উচ্চাভিলাষী বাজেট দেশের জন্য ভালো : অর্থমন্ত্রী
উচ্চভিলাষ যদি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে সেটিই ভালো। প্রথম থেকেই আমি উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে আসছি। ৫ বছরে ব্যয় করার সামর্থ্য দ্বিগুণ হয়েছে। এটাই এই সরকারের বৈশিষ্ট্য। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় বাজেট ঘোষণার পরদিন আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চলছে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন।
বিকাল সোয়া চারটায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন।
সূচনা বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট নিয়ে মানুষের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে, সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ সাল থেকে বলছি স্থানীয় সরকারে সুযোগ বাড়ছে। আমরা যেভাবে ইউনিয়ন ও উপজেলাকে ব্যবহার করছি। ভবিষ্যতে জেলা পরিষদকেও ব্যবহার করতে পারবো।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি বাজেটকে ‘লক্ষ্য বিলাস বাজেট’ বলে উল্লেখ করেছে- এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নো কমেন্ট’। তাদের মন্তব্যকে কোনো মন্তব্য বলে মনে হয় না।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাস্তবে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে। বৈদেশিক সাহায্য যত আশা করি তা হয় না। তবে বিগত সময়ে এটি ২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা ছিল। ২০০৯-১০ এ অর্থবছরে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিরক্ষা নয়, শিক্ষা সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পায়। অবশ্যই বিনিয়োগের ওপর প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। সাত বছর ধরে আমি আমার অবস্থানে ঠিক আছি। ৯৫ শতাংশ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। একমাত্র গতবার এটি অর্জন করতে পারিনি।
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের জন্য দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন। এর ঠিক একদিন পরেই তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করলেন। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছরই বাজেট উপস্থাপনের পরদিন তিনি সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন।
করমুক্ত আয়ের সীমা আমাদের দেশে যেভাবে বাড়ানো হয় সেভাবে বিশ্বের কোনো দেশে বাড়ানো হয় না। বিশ্বের ধনী দেশেও এভাবে বাড়ানো হয় না।
২ লাখ ২০ হাজার টাকা আগামী ১০ বছরের জন্য নির্ধারণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
মোবাইল সেটে যে কর বসানো হয়েছে তাতে কেউ আপত্তি করবেন না বলে আমার ধারণা।
তবে রাজনৈতিক সহিংসতা আমাদের পরিহার করতে হবে। এটি দুষ্টু কালচার। রাজনীতিবেদরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা এ ব্যাপারে শুধু আপিল করতে পারি।
কালো টাকা সাদা হচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, কালো টাকা থেকে গত বছর ৩৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এই হিসাব দেখলে মনে হয় দেশে কালো টাকাই নেই। ভুল করে বাজেট বক্তৃতায় এটি ছিল না। এখন বলছি এটি বাতিল।
“গত বছর শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে তেমন সাড়া না পাওয়ায় এ বছর সে সুযোগ রাখা হয়নি।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, তবে আমি কালো টাকার বিষয়ে এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
পাশের আরেকটি টেবিলে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, আন্তর্জাতিক বিসয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল হক, টেলিযোগাযোগ সচিব আবু বকর সিদ্দিক, বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর আতিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান আছেন মিলনায়তনে।
এছাড়াও সরকারের মন্ত্রী-সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত আছেন।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “কৃষিতে বাজেট কমানোর কোনো কৃপণতা সরকারের নেই, আমার পক্ষ থেকেও কোনো খেদ নেই। যা চেয়েছি তাই বরাদ্দ পেয়েছি।”
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আগে টিএসপি, এমওপিসহ বিভিন্ন সারে ভর্তুকি দিতে হতো। এখন ভর্তুকি দিয়ে দাম কমাতে হচ্ছে না। কৃষি ঋণ ১১ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ এবং সুদের হার ৮ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে আনা হয়েছে। সুতরাং আগের থেকে কৃষিতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে।
বিজ্ঞান-গবেষণার জন্য যে বরাদ্দ তাও কৃষিতে যোগ হচ্ছে জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, পাটের জিনোম সিকোয়েন্স, বিটি বেগুনের জাত, খরা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিরোধীদলের আন্দোলনের সময় আলু পচে নষ্ট হয়েছে দাবি করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই সেসব ছবি তুলে ছেপেছেন।
সংবিধান অনুযায়ী দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ২০০৮ সালের পর সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে বৈষম্য কমানো। যা সরকার সাফল্যের সঙ্গে করে এসেছে। কারণ ২০০৮ সালের তুলনায় দেশে দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের পরে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৩ কোটি আর চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৮৮ লাখ থেকে কমে ১ কোটি ৫০ লাখে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং বর্তমান সরকারের আমলে একইসঙ্গে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে আবার দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও কমেছে। ফলে ২০১৫ সালে আমাদের যে এমডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আমরা তার আগেই সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারছি।
ইনু বলেন, বিগত খালেদা জিয়ার সরকার দেশের অর্থনীতিকে মুক্তবাজারের কাছে ইজারা দিয়েছিল। যা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশে বৈষম্য কমেছে।
এছাড়া বৈষম্য কমাতে বর্তমান সরকার গ্রামের স্কুলে কম্পউটার ল্যাব করে দিচ্ছে। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও ব্যাপকহারে বেড়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা অবশ্যই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো। কারণ আগের প্রতি বছর আমরা সেটা পূরণ করতে সক্ষম হযেছি। শুধু গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমাতে হয়েছে। কিন্তু এবার আর সমস্যা হবে না।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০১৪-২০১৫ সালের বাজেট উপস্থাপন করার পর অনেকে বলেছেন বাংলাদেশে ব্যক্তি বিনিয়োগ কমেছে। কারণ দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় তারা টাকা বিদেশে পাচার করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই এই তথ্য সঠিক নয়।
প্রাইভেট বিনিয়োগ কমায় অর্থ পাচার হচ্ছে। কিন্তু তা রোধে বাজেটে কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেকে অভিযোগে করে বলেছেন, প্রাইভেট বিনিয়োগ কমায় অর্থ পাচার হচ্ছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, এ তথ্য সঠিক নয়। কারণ আমার কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। আর যদি হয়েই থাকে, তবে সেটা মানি লন্ডারিং অপরাধ। তাই আপনাদের কাছে যদি অর্থ পাচারের কোনো তথ্য থেকে থাকে তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন্ত্রী বলেন, গত বছর পৃথিবীতে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল তা বাংলাদেশকে স্পর্শ করতে পারেনি। এছাড়া বাংলাদেশের এডিপি’র ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এডিপি’র ৯৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হবে।
রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছরেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। যদি পূরণ বা আদায় করা সম্ভব না হবে তবে এটা বাড়ানো হচ্ছে কিভাবে। তাই আমি বলবো আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের জন্য দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন। এর ঠিক একদিন পরেই তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করলেন। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছরই বাজেট উপস্থাপনের পরদিন তিনি সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন।