নির্বাচনী প্রণয় থেকে পরিণয় অতঃপর ধর্ষণ মামলা
ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের সূত্রে পরিচয় থেকে প্রণয় তারপর পরিণয় অতঃপর ধর্ষণের অভিযোগে আইনজীবী নজরুল ইসলাম ভূইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একই বারের এক নারী আইনজীবী।
সোমবার ঢাকার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারক এনামুল হক ভুইয়া সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার নথি হতে জানা যায়, ২০১০-১১ সালের ঢাকা বারের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সদস্য পদে প্রার্থী হন। সেসময় ভোট চাইতে চেম্বারে গিয়ে বাদীনির সঙ্গে তার পরিচয়। এসময় অ্যাডভোকেট নজরুল তাকে তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে অনুরোধ করলে তিনি রাজি হন এবং প্রচারণার কাজে নেমে পড়েন। এভাবেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয় এবং এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা থেকে প্রণয়ে গড়ায়।
মন দেয়া-নেয়ার সময়ই অ্যাডভোকেট নজরুল বারবার দৈহিক মেলামেশার প্রস্তাব দেন কিন্তু বাদিনী তা প্রত্যাখ্যান করেন। শেষ পর্যন্ত বিয়ের প্রণোভন দেন নজরুল। কিন্তু ওই নারী আইনজীবী বিয়ের আগে এ ধরনের সম্পর্ক সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন।
এরপর গত বছরের ১০ অক্টোবর সাভার নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে রাসেল ও সুমন নামে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে একজন মৌলভি তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেন। তবে বিয়েতে কোনো কাবিন রেজিস্ট্রি হয়নি বলে মামলার নথি থেকে জানা যায়।
তখন থেকে নজরুল ও বাদীনি স্বামী-স্ত্রীর মতোই মেলামেশা করতে থাকেন। কিন্তু নানাভাবে টালবাহানায় স্ত্রীকে ঘরে তোলেননি নজরুল।
এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বাদীনি নজরুলের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হলে কাবিননামা রেজিস্ট্রি করার কথা বলে তাকে সাভার নিয়ে যান নজরুল। কিন্তু সেখানে গিয়ে মোবাইল ফোনে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানান যে মৌলভি নেই।
এসময় বাদীনি কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে গাজীরচট মধ্যপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে গিয়ে মসজিদ দেখিয়ে বলেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করো না, এই যে, মসজিদ, আল্লাহর ঘরকে বিশ্বাস করো, চল আল্লাহর ঘরকে সাক্ষী করে এখনই তোমাকে আবার বিয়ে করবো।’ সেখানে ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহিম হেলালের মাধ্যমে পুনরায় ৩ জন সাক্ষীর মাধ্যমে আবার বিয়ে করেন। তবে এবারও কৌশলে কোনো কাবিন রেজিস্ট্রি করা হয় না।
তবে মেলামেশা চালিয়ে যেতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে বাদিনী গর্ভবতী হয়ে পড়লে আসামিকে বিষয়টি জানান। কিন্তু আসামি তার সঙ্গে বিয়ে ও মেলামেশার কথা অস্বীকার করেন এবং গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন।
ঘটনা জানতে পেরে বাদীনিকে তার বাবা-মা বাসা থেকে বের করে দিলে তিনি খালার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। আসামি ওই বাসায় গিয়েও তাকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন।
অবশেষে কাবিননামা রেজিস্ট্রি করার শর্তে গর্ভপাত করাতে রাজি হন বাদিনী।
গত ১ মার্চ আসামি বাদীনিকে নিয়ে আদদ্বীন হাসপাতালে গেলে আলট্রাসনোগ্রাফ করার পর ডাক্তার তাকে গর্ভপাত করার ঝুঁকি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করেন। এরপর আসামি বাদীনিকে নিয়ে মুক্তি ম্যাটানির্টিতে নিয়ে গেলে সেখানেও একই ঝুঁকির কথা শুনে বাদীনি সেখান থেকে ভয়ে বেরিয়ে যান। এরপর আসামি তাকে রাস্তায় একা ফেলে চলে যান।
এরপর বাদীনি গত ১৫ মে বিষয়টি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে জানালে গত ২৯ মে উভয়পক্ষকে একটি মীমাংসা বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওই বৈঠকে বাদীনি উপস্থিত হলেও আসামি উপস্থিত হননি। অতঃপর বাদীনি অনন্যোপায় হয়ে মামলা দায়ের করেন।