপসী ও সুন্দরী মেয়েদের। তাদের কাজ মিষ্টভাষী কথা বলে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের মনগলিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রোগী সংগ্রহ করা। দালাল চক্রের রোগী নিয়ে টানা হেচ্ড়া হাসপাতাল এলাকায় এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এসকল দালালদের বিভিন্ন ছলাকলার কবলে পড়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষরা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রোগীর সু- চিকিৎসা করাতে এসে প্রতিনিয়তই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।