একে আমার অর্থনীতি বলতেই কষ্ট হয়, উন্নতির বিষয়টিও মূর্খ জাতিকে ভালোই বিক্রি করল সরকার। বিরাট এক ধূম্রজালের সৃষ্টি করেই চলেছে ‘হাসিনা-মুহিত’ অর্থনীতি। লুটপাট আর ইঞ্জিনিয়ারিং করা অর্থনীতির কবলে পড়ে বেশির ভাগ মানুষের জীবনযাত্রা গৃহদাহের পর্যায়ে। ব্যাপক লুটপাটের বিরুদ্ধে পৃথিবীর অন্য দেশ হলে রাস্তায় নামত মানুষ, যার বহু উদাহরণ ইউরোপ। বাজেট, জিডিপি, গ্রোথ নিয়ে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এখন সময়ের দাবি। ‘এই বাজেটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে’ আকবর আলি খান কথাটি অকারণে বলেননি বলে ধরে নেব। অর্থনীতিবিদ না হলেও প্রবাসে বিনিয়োগকারী হিসেবে উদ্ভট জিডিপি এবং গ্রোথ নিয়ে দীর্ঘ দিনের সন্দেহ আমার। একই সাথে এলিট অর্থনীতির মানবিক দিক এবং অ্যাক্টিভিজমের অনুপস্থিতি হতাশাজনক। অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি সব সূচকই তলানিতে থাকার কারণ ১৬ কোটি মানুষের মনোজগৎ ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ করছে বিষাক্ত রাজনীতি, যার বিস্ফোরণ সর্বত্রই। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও মাথাপিছু আয় তলানিতে কেন, রাজনীতিবিদদের অদতার কঠোর সমালোচনা হওয়া উচিত অথচ হচ্ছে না। গার্মেন্ট ও রেমিট্যান্স-নির্ভর অর্থনীতি দিয়ে কোনো দেশই উন্নতির স্বপ্ন দেখাতে পারে না, যারা দেখায় তারা সত্য কথা বলে না।
সার্বিক সূচকে বয়সে ভারাক্রান্ত অর্থমন্ত্রী, অপেশাদারি কর্মকাণ্ডে অর্থনীতি আরো বেশি অসুস্থ হওয়ার লণ, কথায় কথায় তার ‘রাবিশ’ আর ‘বোগাস’ বক্তব্য, যা একজন মন্ত্রীর জন্য অত্যন্ত অশোভন ও বিরক্তিকর। রক্তশূন্য অর্থনীতিতে সূচকের সব প্রবাহই প্রায় স্থবির। এ অবস্থায় কি এক দিনে পৌঁছেছি? শাড়িতে আগুন লাগলে আঁচল চেপে ধরার সাথে সাথে পিঠ পুড়বে, আবার পিঠ চেপে ধরার সাথে সাথে পুড়বে বুক, একসময় মানুষটিই ভস্ম হয়ে যাবে। ল করে দেখুন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ফায়ার ব্রিগেড না পৌঁছাতেই স্টক মার্কেটে আগুন। স্টক মার্কেটের আগুন নেভাতে ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছানোর আগেই পদ্মা সেতুতে আগুন। সেতু যখন পুড়ছে তখন হলমার্কে আগুন। হলমার্কের জন্য ফায়ার ব্রিগেডে খবর না হতেই ব্যাংকে আগুন। তাজরীন পুড়ে শেষ না হতেই রানা প্লাজায় আগুন। ৫ জানুয়ারির আগুন না নিভতেই সাত মার্ডার। সেখানে পানি না ঢালতেই মেঘনায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবি। আকবর আলি খান বলেছিলেন, ‘বাজেট হয়, কিন্তু এরপর কী হয় কেউ জানে না।’ আমরাও ল করছি, ‘মুহিত-অর্থনীতি’ বিরাট এক ফাঁপা বেলুন, শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে রগরগে, প্রতিবাদ করার মতো মুরোদওয়ালা অর্থনীতিবিদ নেই, অনেক অর্থনীতিবিদই স্তাবক; ফলে যা খুশি করে পার পাচ্ছে অর্থনীতির ড্রাকুলারা। ব্যাংকগুলো মহাজনি কায়দায় সুদ নিচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাত্তাই দেয় না, চক্রবৃদ্ধি হারে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সুদ? বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতাধীন হওয়ায় সব অপরাধের দায়দায়িত্ব গভর্নরের হওয়া সত্ত্বেও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। এ ধরনের অর্থনীতি হলমার্ক, রানা প্লাজা, নূর হোসেন, দরবেশ, লতিফ সিদ্দিকী… তৈরির কারিগর (দেখুন, ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটে লতিফ সিদ্দিকীর তুঘলকি কাণ্ড)।
দেশে দু’টি অর্থনীতির একটি সাদা, অন্যটি কালো। কালোটির নিয়ন্ত্রক হাসিনা-মুহিত, এখানে গভর্নরের প্রবেশ নিষেধ। ইঞ্জিনিয়ারিং করা অর্থনীতি দিয়ে বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিসর্জন দেয়া হয়। ছেলেটি মোটাতাজা হলেই স্বাস্থ্য ভালো নয়। এত দ্রুত ২০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ হওয়ার কারণ সব সূচকেই অর্থনীতির রক্তসঞ্চালন প্রায় বন্ধ। ব্যাংকভর্তি টাকা, অথচ টাকার জন্য হাহাকার। উচ্চ সুদে টাকায় হাত দিতেই ভয় পায় মানুষ, কিন্তু বিনিয়োগ ছাড়া গ্রোথ হয় কী করে? জিডিপির সংজ্ঞা অনুযায়ী, উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রেগুলো ৪৩ বছরেও গড়ে না ওঠায় সর্বত্রই অনাচার এখন নিয়ম। অর্থসঞ্চালন প্রবহমান না থাকলে জিডিপি এবং গ্রোথের কোনো শাখাই উৎপাদনশীল নয়। অলস টাকা আর অলস পুত্রটি এক। গ্রোথের বড় অংশই রেমিট্যান্স, যা দীর্ঘমেয়াদি নয়, সঙ্কোচন হচ্ছে শ্রমবাজার। বলছি, ‘হাসিনা-মুহিত’ অর্থনীতি নিয়ে সৃষ্টি হওয়া ধূম্রজালের কথা।
অর্থমন্ত্রী জিডিপির কথা বলেন, কিন্তু কী দিয়ে জিডিপি হয় সেটা বলেন না। টকশোর আলোচকেরাও বলেন না, কিন্তু জিডিপি নিয়ে সবাই সরব। আমার প্রশ্ন, কেন? জিডিপির প্রতিফলন ঘটে পারক্যাপিটা ইনকামে যাকে বলেÑ জিডিআই। জিডিআই অর্থাৎ মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রায় জিডিপির প্রভাব। দেশী কিংবা বিদেশী, দেশের অভ্যন্তরে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেসের উৎপাদনের টোটাল মার্কেট ভেলু সাধারণ মানুষের জীবনে কিভাবে প্রবাহিত হয়, তা দিয়েই পারক্যাপিটা ইনকাম শনাক্ত হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, জিডিপির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রায় নেই বললেই চলে। অর্থনীতির বিরাট অংশই কালো টাকায় রগরগে। প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি কালো টাকা বিদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে জিডিপি ও গ্রোথ নিয়ে কথা বলার সুযোগ না থাকলেও সুপারম্যানদের মুখে খই ফুটছে। কর্মসংস্থান দিয়ে জিডিপি হয় না, যদিও অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এই ত্রেটি। আয় না হলে ব্যয় করবে কী করে? বেচাকেনা ছাড়া অর্থ সঞ্চালন হয়? বছরে কয়জন মানুষের কর্মসংস্থান হলো, কত লোক বেকার, পাত্তাই দেয় না সরকার; এরা আছে মঙ্গল গ্রহে। হাউজিংয়ের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরটি জিডিপিতে সেভাবে নেই, তা হয় কী করে? গায়ে-গতরে শ্রমিক এবং বস্তিবাসীদের সাথে বাড়ির মালিক এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানে যে আকাশ-পাতাল তফাত, এসব তথ্য বাদ দিয়ে উন্নতির পরিসংখ্যানগুলো ভুয়া। এর মূলে অদ সরকার, সুপারম্যান মন্ত্রিপরিষদ, অস্থির রাজনীতি এবং মেধাহীন জাতি। অর্থনৈতিক স্থবিরতা অতি কৌশলে চাপা দিয়ে রেখেছেন হাসিনা-মুহিত। সরকারের খরচ করার লম্বা হাত দেখে মনে হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইউরোপের সমান। বাস্তবে ইউরোপের জিডিপি থাকলেও আমাদের সাথে এর আভিধানিক অর্থ সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণ প্রবাসী শ্রমিক এবং গার্মেন্ট শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতি।
এত কম মাথাপিছু আয় বেশির ভাগ মানুষের জীবনে কী উপকারে আসে, সেটা বলছে না সরকার, কিন্তু বলছে উন্নতির কথা। কার উন্নতি, কিসের উন্নতি, চোখে পড়ছে না। এভাবেই জনপদে ধরা খাচ্ছে সরকার। দারিদ্র্যনির্ভর দেশটির বেশির ভাগ বাজেটবঞ্চিত ম্যাজিক মানুষেরা নিজেদের মতো অর্থনীতি সৃষ্টি করে। বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথে ব্যাংকের সম্পর্ক দা-কুমড়ার। এর কারণ অবাস্তব ব্যাংকিং খাত এবং চোরাই অর্থনীতি। প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় করে গ্রাম্য অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে বেশির ভাগ নি¤œ আর নি¤œমধ্যবিত্তরা। এখানে সরকারের কৃতিত্ব জিরো। এ দেশের অর্থনীতি এত বেশি এলিট-নির্ভর, যার সাথে ৯৫ ভাগ মানুষের সম্পর্ক প্রায় নেই। শতকরা ৫ ভাগ এলিট শ্রেণী নিয়ন্ত্রণ করে ৯৫ ভাগ টাকা। এরাই নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি, কালো টাকার বাজার, ব্যাংক ও পুঁজিবাজার; প্রভাব খাটায় বাজেটের ওপর। আবার ৫ ভাগের ১ ভাগ অসম্ভব ধনীদের হাতে ৯৫ ভাগের ৯৯ ভাগ টাকা। এদের জীবন সিনেমার মতো। লুটেরাদের স্বার্থে প্রতি বছরই হাসিনা-মুহিতের করাপ্ট বাজেট আয়তনে বাড়ে, সৃষ্টি করে লুটপাটের জন্য অসংখ্য প্রকল্প। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস বলতে যা বোঝায়, বাজেটে উন্নয়ন খাতের ৯০ ভাগ টাকাই শুভঙ্করের ফাঁকি। বিপথগামী অর্থনীতি চলছে বেশির ভাগ জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়াই। বলছি, উন্নয়নের দাবিগুলো প্ঙ্খুানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে।
যা দিয়ে জিডিপি এবং গ্রোথ হয়, আমাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। গার্মেন্ট আর চিংড়ি মাছ-নির্ভর অর্থনীতি টেকসই নয়। জিডিপি বলতে যা বোঝায়, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া এমনকি প্রিমিয়াররাও জানলে অবাক হবো। সুতরাং সুভাষ সিংহ রায়দের মতো টকশো গেস্টরা যখন গ্রোথের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলেন, দুর্ভাগ্য, অপ্রয়োজনীয় বা বাজে কথার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্ন করার মতো জ্ঞানী হোস্ট বা সচেতন টেলিভিশন কর্মকর্তা আমাদের নেই। হোস্ট এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা পশ্চিমা টকশোগুলো দেখে উপলব্ধি না করা পর্যন্ত সঙ্কট কাটবে না। মিডিয়ায় অসংখ্য ভুল ব্যাখ্যা এবং প্রয়োজনীয় সমালোচনার অভাবে মূল্যবান মগজসহ সার্বিক সূচকের পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
ডিকশনারিতে জিডিপি এ রকমÑ ‘দি টোটাল মার্কেট ভেলু অব অল ফাইনাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস, প্রডিউসড ইন এ কান্ট্রি ইন এ গিভেন ইয়ার ইকুয়্যাল টু টোটাল কনজিউমার, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট স্পেন্ডিং, প্লাস দ্য ভেলু অব এক্সপোর্ট, মাইনাস দ্য ভেলু অব ইমপোর্ট।’ অর্থাৎ সারা বছরের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে সেটাই জিডিপি। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও জিডিপি এবং গ্রোথ বলতে কৃষি, গার্মেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রার সাথে কয়েক কেজি চিংড়ি আর চিনামাটির থালাবাসন চেতনাবাদীদের জন্য লজ্জাকর। কৃষির গ্রোথ নিয়ে মরণ খেলায় লিপ্ত সরকার, জোর করে ফাঁপানো বেলুন কৃষির আয়ু বেশি দিন নেই। গবেষণা ও মিডিয়ার স্বাধীনতার অভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য গুম হওয়ায় কৃষি অপরাধ বিষয়ে জাতি অন্ধকারে। যে হারে ভূগর্ভস্থ পানি নষ্ট করে ফসল ফলানোর বিলাসিতায় গা ভাসিয়েছেন মতিয়া চৌধুরী, আগামী প্রজন্মের জন্য তা কত বড় অশনিসঙ্কেত, আমরা না বললেও কঠোর সমালোচনা করছে বিদেশীরা। ভূগর্ভে ৬ মিটার পানির আয়ু আর মাত্র ছয় বছর, এরপরই রেড জোনে পৌঁছে যাবে। সুতরাং এই হারে পানি উজাড় করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর আনন্দিত হওয়ার কোনোই কারণ নেই। এতে না লাভ হয় কৃষকের, না অর্থনীতির। প্রয়োজনের অধিক ফসল ফলিয়ে মধ্যখানে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এভাবে মহামূল্যবান পানি এবং জমির উর্বরতা দ্রুত নষ্ট করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নামে প্রচণ্ড ধোঁকা মারছে তথ্যমূর্খ জাতিকে। অতি ব্যবহার এবং বিষাক্ত কীটনাশক দিয়ে মাটির সবচেয়ে উর্বর স্তর যেভাবে ধ্বংস করছে, বিদেশীরা উদ্বিগ্ন হলেও পরিবেশবাদীরা নীরব। কৃষিমন্ত্রীর উচিত, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করে গ্রোথ দেখানো। এখানে এসে যায় নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অর্থাৎ নদী-খাল-বিল শুকনো। মূল্যবান পানি উজাড় করে উজাড় হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাওয়ার কণ্ঠ প্রকৃতির নেই, কিন্তু পরিবেশবাদীরা নীরব কেন? রিট করে যদি ‘মধুমতি’ আর ‘আসিয়ান সিটি’ প্রকল্প বন্ধ করা যায়, পানি অপব্যবহার রোধে নয় কেন? করাপ্ট কৃষিনীতির মাধ্যমে পানি সঙ্কটে লাগাতার দাপদাহ, ভূমিকম্প এবং মরুভূমি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বাংলাদেশে। বলছি, চোরাই অর্থনীতিতে জিডিপি ও গ্রোথ নিয়ে মহাধূম্রজালের কথা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় অংশজুড়ে স্টক মার্কেট, রিয়েল এস্টেট, কর্মসংস্থান এবং ব্যাংক… কোনটা দুর্নীতিবাজদের খপ্পরে নেই? জিডিপির ‘কলিজা’ ত্রেগুলো ৪৩ বছর পরও বেশির ভাগ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। এক ভাগ মানুষ এখনো বিটিভি দর্শকদের বাইরে। সুতরাং উন্নতির যত কথাই বলুন হাসিনা, সঙ্কোচনমূলক অর্থনীতির অন্যতম চিহ্ন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেশির ভাগ মানুষের আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। এ ছাড়াও রয়েছে ভুঁইফোড় অর্থমন্ত্রীদের উপদ্রব, সবাই নিজেদের বাজেট দিতে ধরনা দেন, বিভিন্ন দেশে ট্রেড নেগোসিয়েশন করেন। আমার প্রশ্নÑ তাহলে অর্থমন্ত্রীর কাজটা কী?
জিডিপির বড় অংশজুড়ে ম্যানুফ্যাকচারিং, যা আমাদের নেই। ৭৭ ভাগ গার্মেন্ট রফতানি দিয়ে অর্থনীতির বিচার করে শিশু মন্ত্রিপরিষদ। বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্থসঞ্চালনে কয়েকজন শিল্পমালিক ছাড়া প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের ইতর জীবনে জিডিপির প্রতিফলন নেই। অন্য দিকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট কিনে পশ্চিমারা বিক্রি করে কয়েক শ’ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ আমাদের ঘাম আর সম্পদে জিডিপি ও গ্রোথ বাড়ে পশ্চিমাদের। শ্রমিকের ঘাম এত সস্তা হওয়ায় গার্মেন্টের আয়-ব্যয়ে যে আকাশ-পাতাল বৈষম্য, উন্নয়নকামী কোনো জাতিই এই শিল্পে বেশি দিন থাকবে না; বরং অনেক আগেই অন্য খাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও শ্রম বিনিয়োগ করলে গ্রোথ হতে পারত কয়েক গুণ। বারবার অর্থনৈতিক ধসে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা চড়াসুদে সঞ্চয়পত্রে খুঁজে পেয়েছে নিরাপত্তা এবং বিকল্প বিনিয়োগ, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত।
বলতে চাইছি, অর্থসন্ত্রাসের ফসল রানা প্লাজার মতো ঘটনা তত দিন ঘটবে যত দিন পর্যন্ত মতায় থাকার জন্য অর্থনীতি কেন, সব সূচকই ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করবে সরকার। এ ধরনের অর্থনীতিই সৃষ্টি করে হলমার্ক, নূর হোসেন, বিসমিল্লাহ গ্র“প, লতিফ সিদ্দিকী…।
কর্মসংস্থানের দুর্দশা লিখে শেষ করা যাবে না, একে বাদ দিয়ে উন্নতির দাবি ভুয়া। প্রবাসী শ্রমিক কোনো সেক্টর নয়, বরং পুরনো ক্রীতদাসের আধুনিক সংস্করণ (গুগলে দেখুন ইএসপিএন কাতার ক্রীতদাস তথ্যচিত্র)।
জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ প্রবাসী শ্রমিক। পৃথিবীর বহু দেশেই এই পরিমাণ জনসংখ্যা নেই। ১৭ কোটি মানুষের অর্থনীতিকে যে চোখে দেখছে সরকার, বিষয়টি তত হালকা নয়। এ ধরনের অর্থনীতি বেশি দিন টেকসই নয়।
সর্বত্রই যখন স্থবিরতা তখন ড্রাকুলার ুধা নিয়ে বারবার ব্যাংকের ওপর হামলে পড়েছে সরকার। প্রতিটি বাজেটেই এদের ুধা কমছে না, বরং বাড়ছে। বাধ্য হয়ে নিরুপায় ব্যাংক চড়াসুদে আমানত রাখে। ফলে লুটপাটের অর্থনীতিতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে বিসমিল্লাহ ও ডেসটিনি গ্র“প…।
এক দিকে ব্যক্তিমালিকানায় টাকার পাহাড়, অন্য দিকে কর্মসংস্থানের খোঁজে প্রতিদিন ঢাকা শহরে ঢুকছে হাজার হাজার মলিন মানুষ। যত্রতত্র গড়ে উঠেছে গার্মেন্ট কারখানা, বাড়ছে রিকশা ও অটোরিকশার সংখ্যা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৭.৮ ভাগ মানুষ বস্তিবাসী। রানা প্লাজার ঘটনা সত্ত্বেও গার্মেন্টের আয় বাড়ার কারণ নিয়ে বই লেখা যায়। আমাদের সস্তা শ্রমের দেশে ড্রাকুলার খাদ্য খুঁজে পেয়েছেন পুঁজিবাদীরা। রানা প্লাজার পর অন্য কোনো দেশ হলে পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠত, অনেক মন্ত্রীকেই পদত্যাগ করতে হতো। এদের ভাগ্য ভালো, কারণ আমরা বোকা। ১০০ টাকায় শার্ট তৈরি করে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করে যে পুঁজিবাদীরা কয়েক শ’ বিলিয়ন ডলার আয় করে কখনোই শিল্পোন্নত বাংলাদেশ চাইবে না, বরং নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ যেন গরিবই থাকে, অন্যথায় পুঁজিবাদ ব্যাহত হবে। য়িষ্ণু অর্থনীতি, পুঁজিবাজার এবং রাজনীতির জন্য পশ্চিমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেক উদাহরণ আফ্রিকা। এদের ফাঁদে ধরা দিয়ে উন্নতির নামে বিকিয়ে দেয়ার সর্বনাশা খেলায় মেতেছে সরকার। এদের কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে সোহেল রানা, তানভির মাহমুদদের মতো খুনি ও অর্থসন্ত্রাসীরা। সুতরাং উন্নতির দাবি মাইক্রোস্কোপের তলে দেখতে হবে।
অদ সরকারের কারণে কয়েক বছরে ফিরে গেছে গাড়ি এবং ইলেকট্রনিকসের মতো প্রস্তাবিত বহু শিল্প, যারা আসল জিডিপি ও গ্রোথের চালক। শিল্পমালিকদের চাহিদা জমি ও বিদ্যুৎ, কোনোটাই দিচ্ছে না সরকার; ফিরে গেছে পদ্মা সেতুর মতো অর্থসঞ্চালক প্রকল্প। কৃষি ও গার্মেন্টের ঘোড়া রোগে পেয়ে বসেছে সরকারকে। ফলে ক্রমেই নি¤œমুখী হচ্ছে ১৭ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা (জীবনযাত্রা মানেই একটি বাড়ি, একটি খামার কিংবা লঙ্কা-পেঁয়াজ নয়; বরং বলছিÑ একটি বাড়ি, একটি গাড়ি)।
যে পরিমাণ বিদ্যুৎ গার্মেন্টকে দিচ্ছে, সমপরিমাণ বিদ্যুৎ অন্য খাতে দিলে আয় হতো অনেক বেশি। যত দিন গার্মেন্টের ঘোড়া রোগ থাকবে তত দিন শিল্পোন্নত হওয়ার বারোটা বাজবে। গার্মেন্টের আনন্দে মুখে ফেনা তোলা টকশো গেস্টদের আনন্দিত হওয়ার মতো কিছুই নেই। সরকারও চায় দেশটা এভাবেই থাকুক; কারণ, উন্নত জীবন সৃষ্টি করে উন্নত মানুষ।
ব্যাংক, পুঁজিবাজার, আবাসন, ব্যবসায়… কালো টাকাবান্ধব অর্থনীতি হলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে। একটার পর একটা লুটপাটের দুঃসংবাদ এখন নিয়ম। সরকার সব জানে, সব ক’টাকে চেনে। অর্থমন্ত্রী যখন নিজেই কালো টাকা সাদা করেন, বাস্তবে অর্থসন্ত্রাসীদেরই উসকে দেন। ‘আইডাহ’ অঙ্গরাজ্য সমান একটি দেশে যখন আমেরিকার অর্ধেক মানুষ, সেই বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অভিভাবক হওয়া এত সোজা নয়। প্রবাসে বিনিয়োগের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমারও। দ্বিতীয় বাংলাদেশ নামে খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে ১৯৯৭ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিনিয়োগ করি। এর আগে ১৫ বছর স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা থেকে আর্থিক অর্জনের চেয়ে বড় অর্জন ওয়ালস্ট্রিটের পারদ বোঝার মতো সচেতনতা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, উন্নয়নের মূল সূত্র সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সর্বনি¤œ সুদের হার। সহনীয় মূল্যে সুদ নিয়ে ব্যবসায় করতে চাইলে ঘোড়ার আগে গাড়ি কখনোই ডিঙিয়ে যাবে না; কিন্তু সেটাই হচ্ছে।
৮ মে হিউম্যান রাইটস লিখেছে, ‘সরকার সোজা না হলে দাতা দেশগুলোর কাছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য লিখবে।’ নিউ ইয়র্ক টাইমস ১৩ নভেম্বর ২০১৩ সালে লিখেছে, ‘বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।’ সরকার যদি এভাবেই চলতে থাকে, হয়তো ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দিকে এগিয়ে যাবে। তখন অর্থনীতির অবস্থা কী হতে পারে, অনেক উদাহরণ চোখের সামনে। সরকারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, জেনেশুনেও নিষেধাজ্ঞার পথেই হাঁটছে তারা। ফালতু কথা আর গালাগাল নয়, বরং অবাধ্য সরকারদের ওপর এভাবেই ােভ প্রকাশ করে শাস্তি দেয় পশ্চিমারা। অর্থাৎ তারা চাইছে বৈধ নির্বাচন।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খোলামেলা দুর্নীতির গোডাউন; যার যা খুশি করছে। ব্যাংকের গভর্নর নির্বিচারে অসত্য কথা বলে চলেছেন, যা চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। অর্থনীতির মানে এই নয়, টাকা অলস পড়ে থাকবে, দ্রব্যমূল্য বেড়েই যাবে, গার্মেন্ট ভিত্তিক রফতানি বাড়বে, কিন্তু বাকি সব স্থবির। এসব কারণেই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে, দেশের ভেতরে তৈরি হচ্ছে হলমার্ক আর ডেসটিনির মতো চোরাই অর্থনীতি। ১০ থেকে ১৫ বছরে যে ঋণ সুদে-আসলে শোধ হওয়ার কথা, সুপারম্যান মুহিত অর্থনীতিতে প্রতি পাঁচ বছর পর পর ঋণের অঙ্ক দ্বিগুণ হলে অর্থসন্ত্রাসীদের সংখ্যা কমবে নাকি বাড়বে? ব্যবসায় লাভতির মধ্যে সুদের হার সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। এই কাজে সদাপ্রস্তুত একজন সময়োপযোগী তরুণ অর্থমন্ত্রীর প্রয়োজন অনিবার্য, যাকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি। গত কয়েক বছরে বোগাস আর রাবিশ খ্যাত মুহিত যেসব উদাহরণ রাখলেন, অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল তার বয়স হয়েছে।
আমেরিকায় বাড়ির ঋণের একটি নমুনাÑ ১ মিলিয়ন ডলার ঋণ, সুদ ৫.১০ শতাংশ হারে ১২০ মাসের জন্য নিলে সুদে-আসলে যাবেÑ ১ মিলিয়ন ২৭৮ হাজার ৬৬০ ডলার। ২০ শতাংশ হারে সুদে নিলে যাবেÑ ২ মিলিয়ন ৩২৭ হাজার ৩০ ডলার। অর্থাৎ ৫ আর ২০ শতাংশের মধ্যে সুদে-আসলে ফারাক ১.১ মিলিয়ন ডলার। এটি ‘ম্যাজিক’ নম্বর, যা দিয়ে সিদ্ধান্ত হয় ব্যক্তি দুর্নীতিবাজ হবে নাকি অন্য কিছু। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে নাস্তানাবুদ ব্যক্তিটি তখন বাধ্য হয়ে ভাববে, কত দ্রুত সোহেল রানা আর তানভির মাহমুদ অর্থনীতিতে যোগ দেয়া যায়। অর্থাৎ দুর্নীতিকে বাধ্য করে রাষ্ট্রনীতি, সাথে পেয়েছে আইনহীনতা। সোনালী ব্যাংক যদি তানভির মাহমুদের হাত না ধরত, এমপি মুরাদ জং যদি রানার কপালে চুমা না খেতেন; এদের নাম শুনতে হতো না। যারা মনে করে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ এক দিনে সম্ভব হয়েছে, তারা অর্থনীতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। এরা বেড়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে।
অর্থনীতির আরেক প্রাণ পুঁজিবাজার, অথচ আওয়ামী সরকার বারবার একে আলু-পটোলের বাজারের বাইরে ভাবছে না। আমি তো এটাকে স্টক মার্কেটই বলব না, বরং স্রেফ জুয়ার বাজার। যেখানে ‘পোকার’ টেবিল থেকে ১০০ জনের বিনিয়োগ লুটে নেয় একজন জুয়াড়ি। দুই টার্মেই স্টক মার্কেট নিয়ে যা ঘটল, এরপরও মুহিত কিভাবে অর্থমন্ত্রী থাকেন? পশ্চিমে হলে বহু আগেই তাকে অবসরে যেতে হতো। সুতরাং কাদের উন্নতির কথা বলছে সরকার বোধগম্য নয়। ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে যে তদন্ত হলো, রিপোর্টটি পর্যন্ত গুম করে মুহিতের বক্তব্য, প্রভাবশালীদের বিচার করা যাবে না। ‘প্রভাবশালীদের বিচার করা যাবে না?’ প্রভাবশালী হলেই যে বিচারের ঊর্ধ্বে দৃষ্টান্ত রাখল বাংলাদেশ। তদন্ত গুম করে বাঁচিয়ে দিলো অর্থনীতির ড্রাকুলাদের, তলে তলে যারা সরকারের পৃষ্ঠপোষক। এই ঘটনা আমেরিকায় ঘটলে মাল মুহিতকে কংগ্রেসনাল হেয়ারিংয়ের হটসিটে বসাত, মানুষ দেখত নির্বিচারে কিভাবে অসত্য কথা বলছেন দায়িত্বশীলেরা।
বাজেটের অন্যতম প্রাণ আয়কর নিয়ে যা করছে, বিষয়টি আরেক অপরাধজগৎ। ইচ্ছা হলেই যাকে খুশি ঋণ অব্যাহতি, সুদের হার কমানো, খেলাপি ঋণ মওকুফ, এই পর্যায়ের অর্থনীতি অর্থসন্ত্রাসকে উসকে দেয়। সুতরাং বাজেট সামনে রেখে বলছি, আরেকটি লুটপাটের ব্যবস্থা সফল হতে দিলে এলিট শ্রেণী আরো বড়লোক হবে, গরিব আরো গরিব হবে, এই বাজেট ঠেকাতে হবে।
বিদেশীরা চাইছে নির্বাচন, অন্যথায় রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সের গতি কমেছে। সরকারকে বুঝতে হবে, তাদের মতার বিলাসিতার জন্য ১৭ কোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে খাদে ফেলা যাবে না। সুতরাং আর কিছু না হলেও অর্থনীতির স্বার্থে হাসিনাকে বৈধ নির্বাচনের পথে হাঁটতে হবে অন্যথায় বারবার সুপারম্যান বাজেট দিয়ে বেশি দিন পার পাওয়া যাবে না। বাজেটে আবারো ফেলেছে পদ্মা সেতুর টোপ। তারপরও দায়িত্ব পালনে বিরত মানুষ। সরকার ভাগ্যবান হওয়ার কারণ, আমরা মূর্খ। জনগণ যদি হাসিনাকে অর্থনীতি ধ্বংস করার ম্যান্ডেট দিয়ে থাকে সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু আবারো হলমার্ক আর রানা প্লাজা তৈরির মতো বাজেটগুলো কিছুতেই পাস হতে দেয়া উচিত নয়, কিন্তু হচ্ছে। হলমার্ক, রানা প্লাজাবান্ধব বাজেটের বিরুদ্ধে সংবিধানের সব আইন মেনে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন প্রয়োজন। হাসিনা-মুহিতের করাপ্ট বাজেট এবং গরিব মারা অর্থনীতির বিরুদ্ধে কথা বলব না কেন? অর্থসন্ত্রাসী বাজেটের বিরুদ্ধে আদালতের সুদৃষ্টিও কাম্য।