ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হঠানো হবে: খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে খুনি সরকারকে হঠানো হবে। আমার কোনো ভয় নাই। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আপনাদের সঙ্গে থাকব। দেশকে দুর্নীতিবাজ সরকার মুক্ত করব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জয়পুরহাটের জনসভায় এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই অবৈধ সরকার আজ আমাদের কাছে বৈধতা চাচ্ছে দেয়ার মালিক আমার নই, দেশের জনগণ। জনগণ ভোট না দিলে জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি, আমরা অংশগ্রহণ করেনি। সেখানে কিভাবে তারা জনপ্রতিনিধি হলেন?
তিনি বলেন, আমরা জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি। আমরা সরকারি দলের প্রতিনিধি নই, বিরোধী দলের প্রতিনিধিও নই। তাই জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। কেননা তারা জানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের করুণ পরিণতি হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমি আছি। আমার কোন ভয় নেই। স্বৈরাচার ও দুর্নীতিবাজ এ সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব। যতদিন না এ সরকার ক্ষমতা ছাড়বে ততদিন আমাদের দুর্বার আন্দোলন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা বলছে, সংলাপে বসতে হবে। কারণ আমরা দেশের সর্ববৃহৎ দল। কাজেই আমাদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট দিতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীন কোন নির্বাচন হয়নি, হবেও না। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় আমরা এগিয়েছিলাম। কিন্তু তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় তারা কারচুপি শুরু করে। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না।’
তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসী-জঙ্গি ধরার জন্য আমাদের সময়ে র্যাব গঠন করা হয়েছিল। তারা বড় বড় জঙ্গিদের ধরেছিল। কিন্তু আজ রাজনৈতিকভাবে র্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাহিনীকে রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। এ সময় তিনি আবারো র্যাব বিলুপ্তি আহ্বান জানান।
তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গডফাদারের মা’ হিসেবে সম্বোধন করেন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘গডফাদারের মা যত দিন জোর করে ক্ষমতায় থাকবে ততদিন বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন হবে না। আজ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পার্থক্য বুঝতে হবে।’
তিনি শামীম ওসমান, নিজাম হাজারীর মতো সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেওয়ায় শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করেন।
‘আওয়ামী লীগ দুর্নীতিবাজ সরকার’ উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করছে। পদ্মা সেতুর টাকা চুরি করেছে, কুইক রেন্টাল, শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা চুরি করেছে। আর সেই চুরি করা টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছে, সুইস ব্যাংকে জমা রেখেছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তারা একচোখা। আওয়ামী লীগের লোকেরা দুর্নীতি করছে, টাকা পাচার করছে। আর তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা করছে।’
এর আগে, প্রচণ্ড বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শহরের সরকারি বাজলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভার মঞ্চে উপস্থিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বগুড়া সার্কিট হাউজ থেকে দুপুর ১.৫০ মিনিটে খালেদা জিয়া জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন। বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে তিনি জয়পুরহাট শহরের সরকারি বাজলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছান।
বগুড়া থেকে জয়পুরহাট যাত্রাপথে রাস্তার দু’ধারে নেতাকর্মীরা মিছিল ও শ্লোগান সহকারে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া সাধারণ মানুষও রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে কাকভেজা হয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। খালেদা জিয়া এ সময় হাত নেড়ে তাদের অভিনন্দন গ্রহণ করেন।
এদিকে, প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও সমাবেশ চলছে। মাঠে পানি জমেছে। ছাতা মাথায় নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যেও যেন তাদের উৎসাহের কোন কমতি নেই।
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে রবিবার দুপুর ২টায় জনসভা শুরু হয়। ১২টার পর থেকেই শহরের সরকারি বাজলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলীর সভাপতিত্বে স্থানীয় নেতারা এ সময় বক্তব্য রাখেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, দুপুর পৌনে ২টায় বগুড়া সার্কিট হাউজ ত্যাগ করার আগে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এ সময় বলেন, ‘দেশ আজ মহাসঙ্কটে। তাই আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই জালেম খুনি সরকার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই বিদায় নেবে।’
খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘এ অবৈধ সরকার প্রতিদিন খুন-গুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। এই অত্যাচারী জুলুমবাজ সরকারের হাত থেকে জনগণ মুক্তি চায়। সরকারের এ সব কর্মকাণ্ডে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এমনকি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশাহারা।’