রিমান্ডে জামাই আদরে তারেক সাঈদ
নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নেপথ্যে জড়িতদের আড়াল করতেই বেশি ব্যস্ত তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। নির্মম এই সাত খুনের ঘটনায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও মূল হোতা নূর হোসেনসহ এজাহারভুক্ত আসামীরা এখনও অধরা। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে র্যাবের সাবেক দু’জন কর্মকর্তা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও রিমান্ডে জামাই আদরে সময় কাটছে র্যাব-১১ এর সাবেক সিইও লে. কর্নেল (অবঃ) তারেক সাঈদের। গত ৯ মে তাকে ৫ম দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। যেখানে সাত খুনের ঘটনায় তারেক সাঈদের দুই সহযোগী নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং তারেক সাঈদ নিজেই পুরো অপহরণ ও হত্যাকান্ডের তদারকি করেছেন বলে জবানবন্দীতে উঠে এসেছে। সেখানে কোন খুঁটির জোরে এখনও জবানবন্দী থেকে তিনি বিরত রয়েছেন দেশবাসীর মতো সেই প্রশ্ন নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও। গত ৯ মে রিমান্ডের শুনানীর সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট কেএম ফজলুর রহমান রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, দু’জন আসামী ইতিমধ্যে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে আসামী তারেক সাঈদের নাম উঠে এসেছে। সাতজনকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করা পর্যন্ত আরিফ হোসেন, এমএম রানা ও নূর হোসেনের সঙ্গে ২৩ দফা কথা হয়েছে তারেক সাঈদের। তাছাড়া সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় তারেক সাঈদ পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাপক তথ্য দিয়েছেন।
একই যুক্তি তুলে ধরে আসামী পক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তিন র্যাব কর্মকর্তা নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭জনকে অপহরণ ও হত্যাকা- ঘটিয়েছে। দুই র্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও এমএম রানা হত্যাকা-ের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তারা আদালতে আরও বলেছে, তারেক সাঈদের নির্দেশে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যাকা- সংঘটিত করেছেন।
২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড থেকে সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭জনকে অপহরণ করা হয়। ৩০শে এপ্রিল ৬ জন ও ১লা মে একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে অপহরণের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫ই মে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এমএম রানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৬ই মে রাতে ক্যান্টমেন্ট থেকে লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৭ই মে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২২শে মে তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫জনকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৮ দিন রিমান্ড শেষে ৩০শে মে তারেক সাঈদ ও আরিফকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে আরিফ হোসেন ও এমএম রানা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, ৭ খুনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত র্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত দুই কর্মকর্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর পরে রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। জবানবন্দীতে যাদের নাম এসেছে তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনসহ এজাহারভুক্ত সব আসামীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কাউকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হলে আইনজীবীরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।