রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরে ১৫ জনের রগ কর্তন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুতেই যেন কমছে না রগ কাটার রাজনীতি। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকার অন্তত ১৫ নেতাকর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটেছে ছাত্রশিবির। সর্বশেষ মঙ্গলবার দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীর রগ কেটে দেয়া হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদের দুই পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালে ৩১ মে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জামিল আকতার রতনকে চার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করার মধ্য দিয়ে এ রগ কাটার রাজনীতির সূচনা করে শিবির। একই বছর ১৯ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা হলের সামনে ছাত্রমৈত্রীর নেতা জুবায়ের চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ১৯৯৪ সালে ছাত্রমৈত্রীর নেতা প্রদ্যুত রুদ্র চৈতী পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় শিবিরকর্মীরা তার হাতের কব্জি কেটে নিয়ে যায়। ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরহাদের হাতের কব্জি কেটে নিয়ে যায় শিবিরকর্মীরা। ওইদিন ছাত্রদলের আরও ২৫ নেতাকর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির। এর পর ১৯৯৯ সালের ১৬ নবেম্বর রাতে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করার পরবর্তী এক দশক শিবিরের রগ কাটার রাজনীতি প্রায় বন্ধ ছিল।
তবে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিবির আবারও রগ কাটার রাজনীতিতে ফিরে আসে রাবিতে। ওইদিন শিবির ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ হোসেন, আরিফুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম এবং সাইফুর রহমান বাদশাসহ ৬ জনের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এর পর প্রায় আড়াই বছরের অধিক সময় শিবিরের রগ কাটার রাজনীতি বন্ধ ছিল।
এর পর আবার ২০১২ সালের ২০ নবেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের সামনে ছাত্রলীগের রাবি শাখার তৎকালীন সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিমকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাথা থেঁতলে দেয় ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়ার পরও স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না আখেরুজ্জামান তাকিম ।
গত বছরে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিনোদপুর এলাকায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার দুই পায়ের রগ কেটে পালিয়ে যায় শিবিরকর্মীরা। সেসময় শহিদুল ইসলামের বাড়িতে থাকা স্কুল শিক্ষক মাইনুল ইসলামের বাঁ হাতের রগ কেটে দেয়া হয়। একই বছরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। পরে তার জীবন বাঁচাতে তার ওই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। একই বছর ১৩ জুন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাসমারী এলাকার বাসিন্দা ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম আনার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত ইসলামীর সহযোগী ছাত্রসংগঠন শিবির।একই বছরের ২২ আগস্ট রাতে রাবির সোহ্রাওয়ার্দী হলের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় শিবিরকর্মীরা। এর পর থেকে তিনি পঙ্গু হিসেবে জীবন-যাপন করছেন। ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর এলাকার মিজানের মোড়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দামের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া সহ শরীরের বিভিন্ন যায়গায় ধারালো রামদা দিয়ে কোপালে তার ফুসফুসও কেটে যায়।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া ও হবিবুর রহমান হলের মধ্যবর্তী স্থানে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক সালেহ মোঃ টগর ও কর্মী আব্দুল্লাহেল মাসুদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয় শিবিরের ক্যাডাররা। এ সময় তারা মাসুদের দুই পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।