আড়াই লাখ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত
আগামী (২০১৪-১৫) অর্থবছরের জন্য আড়াই লাখ কোটি টাকার বড় বাজেট চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার সংসদে তা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে বড় বাজেটে অর্থসংস্থানের বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃদি দিয়ে দৈনিক বণিক বার্তা তাদের একটি প্রতিবেদনে জানায়, আগামী বাজেটে সব মিলে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ঘাটতি রাখা হয়েছে ৬৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে আসবে ৫ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এছাড়া করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। আর বিদেশী ঋণ ও অনুদান নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেটের আকার বড় হওয়ায় তা বাস্তবায়ন সরকারের জন্য কঠিন হবে। সরকার রাজস্ব প্রাপ্তির যেসব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা অবাস্তব। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর, এনবিআর-বহির্ভূত কর, বিদেশী ঋণ ও অনুদানের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা পূরণ করা কঠিন হবে। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আহরণ হবে না। অন্যান্য খাত থেকে প্রাপ্তিও গত বছরের চেয়ে খুব একটা বেশি হবে না।
এ পরিস্থিতিতে সরকারকে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হবে। এর চাপ পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগেও এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার এ ঝুঁকি না নিলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপির) আকার কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধনের প্রয়োজন হবে।
পত্রিকাটি আরো জানায়, এদিকে কয়েক মাস ধরেই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে বাজেটসহায়তা পেতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১১-১৩ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত স্প্রিং মিটিংয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৪ হাজার কোটি টাকা বাজেটসহায়তা চায় সরকার। সংস্থাটিও এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। তবে বাজেটসহায়তার খাত নিয়ে জটিলতার কারণে সে অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক চায় বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার ও স্বচ্ছতার শর্তে বাজেটসহায়তা। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি বা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ লি হায়েরোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) একাধিক বৈঠক করে।
সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের শর্তে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেটসহায়তা নেয়া হলে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে সরকারকে। কারণ শর্ত মানতে গেলে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। সংস্থাটির সর্বশেষ ডেভেলপমেন্ট আপডেটেও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের দাবি তোলা হয়। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বা অন্য খাতের আওতায় বাজেটসহায়তা চায়। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে বাজেটসহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছর ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। জিডিপির হিসাবে এ ঘাটতি দাঁড়াবে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
যদিও চলতি অর্থবছর লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় ১১ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে তা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এটার অর্জন নিয়েও সংশয়ে রয়েছে এনবিআর।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাস (জুলাই-মার্চ) পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ছিল ৮৬ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রাথমিক হিসাবে আহরণ হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। আয়করে ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে ২ হাজার ১৫১ কোটি ও শুল্কে ২৩৮ কোটি টাকা।
৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন বাজেট ঘোষণা করা হয় ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার উন্নয়ন বাজেটে বড় ধরনের সংশোধন আনে। সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের আকার ধরা হয় ৬০ হাজার কোটি টাকা।