স্থবির বিএনপি তৃণমূলে ক্ষোভ
স্থবির হয়ে পড়েছে বিএনপি। দলে কোন কর্মসূচি নেই। এ নিয়ে তৃণমূলে বিরাজ করছে ক্ষোভ-হতাশা। দলগুছানোর নামে জেলা পর্যায়ের অনেক সফল কমিটি ভেঙ্গে দেয়ায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত আরও বেড়েছে। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ একটি চক্র বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দীর্ঘদিন ধরে ঘিরে রেখেছে। এই চক্র বা বৃত্ত ভেদ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জনমনের আশা-আকাক্সক্ষার কথা চেয়ারপার্সনের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
অনেক জেলা পর্যায়ের নেতা বছরের পর বছর চেষ্টা করেও দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এর ফলে তৃণমূল নেতাদের সাথে চেয়ারপার্সনের বিশাল দূরত্বও সৃষ্টি হচ্ছে। চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের কয়েকজন এবং দপ্তরের দায়িত্বে থা
কা দু’একজন এই চক্রের সদস্য। এই চক্রটি সরকারের তথা আওয়ামী লীগের গুপ্ত চর হিসেবেও কাছ করছে বলেও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতার দাবী। এই চক্রই এখন দলগুছানোর নামে তাদের পছন্দ মতো বিভিন্ন জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে একটি বিশৃংল পরিস্থিতি তৈরী করছে। এতে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্দোলন কর্মসূচী না থাকার ফলে সাংগঠনিক স্থবিরতার পাশাপাশি দলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দলকে গতিশীল এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে হলে কর্মসূচীর কোন বিকল্প নেই।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক পিয়াস করিম এ বিষয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলের আন্দোলন কর্মসূচী না থাকলে তাতে সাংগঠনিক স্থবিরতা আসবে এটাই স্বাভাবিক। এর পাশাপাশি নেতাদের মধ্যে তখন পদপদবী দখলের জন্য দ্বন্দ্ব-সংঘাতও বেড়ে যাবে। কাজেই দলের কর্মকা-কে গতিশীল করতে এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে হলে কর্মসূচীর
কোন বিকল্প নেই। সে কর্মসূচী সেমিনার সিম্পোজিয়াম বা পরস্পরের মধ্যে আলোচনা বা মতবিমিয়ের মতো ঘরোয়াও হতে পারে আবার রাজপথেরও হতে পারে। কর্মসূচী ছাড়া রাজনৈতিক দলকে গতিশীল রাখার অন্য কোন উপায় নেই।
গত ৫ জানুয়ারীর এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে তৃণমূল পর্যায়ের ব্যাপক সাফল্যের পরও দল পুনঃগঠনের সিদ্ধান্ত নে
য় বিএনপি। তখন তৃণমূলের নেতাদের সাথে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর দলকে ঢেলে সাজানোর নামে জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন শুরু করে। এতে প্রায় প্রতিটি জেলায়ই বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সর্বত্র শুরু হয় সমালোচনা। এর পরে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ওই চক্রটি জেলা কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করে। তারপরও যে সব জেলা কমিটি ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলোতে এখন দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে নেত্রকোনা জেলা, সুনামগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে কমিটি গঠন নিয়ে সংঘাত সংঘর্ষ লেগে আছে।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দু’একজন নেতাদের ব্যক্তি দ্বন্দ্বের কারণেও অনেক জেলায় বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে। দলের ভারপ্রপ্ত মহাসচিব এবং রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সংম্পাদককে ব্যর্থ প্রমাণ করতে সম্প্রতি ঘোষিত রংপুর জেলা কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। তাতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দ’একজন নেতা ইন্ধন দিচ্ছে বলেন জেলা পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুমোদিত রংপুর জেলা বিএনপির ১০১ সদস্যের নতুন কমিটি তারুণ্য নির্ভর। এ কমিটি আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে যথাযথ ভূমিকা রাখবে এমনটাই মনে করেন রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি কমিটি সম্পর্কে বলেন, দীর্ঘদিন পর রংপুর জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছে। দলের সুযোগ্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে একটি চমৎকার কমিটি উপহার দিয়েছেন। এ কমিটি আগামী দিনে দলকে রংপুরে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার ফলে অনেক নেতাকর্মী হয়তো তাদের কাক্সিক্ষত পদ পদবী পাননি। এতে সাময়িক কিছুটা অসন্তোষ কারো কারো মধ্যে থাকলেও তা শিগগিরই দূর হয়ে যাবে। এদিকে সাতক্ষীরা বিএনপির কমিটি নিয়েও দ্বন্দ্ব এখন চরমে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের সাথে পরামর্শক্রমে বেশ কিছুদিন আগে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম চূড়ান্ত করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির দু’একজন নেতা তাদের আধিপত্য জাহির করতে এ কমিটি নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে। যার ফলে আজ পর্যন্ত জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ কারণে সাংগঠনিক কর্মকা-ে ব্যাপক স্থবিরতা নেমে এসেছে। নেতাকর্মীরাও হচ্ছে হতাশ। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি রহমতউল্লাহ পলাশ নিজেই তার হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি না হওয়ার কারণে দলীয় কর্মকা-ে গতিশীলতা আসছে না। নেতকর্মীরাও এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। দলীয় কর্মকা-ে গতিশীলতার জন্য দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রয়োজন। – See more at: http://www.dailyinqilab.com/2014/06/15/185886.php#sthash.8Ap7MCD2.dpuf