কাগজের চেয়ে ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য প্রকাশের শাস্তি সাত গুণ

adalot_1সংবাদপত্রের তুলনায় ওয়েবসাইটে মানহানিকর ভুল তথ্য প্রকাশের শাস্তি প্রায় সাত গুণ বেশি ধার্য রয়েছে, যা বৈষম্যমূলক। সংবাদপত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করলে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। অপরদিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে মানহানিকর বা রাষ্ট্রের বিপরীতে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে সেটি তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী- ‘যদি কোনো ব্যক্তি বিশ্বাস করে বা জেনে কোনো প্রকার কথা বা পাঠের জন্য শব্দাবলী বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কিত কোনো নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, যে নিন্দাবাদ অনুরূপ ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করে, সেই ব্যক্তি বর্তমান ধারায় মানহানি করেছে বলে বিবেচিত হবে’।

পত্রিকায় মানহানিকর ভুল তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরদিকে ওয়েবসাইটে এমন তথ্য প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

একই সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশের ক্ষেত্রে জামিনযোগ্য এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশের ক্ষেত্রে অপরাধকে অ-জামিনযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যার কারণে ওয়েবসাইট বা ইন্টারনেটভিত্তিক নিউজপোর্টালে কোনো সংবাদ প্রকাশের অপরাধে যদি কাউকে গ্রেফতার করা হয় তাহলে সহসাই তাকে জামিন দেওয়া হয় না। এমনকি অপরাধটি অ-জামিনযোগ্য হওয়ায় আদালতও আসামিকে খুব সহজেই জামিন দেয় না।

দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মানহানি করে সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

অপরদিকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারায় বলা আছে- ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ’।

একই আইনের ৫৭(২) ধারায় এ অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’৷

অর্থাৎ রাষ্ট্রের বিপরীতে বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা বা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করলে পত্রিকার চেয়ে ওয়েবসাইট বা ইন্টারনেটভিত্তিক নিউজপোর্টালে প্রকাশকারীর শাস্তি সাত গুণ বেশি হবে।

একই অপরাধে দুই রকম শাস্তি কেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, মানহানির অনেক প্রকার আছে। ওয়েবসাইটে সীমানাহীনভাবে কারও মানহানি করা সম্ভব। তাই এখানে শাস্তির পরিমাণটা বেশি রাখা হয়েছে। তা ছাড়া আইন যেহেতু সংসদ পাস করেন তাই এ বিষয়ে আর তেমন কিছু বলার নেই।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend