বিশ্বকাপের ১১ রমণী
ব্রাজিলের বিশ্বকাপে সকলের চোখ কেবল ফুটবলে আকৃষ্ট থাকবে না। সবার দুর্নিবার আকর্ষণের আরও এক বিষয় ‘ওয়াগস’। (ডব্লুএজি) পুরো অর্থ, ‘ওয়াইফ অ্যান্ড গার্লফ্রেন্ড’।
বহুবচনে ওয়াগস্। বিশ্বের নামী পত্রপত্রিকা যে কেবল ফুটবল নিয়ে মেতেছে তা কিন্তু মোটেই নয়। আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ব্রিটেনের মর্যাদাসম্পন্ন গার্ডিয়ান কেউ পিছিয়ে নেই। ব্রিটিশ
ইন্ডিপেন্ডেন্ট গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট করেছিল যে, এবারে কি ওয়াগসরা ব্রাজিলে যেতে পারবেন।
এঁরা যে সবাই ফাটাফাটি রকমের সুন্দরী, আর প্রায় প্রত্যেকেই স্বমহিমায়, জনপ্রিয়তায়, ভারে ও ধারে উদ্ভাসিত উচ্চকিত, তাই বলে নয়। আরও একটি সিক্রেট আছে। আর সেটা হলো অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই ওয়াগসদের অদৃশ্য প্রভাবের কারণে খেলার মাঠের রথী-মহারথীরা ভিন্ন রকমের আচরণ দেখাতে পারে। দুর্দান্ত ফর্ম থাকার পরেও কেউ কেউ তাঁর দেশ ও দলের জন্য হুমকি কিংবা আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারেন।
জার্মানির স্পা শহর বাডেন বাডেন ফুটবল টুর্নামেন্টের কথা কেউ ভোলেনি। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের ওয়াগসরা। কারণ টিম বস কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। এবারে নাকি তারা ব্রাজিলে যাবেন বিশেষ মিশন নিয়ে বাডেনের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে। ১২ই জুনের সাও পাওলো তাদের বরণ করতে প্রস্তুত। কেবল স্টেডিয়াম আর বিশ্ববাসীর চোখের নজরকাড়া নয়, সাও পাওলোর দোকানিরাও কষে সিনা টান করছেন। তাদের হাত-পা নিশপিশ করছে। তারাও রোমাঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সেটা ফুটবলের উত্তেজনায় নয়। কারণ তারা জানেন ওয়াগসদের পদধূলি একবার পড়লেই হলো। তারা একেবারে বর্তে যাবেন। ২০০৬ সালের ২০শে জুন ডেইলি মেইল লিখেছিল, কেনাকোটার সুনামি নেমেছিল বাডেন বাডেনে। ৬ ওয়াগস মাত্র এক ঘণ্টায় জামাজুতো কিনতে খরচ করেছিল ৫৭ হাজার পাউন্ড। দোকানিরা কিছুদিনের জন্য তাদের দোকানের উইন্ডো স্ক্রিন বদলে ফেলেছিল। সেটা যে ওয়াগস সাজে সজ্জিত হয়েছিল তা বলাই বাহুল্য।
ইংল্যান্ড ম্যানেজার রয় হজসন কিংবা ইতালির ম্যানেজার সবাই এবার সদয়। কোন বাধানিষেধ নেই। গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ামিতে ফাইনাল শো ডাউনে হজসন বলেছিলেন, ওয়াগসরা যেন খেলার শেষ ধাপে আসে। কিন্তু ব্রাজিলে তাদের জন্য দুয়ার খোলা। অথচ ইংল্যান্ডের কয়েকজন সাবেক ম্যানেজার ঘোষণা দিয়েছিলেন- এই ওয়াগসরাই যত নষ্টের মূল। তারা খেলোয়াড়দের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। মাঠে তাদের খেলার মান কমায়।
ইতালির বস সিজার প্রাণদেলি দিলখোলা। তিনি দু’হাত বাড়িয়ে ওয়াগসদের ব্রাজিলে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, পরিবার কোন ক্ষতি করে না। বরং শিশুরা টেনশন কমাতে সাহায্য করে। তারা আনন্দ ও সুখ বয়ে আনে। গত বছর কনফেডারেশন কাপে আমরা ভাল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। সুতরাং ওয়েলকাম ওয়াগস। সুস্বাগত।
ওয়াশিংটন পোস্টে গত ২রা জুন মারিশা পেইন লিখেছেন, বিশ্বকাপের হালকা চপলা দিক যখন নজরে আসে তখন আমরা তা বলার সমান সুযোগ পাই। আর ইতিমধ্যে আমরা ব্রাজিলের টুর্নামেন্টে সুদর্শন পুরুষদের দেখতে পাচ্ছি এবং সেখানে আমরা ভাবতেই পারি, একই সঙ্গে দশ জন সুন্দরী দেখতে পাবো। আপনারা কি জানেন ওয়াগস মানে কি? এটি একটি হাস্যকর সকার পরিভাষা।
বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র ৩ দিন বাকি। একসময় ওয়াগসদের রানী ছিলেন ভিক্টোরিয়া বেকহাম। এবারে সেই অবস্থানে যাকে ভাবা হচ্ছে তিনি রোনালদোর বাহুডোরে বাধা ইরিনা শায়েক। তিনি শুধু একজন মডেলই নন, স্পোর্টস ইলাসট্রেটেড সুইমস্যুট মডেল। তার বয়ফ্রেন্ড ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পর্তুগালের তারকা। গত মাসে এই জুটিকে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে দেখা গেছে। ২৮ বছর বয়সী এই নারী হারকিউলিস-এর প্রেমাষ্পদ মেগারা চরিত্রে অভিনয় করছেন। টুইটারে শায়েকের অনুসারীর সংখ্যা চার লাখ ৪৭ হাজার।
তুখোড় ও সেনসেশন মেগাস্টার শাকিরা। একটি শিশু নিয়ে তার জীবন কাটছে স্পেনের ন্যাশনাল তারকা জেরার্ড পিকের সঙ্গে। চিয়ারলিডার হিসেবে তিনিও নজর কাড়বেন। ব্রিটিশ ডেইলি স্টারের মতে শাকিরাকেই বলা যায় কুইন অব ওয়াগস। বর্তমান ওয়াগ টিমের রানী। টুইটারে তার অনুসারী মোটে ২৫ লাখ। শাকিরার দেশ কলম্বিয়াও বিশ্বকাপের আসরে এসেছে। তবে বিশ্বকাপ কিভাবে জুটি গড়ে তার আদর্শ স্থাপন করেছেন এই জুটি। ওয়াকা ওয়াকা গান যখন বিশ্বকে উন্মাতাল করেছে তখন নিঃশব্দে তা লক্ষ্যভেদ করে পিকের জীবন। শাকিরার এই গান শুনেই বিমোহিত পিক প্রেম নিবেদন করেন। এবারেই প্রথম অফিসিয়াল হিসেবে শাকিরাকে দেখা যাবে ব্রাজিলে। তবে এই গ্রীষ্মে তার ফ্যাশনটা কি হবে তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার কমতি নেই।
এডার্ন পপ স্টার। গানের ভুবনের তারকা। স্পেনের টিভির প্রিয়মুখ। স্পেনিশ বয়ফ্রেন্ড ডেভিড দ্য গিয়াকে দিয়ে যেসময়টুকু তার বাঁচে তখন তাকে টিভি পর্দা আলোকিত করেই কাটে।
অ্যালেক্স কুরান কেবলই একটি সুন্দর মুখবয়ব নন, ডেইলি মিরর পত্রিকার একজন ফ্যাশন কলামনিস্ট। তিনি ইংল্যান্ড টিমের স্টিভেন জেরার্ড-এর স্ত্রী। তবে তিনি যথেষ্ট স্বনামধন্য।
ইয়োলান্থে স্নেইডার-কাবু স্পেনিশ বংশোদ্ভূত। কিন্তু তিনি খ্যাতি কুড়িয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। সেখানে তিনি টিভি সোপ অপেরা তারকা। তিনি ডাচ্ টিমের ওয়েসলি স্নেইডারকে বিয়ে করেছেন।
ওয়াগদের মধ্যে কলিন সত্যি ব্যতিক্রম। কারণ তিনি তাঁর জীবন সঙ্গীর নাম নিজের নামের অংশে পরিণত করেছেন। তিনি কলিন রুনি। টেলিভিশনে তার অসাধারণ ক্যারিয়ার। তাকে টিভি পর্দায় কম দেখা গেলেই ধরে নেয়া হয় তিনি মাঠে। স্বামী ইংল্যান্ড তারকা ওয়েইন রুনিকে উৎসাহ দিচ্ছেন। দর্শকরা সেটা টের পান। কারণ সেই দৃশ্যও তারা টিভিতেই দেখেন। দু’ সন্তানের এই জননীর টুইটার অনুসারী ১১ লাখ। তদুপরি স্বামী ওয়েইনের টুইটার ভক্তদেরকেও তিনি উত্তর দেয়ার সময় খুঁজে পান।
মান্দি ক্যাপরিস্তো বিখ্যাত না হতে পারেন শাকিরার মতো। তবে তাঁকে একজন নিবেদিত ‘ওয়াগ’ মনে করা হয়। ফেসবুক টুইটারে ভীষণ সক্রিয়। তিনি কেবল নিজেরই নন। দু’টো অ্যাকাউন্ট ফলো করেন তিনি। একটি তাঁর, অন্যটি? তিনি আর্সেনাল জার্সি পরিহিত মেসুত ওজিল। ওজিলের জার্সি গায়ে নিজের সেলফি তুলে পোস্ট করা তাঁর অন্যতম শখ।
ক্রিস্টিন লুইস ব্লিকলি তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন উত্তর আয়ারল্যান্ডে সংবাদপাঠিকা হিসেবে। তিনি অবশ্য এখন টিভি হোস্ট হিসেবে সক্রিয়। বিষয়ের কোন বাছবিচার নেই। ‘ড্যান্সিং অন আইস’ও আছেন। আবার ‘দ্য ভয়েস ইউ.কে.’তেও আছেন। তিনি ইংল্যান্ডের ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের বান্ধবী।
সারা কারবোনেরো দৃষ্টিনন্দিত ওয়াগদের একজন, তবে পেছনের সারির স্পেনিশ ক্রীড়া সাংবাদিক। তার বয়ফ্রেন্ড ইকার ক্যাসিয়াস। বেচারা ক্যাসিয়াসকে ২০১০ সালের বিশ্বকাপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খেলায় গরহাজির থাকতে দেখা গেছে। অনেকেরই ধারণা এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন তার বান্ধবী। উভয়ে পরে অবশ্য দূরত্ব ঘুচিয়েছেন। এখন তাদের বন্ধুত্ব রমরমা। আর সে কারণেই মনে করা হয় গোলরক্ষক হিসেবে ইকারের নিশানা হবে অব্যর্থ। স্পেনের দীর্ঘকালীন গোলরক্ষক ইকার ও সারা প্রথম খবরের শিরোনাম হন চুমু খেয়ে। ২০১০ সালে কাপ বিজয়ের পরে লাইভ টিভি অনুষ্ঠানে ক্যাসিয়াসকে তিনি চুমু খেলে হৈচৈ পড়ে যায়। অবশ্য একই বছরে সারা অভিযুক্ত হন যখন গ্রুপ খেলার পর্যায়ে সুইজারল্যান্ডের কাছে ইকারের দল ০-১ গোলে হেরে যায়। ব্রাজিলে সারা ২০০৯ সালে বিশ্বের সেক্সিয়েস্ট রিপোর্টার হিসেবে খেতাব কুড়ান। তিনি যে এবারেও ব্রাজিলের অন্যতম আকর্ষণ হবেন তাতে আর সন্দেহ কি। গত জানুয়ারিতে তিনি এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছেন।
ওয়াগদের এলিট টিমে সর্বশেষ যিনি নাম লিখেয়েছেন তিনি গ্যাব্রিয়েলা লেনজি। ব্রাজিল দলের সুপারস্টার নেইমারের সঙ্গে সাও পাওলো বংশোদ্ভূত সুপারমডেল গ্যাব্রিয়েলার দহরম-মহরম শুরু সাম্প্রতিক। যখন নেইমারকে ভাবা হচ্ছে প্রিন্স অব ব্রাজিল। তখন কাপ জিতলে গ্যাব্রিয়েলা নিশ্চয় প্রিন্সেস বনে যাবেন।
আন্তোলিনা রকুজো একটা মস্ত ব্যতিক্রম বটে। চারদিকে যখন চোখধাঁধানো সব আয়োজন, ফটো সেশন, হৈচৈ ক্যামেরের মুুহুর্মুহু ফ্লাশ তখন একজনই অনবদ্য সুন্দরী আছেন যিনি এ থেকে যতটা সম্ভব পালিয়ে বেড়ান। তিনি বিশ্বসেরা হার্টথ্রব লিওনেল মেসির বান্ধবী আন্তোলিনা। ওয়াগদের ভিড়ে তিনি নেই। ২৬ বছর বয়ষ্ক পুষ্টিবিদ্যার এই ছাত্রী মেসির জীবনে লেপ্টে আছেন ছয় বছর হয়ে গেল।