মুসলমান মেয়ের সঙ্গে প্রেম হামলা ও হুমকিতে শেরপুরে ১২০ হিন্দু পরিবার ঘরছাড়া

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেতমারী উত্তরপাড়ার পুনি রবিদাসের ছেলে রতন রবিদাসের সঙ্গে একই গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক পড়–য়া একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ১০ জুন গার্মেন্টকর্মী রতন ওই মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে যান। ১৬ জুন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছেলে ও মেয়েটিকে উদ্ধার করে সালিসি সভা করেন। ওই সভায় মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় ছেলেটির সঙ্গে বেরিয়ে গেছে বলে জানায়। ছেলেটিও ধর্মান্তরিত হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজি হন। তবে মেয়ের মামাসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোক এতে রাজি না হয়ে ওই ছেলের শাস্তি দাবি করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে চেয়ারম্যান ছেলে-মেয়ে দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শতাধিক লোক ১৭ জুন রাতে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে। এ সময় তারা টাকা-পয়সা, এমনকি গোয়ালের গরুও ছিনিয়ে নেয়। তাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এতে আতঙ্কিত শতাধিক হিন্দু পরিবার শেরপুর ও জামালপুর জেলা শহরে আত্মীয়স্বজনের কাছে এবং কিছু পরিবার শেরপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়। ১০-১৫টি পরিবারকে তাদের বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
খবর পেয়ে গতকাল পুলিশের একটি দল পরিস্থিতি দেখতে বেতমারী গ্রামে গেলে তাদের সামনেই দুই হিন্দু পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। পুলিশ চলে এলে আরো দুটি বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। এতে দুজন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা যায়। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের অফিসে আশ্রয় নেওয়া স্থানীয় তুফানু রবিদাসের স্ত্রী শান্তি রানী বলেন, ‘আমগরে কী অপরাধ, জানি না। প্রেম করছে ছেলে আর মেয়ে। অত্যাচার চলতাছে আমগরে ওপরে। দেশ ছাইড়্যা যাবার হুমকি দিতাছে। আমগরে বাঁচান।’
একই গ্রামের গৃহবধূ দুলালী বলেন, ‘পুলাপান নিয়া তিন দিন ধইর্যা এলাকাছাড়া। আমার স্বামী সেলুনে কাজ করে। সেলুন বন্ধ। পুলাপান না খাইয়্যা আছে।’
এলাকার ধানু চৌকিদার বলেন, ‘আমারে ধইর্যা মারছে। ভয়ে বাড়িতে যাবার পারতাছি না।’
বেতমারী-ঘুঘরাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছেলে-মেয়ে দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ছেলে মুসলমান হতে চায়। তবে এলাকার কিছু দালাল-বাটপার এতে বাধা দিচ্ছে। তারা এ ঘটনাকে অন্য রকম রং দিয়ে সুবিধা নিতে চায়। তিনি বলেন, অ্যাকশনে না গেলে হিন্দুরা এলাকায় থাকতে পারবে না।