নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের আদালতে প্রেরণ
নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ও তাঁর তিন সহযোগী কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু (দমদম) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন কৈখালী এলাকা থেকে কলকাতা পুলিশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী শাখা তাঁদের গ্রেপ্তার করে। কলকাতার বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার অনিষ কুমার সরকারের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
অভিযানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আজ রবিবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের আদালতে হাজির করা হতে পারে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নূর হোসেদেনর কাছ থেকে গুলিভর্তি একটি রিভলবার, বাংলাদেশ ও ভারতের ১০টি মোবাইল সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ, সিডি ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। নূর হোসেন ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য তিন ব্যক্তি হলেন আশিক, সুমন ও শামীম। ইন্টারপোলের সহায়তায় গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে কৈখালী এলাকার এ ব্লকের ইন্দ্রপ্রস্থ নামের একটি ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বাগুইহাটী থানায় রাখা হয়েছে। চিকিৎসার নাম করে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়ার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে
স্বীকার করেছেন নূর হোসেন। সাত খুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মন্ডল বলেন, নূর হোসেন ও তাঁর তিন সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি।
তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নূর হোসনসহ গ্রেপ্তারকৃতদের দেশে ফেরত আনতে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আজ থেকে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। যত শিগগির সম্ভব তাঁদের দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আশিক সাত খুন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। অপহরণের পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও তিন দিনের মাথায় শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠার পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। নূর হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে নজরুলসহ সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১১-এর তখনকার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাকে অবসরে পাঠানো হয়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আরিফ ও রানা ওই ঘটনায় তাঁদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন। নূর হোসেনের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের বিনিময়ে তাঁরা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেন। তবে ঘটনার পর থেকেই নূর হোসেন পলাতক ছিলেন। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নূর হোসেন কলকাতায় পালিয়ে গেছেন। তাঁকে ধরার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছিল।