তিন ঘণ্টা ক্ষুধায় ছটফট করে ঘুমিয়ে পড়ে স্কুলশিক্ষিকার ৫ মাসের শিশু
কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাবুর সরকার বাড়ি ১০২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তার শিশুসন্তানকে দুধ খাওয়ানোর অপরাধে শাস্তি পেল তারই ৫ মাসের শিশুসন্তান সাইয়ারা জান্নাত লাবিবা। সোমবার দুপরে কাপাসিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ স্কুল পরির্দশনে গিয়ে এ শাস্তি দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ এ ঘটনা অস্বীকার করেন এ প্রতিনিধির কাছে। এ শাস্তি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ১০২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মুসলিমা আক্তার সুইটি গত ৫ মাস আগে কন্যাসন্তান জন্মদান করেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে তিনি ৪ মাসের মাতৃকালীন চিকিৎসা ছুটি ভোগ করেন। ছুটি শেষে তিনি তার কর্মস্থল পাবুর সরকাীি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কিন্তু তার শিশু সন্তান নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসেন। তিনি ১৫শ টাকা মাসিক বেতনে একজন আয়াকে তার শিশুকে স্কুলের পাশে লালন পালন করার জন্য দায়িত্ব দেন। আয়া প্রতিদিন সকালে তার শিশুকে নিয়ে যায় এবং শুধু দুধ খাওয়ানোর জন্য মাঝে মাঝে নিয়ে স্কুলে আসেন। স্কুলের একটি অব্যহৃত একটি রুমে শিশুকে দুধ খাওয়ান। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুরে হঠাৎ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে হাজির হন। তিনি স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে তার বাচ্চার দুধ খাওয়ানো দেখে রেগে যান। তিনি চিৎকার করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন এটা কি বাচ্চা পালনের স্কুল, স্কুলে কখনো বাচ্চা নিয়ে আসতে পারবে না । তিনি প্রধান শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে খাকেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তার শিশু সন্তানকে আয়ার কাছে দিয়ে দেন। তার পরও শিক্ষা অফিসার ক্ষান্ত হননি। প্রধান শিক্ষককে বিভিন্ন অজুহাতে তিরস্কার করতে থাকেন। এদিকে পরিদর্শনের সময় স্কুলে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা অবস্থানের কারণে প্রধান শিক্ষকের ৫ মাসের শিশু লাবিবা ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এমন দৃশ্য দেখে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা হতবাক হয়ে পড়েন। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এর আগে তিনি কাপাসিয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষকদের সাথে অশুভ আচরণের অভিযোগের কারণে তাকে অনত্র বদলি করা হয়েয়েছিল বলে জানা যায়।
এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের এ অমানবিক আচরণে কাপাসিয়া উপজেলা নারী কল্যাণ সমিতি, উপজেলা দুস্থ নারীকল্যাণ সংস্থা, উপজেলা প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন এর নিন্দা জানিয়ে দোষী শিক্ষা অফিসারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এমন ঘটনা তো অমানবিক এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।
এসব বিষয়ে জানতে কাপাসিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শামীম আহম্মেদের সাথে তার অফিসে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমি গতকাল পাবুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যাই এবং স্কুলে কিছু অনিয়ম দেখতে পেলে প্রধান শিক্ষককে আরো দায়িত্বশীল হওয়া পরার্মশ দেই এবং ভবিষতে এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে সর্তক করে দেই।