গল্প: পাখি ও মানুষ- আমীরুল ইসলাম
খুব ছোটবেলায় আমি বাবার হাত ধরে রমনা পার্কে ঘুরে বেড়াতাম৷ সবুজ গাছ, চমৎকার লেক, নরম ঘাস আর পাখিদের ওড়াউড়ি আমার খুব ভালো লাগত৷
বাবা হাঁটতেন আর গল্প বলতেন৷ অনেক মজার গল্প৷ রবীন্দ্রনাথের গল্প, বঙ্গবন্ধুর গল্প, বাংলাদেশের গল্প শোনাতেন৷ আমি তন্ময় হয়ে সেসব গল্প শুনতাম আর মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম, বড় হয়ে আমিও দেশের সেবা করব৷ দেশের জন্য কাজ করব৷
বাবার হাত ধরে একদিন হাঁটতে হাঁটতে নাগালিঙ্গম গাছের কাছে এসে দাঁড়ালাম৷ বাবা গাছটার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন৷ আমি তাকিয়ে দেখি, গাছের ওপরে অনেক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে আর ডাকছে৷
বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘বাবা, পাখিদের কথা তুমি বুঝতে পারো?’
বাবা বললেন, ‘না৷’
‘কারা বোঝে পাখিদের কথা?’
‘পাখিরা আর গাছেরা৷’
‘তুমি একটুও বোঝো না?’
‘খানিকটা বুঝি৷’
‘কী বোঝো?’
‘পাখিরা বলে, ভালোবাসো৷ ভালো থেকো৷
বাবার হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললাম, ‘পাখিরা তো ভালো কথাই বলে৷’
বাবা বললেন, ‘হুম্৷’
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘বাবা, তোমার কী হতে ইচ্ছে করে?’
বাবা হাসলেন৷
‘মানুষ!’
আমি জবাব দিলাম ‘দূর বোকা! তুমি তো মানুষই৷ মানুষ হতে ইচ্ছা করবে কেন?’
‘তোমার কী হতে ইচ্ছে করে?’
বাবার প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম, ‘পাখি৷’
গাছের ডালে ডালে তখন পাখিরা উড়ে যাচ্ছে৷ নানা রঙের পাখি৷
আমি শক্ত করে বাবার হাত ধরি৷ বাগানের সরু পথ বেয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই৷