আখেরাতে অসদাচরণের পরিণাম হবে ভয়াবহ- মাওলানা মুহম্মাদ শাহাবুদ্দিন
অসদাচরণ ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ। যারা এ নিন্দনীয় অভ্যাসের দাস হয়ে পড়েছেন আখেরাতে তাদের কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। এক মুসলমান অন্য মুসলমানের প্রতি সদাচরণের দৃষ্টান্ত রাখবে এমনটিই মহান আল্লাহর ইচ্ছা। এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা যথাযথভাবে পালিত হলে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ যেমন সাধিত হবে, তেমনি মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন জোরদার হবে। বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে বলা হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুসলমানের জন্য আরেক মুসলমানের সামান্য মুচকি হাসি আল্লাহর কাছে সদকা হিসেবে গণ্য। অন্য কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা কিংবা তার বোঝা বহন করে একটু এগিয়ে দিলেও সেটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ ঠিক একইভাবে কোনো মুসলমান নারী-পুরুষ যদি সালাত ও সিয়াম সাধনায় নিষ্ঠাবান হয়, যদি দান খয়রাতের ব্যাপারে অকৃপণ হয়, কিন্তু তিনি যদি অপর মুসলমানের সঙ্গে অসদাচরণে অভ্যস্ত হয় তবে আখেরাতে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নামাজ রোজা ফরজ ইবাদত এবং দান খয়রাতের মতো সওয়াবের কাজে জড়িত হওয়া সত্ত্বেও তার ইবাদত কাজে লাগবে না। এ বিষয়ে একটি হাদিস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। স্বনামখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরজ করল, এক মহিলা নামাজ রোজা ও দান খয়রাতের ব্যাপারে খুবই মনোযোগী কিন্তু তার কথায় প্রতিবেশীরা কষ্ট পায়। রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই মহিলা জাহান্নামি। তখন ব্যক্তিটি বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, আরেক মহিলা ইবাদত ও দান- খয়রাতের বেলায় দুর্বল কিন্তু তিনি কাউকে কটু কথা বলেন না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন_ সে জান্নাতি। (আহমদ) ইসলামে নামাজ রোজা অবশ্য পালনীয় ইবাদত। তবে ইবাদতের পরিসর শুধু নামাজ রোজায় সীমাবদ্ধ নয়। যাপিত জীবন আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অনুসারে চলাও ইবাদত। এ ক্ষেত্রে সদাচরণ যার প্রতি আল্লাহ ও তার রসুল বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন। তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। হজরত আবু যর (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরজ করেন, ইয়া রসুলুুল্লাহ, আমি যদি কিছু আমল করতে ব্যর্থ হই তবে আমার জন্য কী করণীয় হবে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অন্ততপক্ষে তোমার অনিষ্ট থেকে অন্যদের নিরাপদ রাখ। এটি তোমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে। (বোখারি ও মুসলিম)