বিতর্কিত “ইলেকট্রনিক ব্রেইন” প্রযুক্তি এবং কিছু প্রশ্ন

mind_uploadingইলেকট্রনিক মস্তিষ্কের ধারনাটি এখন আর নতুন কিছু নয়। অদুর ভবিষ্যতেই মানুষের মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রনিক প্রতিরূপ তৈরি করে মানুষের মস্তিষ্কের কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। কিন্তু এই মস্তিষ্কের তৈরির একটি ব্যাপারে এখনও মতভেদ রয়ে গেছে গবেষকদের মাঝে। এই মস্তিষ্ক কি ব্যাথা পাবে? একে কি কষ্ট দেওয়া যাবে? কষ্ট পেয়ে কি সে মারা যেতে পারবে? একে যদি পুনরায় বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হয়, এর সেই কষ্টের স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব হয়, তার পরেও একে কষ্ট দেওয়ার কোনো কারণ আছে কি?

একেবারে মানুষ অথবা অন্য কোনো প্রাণীর মতো করে ইলেকট্রনিক মস্তিষ্ক তৈরিতে থাকতে পারে বিভিন্ন নৈতিক সমস্যা এবং প্রশ্ন। এসব সমস্যা মোকাবিলা করেই ইলেকট্রনিক মস্তিষ্কের গবেষণায় অগ্রসর হতে হবে। “ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার” তৈরির বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এর মাঝে একটি হলো “মাইন্ড আপলোড” করার ব্যাপারটি। এই উপায়ে পুরো মস্তিষ্ককে স্ক্যান করা হবে এবং এই তথ্য ব্যবহার করে একটি সফটওয়্যার মডেল তৈরি করা হবে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার ব্যবহার করলে এই মডেল তৈরি করবে মানুষের মস্তিষ্কেরই একটি প্রতিরূপ। এটাই হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি। কিন্তু অনেকে মনে করছেন এর ফলে তৈরি হবে এমন এক অবিনশ্বর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা মানুষকে পরাস্ত করতে পারবে। কিন্তু অন্যরা আবার মনে করছে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই নেই।

“মাইন্ড আপলোড” এর ব্যাপারটি কি আদৌ সম্ভব? তা জানা না গেলেও এ নিয়ে নৈতিক যেসব সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে সচেতন রয়েছেন গবেষকেরা। সম্পূর্ণ মস্তিষ্কের যদি প্রতিরূপ তৈরি করা যায়, তাহলে এরও থাকবে একটি মন এবং নৈতিক অধিকার। একটি জৈবিক সত্ত্বার মাঝে যেমন নিউরাল নেটওয়ার্ক থাকে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির নেটওয়ার্ক তেমন না হলেও এরও গুরুত্ব আছে বটে। এ কারণে এই ইলেকট্রনিক মস্তিষ্কের অধিকার নিয়েও আলোচনা ওঠা জরুরি। মানুষের ওপরে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করার আগে তা অবশ্যই অন্যান্য প্রাণীর ওপরে প্রয়োগ করে দেখা হবে। আর এসব কৃত্রিম মস্তিষ্ক ব্যবহার করার সময়ে এদের দুঃখ কষ্টের ব্যাপারটাও চিন্তা করা হচ্ছে। গবেষণার সময়ে একটি জীবন্ত ইঁদুরের লেজ কেটে ফেলা যদি নিষ্ঠুর হয়ে থাকে, তাহলে এই ইলেকট্রনিক মস্তিষ্ককে কোনো রকম কষ্ট দেওয়াটাও তো একই রকমের নিষ্ঠুর, নয় কি?

ল্যাবে যে কোনো রকমের পরীক্ষা করতে গেলে ইঁদুর বা গিনিপিগ জাতীয় প্রাণীকে বিভিন্ন রকমের শক দেওয়া হয় বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রেখে তাদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ ব্যাপারটাকে নিষ্ঠুর বলে অনেকে তা এড়িয়ে যেতে চান। ইলেকট্রনিক মস্তিষ্কের ওপরে গবেষণা করতে গেলেও একই পরিস্থিতির অবতারনা হবে। এমন অবস্থায় কি করা যেতে পারে? গবেষকেরা চিন্তা ক্রছেন এই মস্তিষ্ককে দেওয়া যেতে পারে “ভার্চুয়াল পেইনকিলার”, অথবা তাদের গঠন থেকে ব্যাথা বা কষ্ট পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটিই বাদ দিতে হবে।

এ তো গেলো অন্যান্য প্রাণীর “মাইন্ড আপলোড” এর সমস্যা। মানুষের ক্ষেত্রে কি হবে? মানুষের ক্ষেত্রে একটির বেশি কপি তৈরি করতে গেলে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে। কারণ মানুষের মস্তিষ্কে থাকে অনেক স্মৃতি যা সাক্ষী হিসেবে কাজ করতে পারে। আবার সম্পত্তি, বিয়ে এসব ব্যাপারে তো সমস্যা হবেই। প্রাথমিক পর্যায়ের স্ক্যানগুলো নিখুঁত হবার সম্ভাবনা কম। এর ফলে যেসব ত্রুটিপূর্ণ মস্তিষ্ক তৈরি হবে সেগুলোর দায়িত্বও কাউকে না কাউকে নিতে হবে। অন্যান্য প্রাণীর কপি করা ইলেকট্রনিক মস্তিষ্ককে ব্যাথা দেওয়া যদি নিষ্ঠুরতা বলে ধরা হয়, তবে মানুষের জন্যে তা আরও বেশি প্রযোজ্য। সেই মস্তিষ্ক শুধুই কপি বলে তাকে ইচ্ছেমত কষ্ট দেওয়া যাবে এবং দরকার হলে তাকে মুছে ফেলে আরেকটি কপি তৈরি করে নেওয়া যাবে- এসব নিষ্ঠুরতা যাতে করা না যায় তার জন্যই দরকার তাদের নৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতে যেহেতু এমন প্রযুক্তি আসছেই বলে ধরে নেওয়া যায়, তাই এখন থেকেই এসব ব্যাপারে সব বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক পন্থা ঠিক করে নেওয়া দরকার বলে মনে করেন গবেষকেরা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend