প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সেই সচিবের লিজ বিতর্ক; মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আওয়ামী লীগ এমপির
নরসিংদীর মনোহরদীতে সরকারি গণশৌচাগার ভেঙে বেনামে জমি বরাদ্দ নিয়েছেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান। স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে কাজ বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সাবেক এই সচিব। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের এ কাজে আপত্তি জানানোয় মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থ্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন। মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের সৈয়দের গাঁও। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ছিলেন তিনি।
উপজেলা প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা জানান, নরসিংদী জেলার কয়েকটি বাজারের মধ্যে হাতিরদিয়া অন্যতম। বাজার মসজিদের পার্শ্ববর্তী দেড় শতাংশ সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ বাতিল করে ওই জায়গায় গড়ে তোলা হয় গণশৌচাগার। দীর্ঘদিন পর ২০১২ সালে গণশৌচাগারটি ভেঙে কিছুটা দূরে নদীর পাড়ে নতুন গণশৌচাগার নির্মাণ করে। কিন্তু যাতায়াতের সড়ক না থাকায় তা বাজারের ব্যবসায়ীদের কোনো উপকারে আসছে না। এদিকে দীর্ঘদিন ব্যবসা করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গণশৌচাগার নির্মাণ এবং বাজার কমিটি মার্কেট নির্মাণের জন্য জমিটি বরাদ্দের আবেদন করে। জমিটির অবস্থান বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হওয়ায় এতে দৃষ্টি পড়ে মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের পরিবারের। বিষয়টি বাজার কমিটির নেতারা জানতে পেরে স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়নের দ্বারস্থ হন। এমপি হুমায়ন বাজার কমিটিকে জমিটি বরাদ্দের নির্দেশ দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন এমপির নির্দেশ উপেক্ষা করে আকরাম হোসেন, শাহজাহান আফ্রাদ ও মাহফুজুর রহমান নামের তিন ব্যক্তিকে জমিটি বরাদ্দ দেয়। এদের মধ্যে আকরাম হোসেন হচ্ছেন মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের বাড়ির কেয়ারটেকার। আর আকরাম হোসেনের নিকটাত্দীয় শাহজাহান আফ্রাদ। বরাদ্দ পাওয়া মাহফুজুর রহমান হচ্ছেন মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের ছোট ভাই মোল্লা তারেকুজ্জামান তারেকের বন্ধু। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ জায়গায় আমরা ব্যবসা করে আসছি। গত ঈদে এখানে দোকান বসালে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।’ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মোল্লা ফারুক বলেন, ‘বাজার কমিটির পক্ষ থেকে জমিটি বরাদ্দ চাওয়ায় ইউএনও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিষয়টি এমপিকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন ইউএনও। একই সঙ্গে তিনি বিধি ভেঙে বেনামে সচিবকে ওই জমি বরাদ্দ দেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।’ তবে লিজগ্রহীতা শাহজাহান আফ্রাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সচিব সাহেব আমার নামে সরকারি জমি লিজ এনেছিলেন। কিন্তু পরে ওই জমির দখল নিতে পারব না বলে সচিব সাহেবের ছোট ভাই তারেক মোল্লা তা লিখে নেন।’
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জমি বরাদ্দে ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাউকে খুশি করার জন্য নয়, বিধি মোতাবেক ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন বলেন, সচিবের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইউএনও। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের খেয়ালখুশিমতো কাজ করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
এই ব্যাপারে জানতে মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের ছোট ভাই মোল্লা তারেকুজ্জামান তারেক বলেন, ‘যারা বরাদ্দ পেয়েছেন তারা আমার পরিচিত। কিন্তু আমি বা আমার পরিবারের কেউ কোনো সরকারি জমি বরাদ্দ নিইনি।’ বরাদ্দপ্রাপ্ত শাহজাহানের কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।