বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিজেই নিজের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করছে
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিজেই নিজের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করছে বলে অভিযোগ করেছে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি)। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থা ও দেশের সার্বিক আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে ২ জুন বেসরকারি এই সংস্থাটির দেওয়া লিখিত অভিযোগে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হযেছে। জেনেভায় সোমবার অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ২৬তম সভার সাধারণ বিতর্কে এএলআরসি এর এই লিখিত অভিযোগের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। বিতর্কে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ এ সব ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করে নিজের স্বাধীনতা ও শক্তি থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘের ভূমিকা রাখা উচিত বলেও জানিয়েছে এএলআরসি।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার (আইসিসিপিআর) আন্তর্জাতিক আইনের স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাধ্য। এই আইন অনুসারে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে আইসিসিপিআর এ বর্ণিত মানবাধিকারের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক রাখার নিশ্চয়তা রাষ্ট্রই দেবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিচারবিভাগও সরকারকে নির্দেশনা দেবে বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্টতার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যেই ক্ষমতাসীন সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে আসছে। অধস্তন আদালতের বিচারপতিদের সঙ্গে নিয়ে সহকারী বিচারপতি মাজদার হুসেইন নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। যা ‘মাজদার হুসেইন মামলা’ নামে পরিচিত।
এই মামলায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। আদালত এই মামলার জের ধরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারকে ১২টি নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনায় বিচার বিভাগের কর্মকর্তা নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃক্সখলা, পেনশন ও ছুটিছাটার বিষয়য়গুলোতে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে হ্স্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা সত্ত্বেও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি বা পদোন্নতির বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ক্ষমতাসীন সরকার। হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিচার বিভাগের কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পদোন্নতি ও পছন্দের জায়গায় বদলি পেতেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য দেখান বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা। বিচার বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অধস্তন কর্মকর্তা ও আইনজীবীরাও সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে থাকে। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাবান নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিচারকদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে।
তবে দেশের আইনশৃক্সখলা বাহিনী বিশেষ করে র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন) ও পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগ আনা হলেও ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে কোনো রকম আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেনি সুপ্রিম কোর্ট। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অপহরণ ও গুমের শিকার পরিবারকে আইনি সাহায্য দিতে এগিয়ে আসলেও পুরো বিচার বিভাগ চলমান মানবাধিকার লক্সঘনের বিষয়ে কোনো রকম পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।