আসছে মানুষের মতো বুদ্ধিমানেরা
কৃত্রিম বুদ্ধিমানরা কী মানুষের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেবে কিংবা পৃথিবী তাদের অধীনেই যাবে? গবেষকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমানদের নিয়ে আশা করলেও আশঙ্কার মেঘ ঠিকই তাঁদের মনে জমাট বাঁধছে বলে মনে করছেন মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। মানুষের মতো বুদ্ধিমান কম্পিউটার কী আদৌ তৈরি করা সম্ভব? আর যদি তা হয়ও, তবে কম্পিউটারের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে? এ প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে মার্কিন গবেষকেরা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে, এমন কম্পিউটার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার কাজে লাগানো যায়। মানুষের ক্ষেত্রে আবেগ শনাক্ত করাটা বুদ্ধিমত্তার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্রের মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন, যাতে মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমানেরা। আবেগ বুঝতে পারলে এসব যন্ত্র ভাষা বুঝতে পারবে আর ভাষা বুঝতে পারলেই জ্ঞানে ঋদ্ধ হবে রোবট।
মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে যন্ত্র
বর্তমান বিশ্বের কিংবদন্তি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মনে করেন, বুদ্ধিমত্তার দিকে থেকে যন্ত্র অনেক এগিয়ে যাবে। মানুষের চেয়ে যন্ত্রের বুদ্ধি হবে বেশি। যেকোনো কিছুতেই নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং ভবিষ্যতে মানুষের জন্য বিপদই ডেকে আনবে। সম্প্রতি এইচবিওর এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। হকিং বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রের সাময়িক প্রভাব নির্ভর করে এর নিয়ন্ত্রণ কর্তার মর্জির ওপর কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একে আদৌ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না, সে বিষয়টি রীতিমতো অনিশ্চিত ও আশঙ্কাজনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের ওপর মোটেও আস্থা নেই তাঁর। তা ছাড়া এ বিষয়ে এখনো তেমন গবেষণা হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।
স্পেসএক্স নামের মহাকাশযান নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্কও সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগও করেছেন। তাঁর ধারণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে হলিউডের ছবিতে দেখানো টার্মিনেটর, স্কাইনেটের মতো মারাত্মক কিছু বের হয়ে আসবে। আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যেন অপব্যবহার না হয়, সেখানে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। না হলে মানুষের জন্য বিপদ ঘটতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমানরা কী মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে? এ প্রশ্নের জবাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ রে কুর্জওয়েইল বলেন, ‘আমরা আধুনিক প্রযুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলছি। মঙ্গল গ্রহ থেকে কৃত্রিম কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী এসে আমাদের আক্রমণ করবে তা নিয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে ভাবনার চেয়ে আমরা ভাবছি আমাদের নিজেদের তৈরি কৃত্রিম যন্ত্রগুলো নিয়ে, যা পুরোটাই প্রযুক্তির উন্নয়ন। আমাদের হাতে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমানেরা কখনো আমাদের বিপক্ষে যাবে না। বর্তমানে যন্ত্র যেমন আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে বাড়িয়ে তুলছে, ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতা করবে যন্ত্র।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে বসে গুগল বা ফেসবুক তৈরি হয়েছে। এখন আফ্রিকার একটি শিশু ১৫ বছর আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি তথ্য জানতে পারে। তাই, প্রযুক্তিকে সব সময় দ্বিমুখী তলোয়ার বলা যেতে পারে, যার ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে; তবে ভালোর দিকটাই বেশি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মানুষের দীর্ঘায়ু দেখার প্রত্যাশা করছেন মার্কিন এই গবেষক।
প্রেম হবে কম্পিউটারের সঙ্গে
গুগলের প্রকৌশলী ও কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাবিষয়ক গবেষক রে কুর্জওয়েইল সম্প্রতি এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আর মাত্র ১৫ বছর! ২০২৯ সালের মধ্যেই মানুষ আর কম্পিউটারের মধ্যে সম্পর্ক হবে, প্রেম হবে। তাঁর মতে, হলিউডের ছবিতে দেখানো মানুষ-রোবটের সম্পর্কের বিষয়টি বাস্তব হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। তিনি দাবি করেন, প্রযুক্তির সঙ্গে আবেগ যুক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আবেগঘন আলোচনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে যন্ত্র। ২০২৯ সালের মধ্যেই কম্পিউটারের বুদ্ধিমত্তা মানুষের সমপর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা করেন তিনি। সেই সময় মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলেও বিশ্বাস করেন মার্কিন এই প্রকৌশলী। কম্পিউটারের বুদ্ধি মানুষের সমপর্যায়ে চলে এলে সে সময় তাদের আবেগও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হবে। রোমান্টিক সম্পর্ক তৈরির মতো পর্যায়ে চলে আসবে কম্পিউটার।
টিউরিং টেস্টে পাস করেছে কম্পিউটার
৬৬ বছর বয়সী কুর্জওয়েইল ভবিষ্যদ্বাণী এর আগে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মিলে গেছে। ১৯৯০ সালে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে আট বছরের মধ্যেই দাবা খেলায় মানুষকে হারিয়ে দেবে কম্পিউটার। ১৯৯৭ সালে আইবিএমের ডিপব্লু কম্পিউটার গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল করেছিল। এর আগে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা ‘টিউরিং টেস্ট’ উতরে যাবে কম্পিউটার। সম্প্রতি বিশ্বে প্রথমবারের মতো টিউরিং টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েছে ‘ইউজিন গুস্টম্যান’ নামের একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ণয়ের জন্য টিউরিং টেস্ট নেওয়ার আয়োজন করেছিলেন। এ টেস্টের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও মানুষের বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। রাশিয়ার গবেষকদের তৈরি ‘ইউজিন গুস্টম্যান’ নামের প্রোগ্রামটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় মানুষের মতো আলোচনা চালিয়ে যেতে