নতুন করে জাতীয় নির্বাচন চাইলেন ড. কামাল ও বদিউল আলম

kamalসকল ভোটারের অংশগ্রহণে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়াকে কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না মর্মে হাইকোর্টের রুলের উপর অ্যামিকাস কিউরির শুনানিকালে তারা এ কথা বলেন।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি খোরশেদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবার দুই অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, ‘কয়েকদিন পর রাস্তায় নেমে আমরা লিফলেট বিলি করব, যেখানে লেখা থাকবে- ‘‘সকল মানুষের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন চাই।’’ যদি এটা না করতে পারি তাহলে আমাদের পূর্ব ও উত্তর পুরুষ ক্ষমা করবে না।’

তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়া ভোটারের মৌলিক অধিকার। আর এ অধিকার রক্ষার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। একটা নির্বাচন হয়ে গেছে বলে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে বিষয়টা তো এমন নয়। একটা ভুল হয়েছে তা সংশোধন করতে হবে।’

ড. কামাল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যদি তা না হতো তাহলে নির্বাচনের পর এত মানুষ মারা যেত না, ২০ শতাংশ ভোট পড়ত না।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘‘আমি ফেরেস্তা নয়, শয়তান নয়, আমি আদম সন্তান। তাই আমার ভুল হতে পারে। আমার যদি কোনো ভুল হয় তাহলে তোমরা তা ধরিয়ে দিলে অবশ্যই সেটা সংশোধন করে নিবো।’’

এরপর বর্তমান সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শুধু বঙ্গবন্ধুর সাইন বোর্ড ব্যবহার করলেই হবে না, তার আদর্শও ধরে রাখতে হবে।’

ড. কামাল হোসেনের পর আদালতে বদিউল আলম মজুমদার তার বক্তব্য পেশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র, সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে গণতন্ত্রের কথা উল্লেখ করা আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাক্ষরকৃত আন্তর্জাতিক আইনে উল্লেখ আছে জেনুইন ইলেকশনের কথা। ইলেকশন এমন হবে যেখানে বাছাই করার সুযোগ থাকবে। সুতরাং প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ না থাকলে তা নির্বাচন হয় না। একই সঙ্গে বাছাই করা হবে অনেকগুলো প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্য থেকে। অথচ আমাদের দেশের নির্বাচনে কোনো বাছাই হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ১৭ ধারায় প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের কথা বলা আছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৬৫ ধারায় জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।’

বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ছিল এ নির্বাচন বাতিল করার। কিন্তু তারা তা করেনি। এবারের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে সম্পূর্ণ মৌলি্ক অধিকার ভঙ্গ করা হয়েছে।’ এ নির্বাচনে ৭০ ভাগ নিবন্ধকৃত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি বলেও জানান তিনি।

বদিউল আলম আরও বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়নি। একই সঙ্গে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারে মর্মে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ১৯ নং ধারা অবৈধ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

এ এমিকাস কিউরির বক্তব্য শেষে আগামীকাল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন আদালত।
এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংক্রান্ত ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের এমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধৃ) হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, রফিক উল হক, মওদুদ আহমদ, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হক কিউসি ও বদিউল আলম মজুমদারকে ঠিক করেন আদালত।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একক প্রার্থীকে নির্বাচিত করার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা কেন সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট ।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারির আদশে দেন। রুলে ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালাম সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদনটি করেন। পরে ওই রিটের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারিতে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আল আমীন সরকার।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা অনুসারে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়। এটি সংবিধানের ৭, ১১, ২৭, ৩১, ৬৫ (২), ১২১ ও ১২২ (২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend