ইসলামপুরে একই নামে দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়

Untitled-15-220x80ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি :ইসলামপুর এক নামে দুই প্রতিষ্ঠান উপজেলা জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় গোয়ালেরচর ইউনিয়নের আকন্দপুর ও মোহাম্মদপুর নামের পাশাপাশি দুই গ্রামে একই নামে গড়ে উঠেছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই দুই গ্রামের ৮শিক্ষক ও দুই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির রশি টানাটানিতে আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি হারিয়ে ফেলছে তার জন্ম ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠাকালীন অস্তিত্ব। আর ভুঁয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির জাল কাগজের দাপটে চাকুরী হারাতে বসেছে এ বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন ৪ শিক্ষক।

সরেজমিন ঘুরে জানাগেছে, ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের আকন্দপুর এলাকার আমেজ উদ্দিন দেওয়ান নামের এক শিক্ষানুরাগী তার স্বত্ব ভোগদখলীয় ৫২ শতাংশ জমি দান করে সেখানে ১৯৯১ সনে গড়ে তোলেন আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষই ছিল আমেজ উদ্দিনের বাড়ীর আশপাশের আকন্দপুর এলাকার কোমলমতি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়া। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আমেজ উদ্দিন নিজেই। একপর্যায়ে আমেজ উদ্দিন দেওয়ানের মৃত্যুর পর এলকাবাসী বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচন করেন প্রয়াত সভাপতি আমেজ উদ্দিন দেওয়ান’র পুত্র মনির উদ্দিন দেওয়ানকে। তখন থেকেই মনির উদ্দিন দেওয়ান এর দক্ষ পরিচালনায় স্থানীয় অর্থায়নে ৪জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টিতে ১ম শ্রেনী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি দেশের ২৬ হাজার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয় করণ ঘোষনার পর থেকে স্থানীয় একটি স্বার্থন্বেষী চক্র ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্ব কলহে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ইসলামপুরের পলবান্ধা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তার বাড়ীর পার্শ্বে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে নতুন একটি গৃহ নির্মাণ করে গৃহটিতে আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইন বোর্ড লাগায়। পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানকে মোটা অঙ্কের বিশেষ সমঝোতায় ম্যানেজ করে এক ভুয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির রেজুলেশন অনুযায়ী নজরুল ইসলামকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বানায় এবং ভুঁয়া রেজুলেশনে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের ভুঁয়া অজুহাতে বাহাদুরপুর গ্রামের নতুন গৃহটি প্রতিষ্ঠাকালীন বিদ্যালয় গৃহের দুই কিলোমিটার দুরে মোহাম্মদপুর গ্রামে স্থানান্তর করে। আর সেই সময় থেকেই মোহাম্মপুর গ্রামে এক নামে দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের দুটি বিদ্যালয়ে পাঠদান চললেও কোনটি আসল বিদ্যালয় আর কোনটি নকল বিদ্যালয় এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।
এব্যপারে প্রতিষ্ঠাকালীন বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনির উদ্দিন জানান, মোহাম্মদপুর গ্রামের আকন্দপুর এলাকায় তার পিতা আমেজ উদ্দিন দেওয়ান ৫২শতাংশ জমি দান করে সেখানে ১৯৯১ সনে গড়ে তোলেন আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। পরে ১৯৯৮ সনে বিদ্যালয়টি অনুমোদনের জন্য উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ একটি ফাইল দাখিল করেন। কিন্তু ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোটা অঙ্কের বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিয়ে ভুঁয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির জাল কাগজের দাপটে প্রতিষ্ঠাকালীন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন করে ৪জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার নিল নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠাকালীন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনিরুদ্দিন দেওয়ান ইসলামপুরের তৎকালীন ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন জামালপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট। পরবর্তীতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি ইসলামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে সঠিক তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে জানাগেছে। এতে গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে এক নামে দুই বিদ্যালয়ের ৮শিক্ষক ও দুই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির রশি টানাটানিতে আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি হারিয়ে ফেলতে বসেছে তার জন্ম ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠাকালীন অস্তিত্ব এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আকন্দপুর এলাকাবাসী।
এব্যপারে ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান’র সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আকন্দপুর বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নিয়ে দু’গ্র“পের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলছে। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনির উদ্দিন দেওয়ান সঠিক সময়ে বিদ্যালয়টি অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি যে কমিটির কাগজপত্র আগে পেয়েছেন সেই কাগজপত্রটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছেন।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend