আতঙ্কে দিন কাটছে সীমান্তবাসীরশ্রীবরদীতে বন্য হাতির আক্রমণে ১ জন নিহত
রোম্মান আরা পারভীন রুমী: শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্তে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে বন্য হাতির আক্রমণে ১ নিহত হয়েছে। নিহত ওমেছা বেগম (৪২) সিংগাবরুনা ইউনিয়নের চান্দা পাড়া গ্রামের মৃত ছাইদুর রহমানের স্ত্রী।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেশ কয়েকদিন থেকে শ্রীবরদী সীমান্তে কয়েকশত হাতি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে লোকালয়ে হামলা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে গ্রামবাসী বন্যহাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে রাস্তায় আগুন জ্বালায়। এ সময় হাতির দল আক্রমণ করে চান্দা পাড়া গ্রামের মৃত ছাইদুর রহমানের স্ত্রী ৫ সন্তানের জননী ওমেছা বেগমকে পায়ের তলায় পিষ্ট করে মেরে ফেলে। খবর পেয়ে সকালে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবা শারমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।উল্লেখ্য গত শনিবার সন্ধায় রাণীশিমুল ইউনিয়নের বালিজুরি গ্রামে বন্য হাতির আক্রমণে ইরফান (২২) নামে ১ জন গুরুত্বর আহত হয়েছে।জানা গেছে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতে মেঘালয় প্রদেশের সীমান্ত ঘেষেঁ অবস্থিত জনপদ শ্রীবরদীর কর্নজোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও,বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গাাজল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা পাচমেঘাদল, গারোপাড়াসহ ১২টি গ্রাম প্রতিবেশী বকশীগঞ্জের গারো পাহাড়ের সাতানিপাড়া, গারোপাড়া বালুঝরি, টিলাপাড়া,লাউচাপড়া, ডুমুরতলা, দিগলকোনা,হাতিবেড়কোনা,শোকনাথপাড়া, কনেকান্দি,চন্দ্রপাড়াসহ ১৩টি গ্রামে বাঙালী ও হিন্দু গারো কোচ হাজংসহ বিভিন্ন গোত্র মিলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। উল্লেখিত এলাকায় বাংলাদেশে ও ভারতের ভূখন্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপোকৃত সমতল। ভারতের গহীন বনাঞ্চল রয়েছে অগনিত বুনো হাতি। হাতি দল বেধেঁ সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও আহার করতে সহজ মনে করে থাকে। তাই সময় অসময়ে বুনো হাতির পাল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওইসব সমতল বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষিপ্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত বাড়িঘর ফসলাদি জমি ও বিভিন্ন বাগানে প্রবেশ করে ধ্বংসলীলা চালায়। গত ১৫ বছর ধরে এসব বুনো হাতি তান্ডবলীলা চালিয়ে সীমান্তবর্তী উল্লেখিত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে কয়েক’শ ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমির ধান শাকসবজি ফসল খেয়ে এবং বাগানের গাছপালা দুমড়ে মুচড়ে সাবাড় করে চলেছে। বুনো হাতির আক্রমনে বালিজুরি গ্রামের হামির উদ্দিন, বাবুল মিয়া, খ্রিষ্টানপাড়া গ্রামের ষ্টারসন,ঝুলগাও গ্রামের মজিবর ,সিরাজ,হাতিবর গ্রামরে বৃন্দাবন দাস, মাখনেরচর গ্রামের হাসান, হাবিব বাঘারচর গ্রামের আবু তালেবসহ অর্ধশতাধিক মানুষের প্রানহানি ঘটেছে। কয়েকশত মানুষ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কমপে ১৫ জন পঙ্গুত্ব বরন করে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে কয়েক’শ পরিবার। ঝুলগাও গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ,শাহজাহান ফিলিপ মারাকসহ অনেক গ্রামবাসীরা জানায় বুনো হাতি ঢাকঢোল ফটকা ও আগুনকে ভয় করে থাকে। তাই এলাকাবাসী মশাল ও বন থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা জ্বালিয়ে হৈ হুলোড় করে বাশঁ দিয়ে ফটকা বানিয়ে ঢাকঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানো চেষ্টা করেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে ওইসব কৌশলও করতে পারছে না পাহাড়িরা। ফলে বুনো হাতির পাল বিনা প্রতিরোধে গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের তিসাধন করে থাকে। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে এবং পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করে। ুধা, দারিদ্র্য, অশিা, অস্বাস্থ্য, বঞ্চনা তাদের নিত্যসঙ্গী। এর ওপর প্রায় বন্যহাতির আক্রমণে দিশেহারা করে দিয়েছে তাদের। হাতির আতংকে এমনিতেই অনেক জমি পতিত থাকছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করলেও সে ফসল তারা ঘরে তুলতে পারছে না। প্রতিদিন সন্ধা নামার সাথে সাথে দলবেধে নেমে আসছে ধানী জমিতে। খেয়ে সাবাড় করছে পাহাড়িদের কষ্টের আগাম জাতের পাকা ধানতে। আক্রমন করে বসছে বসত বাড়িতে। ফলে পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলো হাতির সাথে যুদ্ধ করে করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বন্যহাতির সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের হস্তপে কামনা করছেন সীমান্তবাসী। শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন দুলাল বলেন, বন্য হাতির আতঙ্কে সীমান্তবাসীরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে মৃত্যু ও স্থায়ী পঙ্গুত্বের সংখ্যা। তিনি এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা ও অসহায় মানুষের জান মাল রক্ষার্থে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য কামনা করেছেন।