কিডনি হাসপাতালের সেই ডাক্তার! যৌন হয়রানি থেকে সহকর্মী নার্স রোগী কারও নিস্তার নেই
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (এনআইকেডিইউ)-এর এক ডাক্তারের রহস্যময় কর্মকাণ্ডে ডাক্তার, রোগীসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি যা ইচ্ছে তাই করেন। তার যৌন হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ। সহকর্মী ডাক্তার, নার্স, রোগী এমনকি রোগীর স্বজনরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারি চাকরি করেও তিনি যখন তখন ঘুরে বেড়ান বিশ্বময়। ঢাকায় বাসা-বাড়ি, কর্মস্থল থাকলেও তিনি রাত যাপন করেন শেরাটন কিংবা সোনারগাঁও হোটেলে। আমেরিকা, কানাডায় হাজার হাজার মার্কিন ডলার খরচ করে বিলাসী জীবনযাপন করে থাকেন। বিদেশে যেতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেন না তিনি। আবার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলে তিনি ঘুরে বেড়ান লন্ডন, জাপান। কর্মস্থলে হাজিরা খাতায় সই চললেও তিনি মাসের পর মাস ঘুরে বেড়ান দেশের বাইরে।
বহুল বিতর্কিত দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যক্তিটি হচ্ছেন ওই হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক। অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি অপরাধ করেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। এই সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানে গরহাজির থাকা, সহকর্মী থেকে শুরু করে বিভাগীয় প্রধান এমনকি প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের সঙ্গেও চরম দুর্ব্যবহার করা, রোগীদের সঙ্গে হুমকি-ধমকির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ৫২ বছর বয়সী এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে যৌন হয়রানির। তার সহকর্মী ডাক্তার, নার্স, গবেষণা কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, রোগিণী ও তার নারী স্বজনরাও তার যৌন থাবার শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত একজন গৃহবধূ চিকিৎসা নিতে এলে তার সঙ্গে আগত নারী আত্দীয়কে তিনি সরাসরি আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। এতে প্রতিবাদ করায় রাতেই রোগীসহ ওই নারীকে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি নিয়ে কোনোরকম বাড়াবাড়ি না করার জন্যও উপর্যুপরি হুমকি দিতে থাকেন তিনি। উপায়ন্তরহীন যৌন হয়রানির শিকার ওই মহিলা শেরেবাংলা নগর থানায় গত ৪ মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করতে বাধ্য হন। রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে আরও অনেক নারী নানাভাবে ওই ডাক্তারের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সামাজিক অবস্থান ও নিজেদের মানসম্মানের কথা ভেবে তারা থানা পুলিশ এড়িয়ে গেলেও হাসপাতাল প্রধানের কাছে অভিযোগ করেছেন। কোনো অভিযোগেই কিছু হয় না এই ডাক্তারের। বরং তার হুমকি-ধমকিতে অভিযোগকারীরাই উল্টো আতঙ্কে রয়েছেন। এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও হুমকি প্রদান সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ রয়েছে শেরেবাংলা নগর থানায়। এর আগে রমনা থানাতেও একই ধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ হলেও তার বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। ভুক্তভোগী কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করামাত্র তিনি আগাম জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তেই অপকর্ম চালিয়ে যান।
সম্প্রতি সহকর্মী এক নারী ডাক্তারকেও যৌন হয়রানিসহ নানাভাবে নাজেহাল করে চলছেন তিনি। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আরেকজন মহিলা ডাক্তার চরম বিপাকে পড়েছেন। ভুক্তভোগী ওই মহিলা ডাক্তার জানান, অভিযুক্ত ডাক্তারের অবৈধ প্রস্তাবে রাজি না হলে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিডনি হাসপাতালে তিনিই হচ্ছেন সর্বেসর্বা। তার মতের বাইরে বিভাগীয় প্রধানরাও টুঁ শব্দটি করতে সাহস পান না। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কোন খুঁটির জোরে তিনি কিডনি হাসপাতালের দাপটশালী হয়ে উঠেছেন? তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয় না? এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাবি্বর আহমেদ জানান, অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক নারী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বর্তমানে ওই মামলায় তিনি জামিনে আছেন। রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।