আর্জেন্টিনাকে চোখ রাঙাচ্ছে বসনিয়া!
হোক নিজের দেশ ফেবারিট। নেইমার, ফ্রেড, অসকার, আলভেস, সিলভারা যেখানে আলো ছড়াবেন। তাই বলে আরেক বিশ্বসেরা মেসির দেশ মাঠে নামবে, আর সেখানে সমর্থন থাকবে না, তা তো হয় না। কাল রিও ডি জেনিরো মাতাবেন মেসি, আগুয়েরা, হিগুয়ের, ডি মারিয়ারা। বসনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ শুরু করবে ম্যারাডোনার দেশ।
এবারের বিশ্বকাপে বসনিয়া হার্জেগোভিনা নবাগত। তবে যোগ্যতা দিয়েই তারা ব্রাজিলের টিকিট পেয়েছে। প্রথম ম্যাচে অঘটন ঘটিয়ে সাফেত সুসিচের শীষ্যরা ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। দ্রুত সময়ে অভূতপূর্ব উন্নতি করে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২১ এ অবস্থানই তা প্রমাণ করে। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বীদের র্যাঙ্কিং ৫। আর্জেন্টিনা এখানে আঁটসাট বেঁধেই এসেছে। কোন প্রতিপক্ষকে সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয় আলেক সান্দ্রো সাবেলার ছাত্ররা। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ ‘র চ্যাম্পিয়নরা সর্বশেষ ১৯৯০ সালে রানার্সআপ তকমা পরেছে। এর আগে আর একবার তারা রানার্সআপ হয়েছিল ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে। গত ৫ আসরের তিনবার কোয়ার্টার ফাইনাল, একবার করে প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড উতরাতে পারেনি। গত ৫টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি ম্যারাডোনার দল আর্জেন্টিনা। রিও ডি জেনেরিওতে আসা আর্জেন্টাইন সমর্থকরা বলছেন, ব্রাজিল যেভাবে উড়ন্ত সূচনা করেছে। আমরা রিওতে সেভাবে একটা স্মরণীয় জয় তুলে নিতে চাই।
২৮ বছর পর এবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া ম্যারাডোনার উত্তরসূরী ‘লা আলবিসেলেস্তেরা’। বিশ্বসেরা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি দলের অধিনায়ক। ফেবারিটের মতই শুরু করতে চায় তারা। একবার বাদে অংশ নেয়া সবগুলো আসরের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে নীল-সাদারা। এবারো হয়তো তার ব্যত্যয় হবে না। অবশ্য জয় আসলেও তা সহজে হবে না বলেই মনে হচ্ছে। সাম্বার দেশে পা রেখেই অনুশীলনে রত নবাগতরা। আছেন বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়। স্ট্রাইকার এডেন জেকো, এমির স্পাহিচ, মিরালেম পিয়ানিচরা। ইউরোপিয়ান বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন বেশিরভাগ ফুটবলার। এডেন জেকো গত মৌসুমে ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন আস্থার ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়ে ৬২ ম্যাচে ৩৫ গোল করে দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। তার সাথে অন্যরাও যে উজ্জীবিত ফুটবল খেলবেন না তা বলা ঠিক হবে না। তাই সতর্ক হয়েই মাঠে নামতে হবে সাবেলার শীষ্যদের।
কিছুদিন আগেও যেখানে কামানের গুলি, বোমার শব্দ ছিল নিত্যসঙ্গী। অস্ত্র আর গোলাবারুদের মধ্যে শিশুরা বড় হয়েছে। কাটাতে হয়েছে বিনিদ্র রজনী। ৪০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি দিনরাত যুদ্ধ করে ১৯৯২ সালে যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। এ জন্য কত রক্ত যে দিতে হয়েছে তার হিসেব নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত সে দেশটিই ফুটবল বিশ্বে সবার নজর কেড়েছে। বিশ্বকাপে তারা অভিষেক ঘটাতে যাচ্ছে কাল। তারকাখচিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে ফুটবল বিশ্বে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে দ্যা ড্রাগনস। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লিচেনস্টাইন, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, লিথুয়ানিয়া ও গ্রীসকে হারিয়ে জি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। মাত্র ৫১ হাজার ১৯৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট দেশটির লোকসংখ্যা ৩৯ লক্ষ। অতি অল্প সময়ে অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ফুটবলে তারা এগিয়ে গেছে।
মারাকানার মাঠে আজেন্টিনার অগ্নিমূর্তির সামনে বসনিয়া কতটুকু দাঁড়াতে পারবে তা অবশ্য পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত বসনিয়া দুইবার ফেবারিটদের মুখোমুখি হয়েছে। একটি গোলও শক্তিশালী প্রতিপক্ষের জালে জড়াতে পারেনি। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ০-৫ এবং গত বছরের নভেম্বরে ০-২ গোলে হারের তেঁতো স্বাদ নিয়েছে তারা। এখন দেখার বিষয়, পরিসংখ্যানে এবার কি যোগ হচ্ছে! বাংলাদেশ তো বটেই, সারাবিশ্বের মেসিভক্ত আর আজেন্টিনা সমর্থকরা ম্যাচটি উপভোগ করতে মিস করবেনই না। ব্রাজিল সমর্থকরাও ম্যাচের উপর চোখ রাখবেন সেটা সহজেই অনুমেয়।