হবিগঞ্জে উদ্ধার সমরাস্ত্র উলফার!

habiganj15গত তিনদিন ধরে অভিযান চালিয়ে হবিগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা চুনারুঘাটের সাতছড়ির গহিন বনে সমরাস্ত্রের বিশাল মজুদের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। কলকাতার পত্রিকা আনন্দবাজারের দাবি, এমজুদ উলফার বহিষ্কৃত নেতা পরেশ বড়ুয়ার।

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার ও র‌্যাব-৯-এর এর সদস্যরা রোববার রাত ১টার দিকে অভিযান শুর করে। র‌্যাব-৯-এর অধিনায়ক সানা শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে আড়াই শতাধিক র‌্যাব সদস্য উপজেলার সাতছড়ি বনবিটের অভ্যন্তরে এবং টিপরা পল্লীতে এ অভিযানে নামেন। অভিযানে র‌্যাব সদস্যরা টিপরা পল্লীতে দুটি এবং পল্লীর অদূরে গভীর জঙ্গলে একটি টিলায় ৩টি বাংকারের সন্ধান পায়। ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর এসব বাংকারের মুখে আরসিসি ঢালাই করা। ৫টি বাংকারের মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র একটি বাংকারে বিপুল পরিমাণ রকেট লঞ্চার ও ৩টি মর্টার শেলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। ৪টি বাংকারে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি বনবিট। এখান থেকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে অস্ত্র পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যানুযায়ী এ বনবিটের গভীর অরণ্যে একসময় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘ক্যাম্প’ ছিল। এসব ক্যাম্পে আস্তানা ছিল উলফা, এটিটিএফ এবং এনএলএফটির। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে ২০০৫ সালের পর এদের আনাগোনা আর চোখে পড়েনি। তাছাড়া ২০০৩ সালে সাতছড়ি থেকে পাঠানো বিশাল অস্ত্র, গোলাবারুদের চালান আটক হয়েছিল বগুড়ার কাহালুতে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর সাতছড়ি এলাকা গোয়েন্দাসহ প্রশাসনের দৃষ্টিতে চলে আসে। পরবর্তীকালে সাতছড়িতে বেশ কয়েকবার ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তারা সাতছড়ি ত্যাগ করে। তবে মাঝে মাঝে তাদের আনাগোনা ছিল এমন কথা বলছেন কেউ কেউ। সাতছড়ির গহিন অরণ্যে থাকা ত্রিপুরা পল্লীর লোকজন জানান, ২০০৭ সালের পর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আর দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে আনন্দবাজার জানায়, “উলফার সহযোগী জঙ্গি সংগঠন এটিটিএফ (অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স) নেতা রঞ্জিত দেববর্মা ধরা পড়ার পরে তাঁকে জেরা করেই ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সাতছড়ির জঙ্গলে অস্ত্রভাণ্ডারের খবর পান ভারতীয় গোয়েন্দারা। তারপর বারেবারেই বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়। কয়েক বার অভিযান চালিয়েও পুলিশ কিছু পায়নি। সম্প্রতি ফের ভারতীয় গোয়েন্দারা সাতছড়িতে অস্ত্রের হদিশ দিয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পাঠান। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আলফার বহিষ্কৃত নেতা পরেশ বরুয়া চিন থেকে মায়ানমারের পথে যে অস্ত্র পাঠান, তা এই সাতছড়ির জঙ্গলে জমা করে রাখা হয়। সুযোগ মতো তা ভারতে জঙ্গিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ বার তল্লাশির দায়িত্ব দেয় র‌্যাবকে। স্থানীয় চুনারুঘাট থানার ওসি স্বীকার করেছেন, অভিযানের বিষয়ে এ বার পুলিশকেও আড়ালে রাখা হয়।”

পত্রিকাটি আরো জানায়, “রাতভর অভিযানে র‌্যাবও প্রথমে বিশেষ কিছু পায় না। একটি টিলার ওপর কয়েকটি কুয়ো দেখেন তল্লাশিকারীরা। ভোরের দিকে র‌্যাবের এক সদস্য দড়ির মই বেয়ে ধরে তার মধ্যে নামতেই লুকোনো বাঙ্কারের বিষয়টি জানা যায়। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বের পদস্থ কর্তারা হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সকাল ১১টায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরুর পরে একে একে সাতটি কুয়োর মধ্যে সাতটি বাঙ্কার মেলে। সেগুলিতেই পাওয়া যায় থরে থরে অস্ত্রশস্ত্র। র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, মেয়াদ ফুরোনো বেশ কিছু বিস্ফোরক মেলায় মনে করা হচ্ছে, অনেক দিন ধরেই সেগুলি জমা করে রাখা আছে। নজরদারি বাড়ায় জঙ্গিরা সেগুলি পাচার করে উঠতে পারেনি।”

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, “র‌্যাবের মুখপাত্র হাবিব জানান, মজুত অস্ত্রের এক তৃতীয়াংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও বাঙ্কারের সন্ধানে আগামী দু’দিনও চুনারুঘাট উপজেলার এই জঙ্গলে অভিযান চলবে। তবে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য পেয়ে তাঁরা এই অভিযান চালিয়েছেন, এই তথ্য মানতে চাননি হাবিব। তিনি বলেন, বিভিন্ন সূত্রেই অস্ত্র থাকার খবর মিলছিল। তার ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়।”

আনন্দবাজার জানায় করে, “উলফার অধিকাংশ নেতাকেই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে ঢাকা। চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় পরেশ বরুয়াকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। পরেশ বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতে অস্ত্র চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। তাঁরা মনে করছেন, সাতছড়ির অস্ত্রভাণ্ডার ধরা পড়ার পরে এই পথে পরেশের অস্ত্র চালানও বন্ধ হবে।”

উল্লেখ্য, সাতছড়ার গহীন বনে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১৮৪টি রকেট লঞ্চার, ৩টি মর্টার শেল, বিপুল পরিমাণ রকেট লঞ্চার চার্জার ও অস্ত্র ক্লিনার ‍উদ্ধার করেছে। এবং অভিযান এখনো অব্যাহত আছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend