দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল-চিলি, নেদারল্যান্ডস-মেক্সিকো
মেক্সিকোর সঙ্গে ড্রয়ে মৃদু সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল তাঁদের নিয়ে। কিন্তু ওই একটা মাত্র ম্যাচেই টিমটিম করে জ্বলা ব্রাজিল আবার দুর্বার নেইমারে।
ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে উদ্বোধনী ম্যাচের পর ক্যামেরুনের বিপক্ষেও জোড়া গোল করলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার।
আর প্রথম দুই ম্যাচে নিজের উপস্থিতি বোঝাতে ব্যর্থ আরেক স্ট্রাইকার ফ্রেডও তাঁর গোলের হিসাব খুললেন অদম্য সিংহদের বিপক্ষেই।
বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে গোল করলেন মিডফিল্ডার ফের্নান্দিনিয়োও।
সবমিলিয়ে ৪-১ গোলের বড় জয়ে ‘এ’ গ্রুপ থেকে ব্রাজিল দ্বিতীয় রাউন্ডেই শুধু গেল না। গেল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই।
যদিও ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় রেসিফে থেকে আসা খবরে গ্রুপ সেরা হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছিল কিছুটা অনিশ্চয়তা। সেখানে গ্র“পের অন্য ম্যাচে যে তখন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে এগিয়ে মেক্সিকো।
গোল পার্থক্যের হিসাবে ব্রাজিল-মেক্সিকোও তখন এক সমতায়। মেক্সিকো আরেকটি গোল দিলেই গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে ব্রাজিলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়ে পড়তে হত ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডসের সামনে।
কিন্তু পাউলিনিয়োর জায়গায় খেলতে নেমে ৮৪ মিনিটে ফের্নান্দিনিয়োর গোলে সেই সম্ভাবনা দূর করা ব্রাজিল শুনল ওদিকে ক্রোয়েশিয়াও একটি গোল শোধ করে দিয়েছে।
শেষপর্যন্ত ক্রোয়েশিয়াকে ওই ৩-১ গোলেই হারিয়ে রানার্সআপ মেক্সিকো।
২৯ জুন ফোর্তালেজায় দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তাঁরা মুখোমুখি হচ্ছে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডসের।
আর এর আগেরদিন অর্থাৎ ২৮ জুন বেলো হরিজোন্তেতে নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল সামনে পাচ্ছে চিলিকে।
প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে ব্রাজিলের মুখোমুখি ক্যামেরুনের রক্ষণভাগে এদিন শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড়। তাতে ১৭ মিনিটেই বাম দিক থেকে লুইজ গুস্তাভোর নীচু ক্রসে নেইমারের পায়ের আলতো ছোঁয়া স্বাগতিকদের এগিয়ে নেয়।
তবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া ক্যামেরুনও ব্রাসিলিয়া স্তব্ধ করে দিতে সময় নেয়নি। ২৬ মিনিটে জোয়েল মাতিপের গোলে সমতা।
এর আগে নেইমারের জোরালো শট ক্যামেরুনের গোলরক্ষক ইতানজে আটকে দেওয়াতেই না সমতা ফেরাতে পারে আফ্রিকান দলটি। তবে বেশিক্ষনের জন্য নয়। ৩৪ মিনিটে মার্সেলোর নিরীহগোছের পাস ধরে অসাধারণ গোল নেইমারের।
প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে বডি ডজে ছিটকে ফেলে নেওয়া শটে এগিয়ে দেন স্বাগতিকদের। এরপর ব্যবধান বাড়তেই থাকে।
ওদিকে রেসিফে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পরও ম্যাচের গোলখরা যেন ঘুঁচতেই চাইছিল না। কিন্তু ৭২ মিনিটে অধিনায়ক রাফায়েল মারকেসের গোলে মেক্সিকো এগিয়ে যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ১০ মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান ৩-০ করে ফেলেন আন্দ্রেস গুয়ার্দাদো এবং হাভিয়ের এর্নান্দেস।
আর ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে একটি গোল শোধ দেন ইভান পেরিসিচ।
দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার পথে দু’দলই স্প্যানিশ ফুটবল রাজত্ব দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে এসেছিল। নেদারল্যান্ডস-চিলি ম্যাচ আকর্ষক হয়ে ওঠার পক্ষে তাই নির্দ্বিধায় বাজি ধরা যাচ্ছিল।
কিন্তু মনকাড়া আক্রমণাত্বক ফুটবল খেলে আসা দল দুটো অবশ্য নিজেদের শেষ গ্র“প ম্যাচে সে প্রত্যাশা মেটাতে পারল সামান্যই।
সাও পাওলোর এরিনা করিন্থিয়ান্সে লড়াইটা হল উত্তাপহীন।
যদিও দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘এ’ গ্রুপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক ব্রাজিলকে এড়াতেও ম্যাচটি কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ এটি যে ছিল ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ধারণী ম্যাচও। তাতে ড্র করলেও গোলের হিসাবে এগিয়ে থাকায় ডাচরাই গ্রুপসেরা হত।
কিন্তু ম্যাচের শেষ ১৩ মিনিটের দুই গোলে জিতে শতভাগ জয়ের আত্বিবশ্বাস নিয়েই এখন শেষ ১৬-র লড়াইয়ে নামতে পারছে লুই ফন হালের দল।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চিলিকে যেখানে জিততেই হত, সেখানে ৭৭ মিনিটে তাঁরা গোল খেয়ে বসে।
ড্যারিল ইয়ানমাতের সেন্টার থেকে দুর্দান্ত এক হেডে ডাচদের এগিয়ে নেন লেরয় ফিয়ের।
প্রথমার্ধে মাঝমাঠ থেকে দুরন্ত গতিতে ছুটে গিয়ে অল্পের জন্য গোল না পাওয়া আরিয়েন রোবেন ছিলেন দ্বিতীয় গোলটির সূত্রধর। তাঁর বাড়ানো বলেই পা ছুঁইয়ে লক্ষ্যভেদ করেছেন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের জয়সূচক গোলদাতা মেমফিস দেপেই।
নেদারল্যান্ডস ও চিলির কাছে তুলোধুনো হয়ে বিদায় নেওয়া স্পেনও স্বান্ত্বনার জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারছে। কুরিতিবায় অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অনন্ত হতাশার বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতায় কোচ ভিসেন্তে দেল বোস্কে এদিন দলের খোলনলচে বদলে ফেলেছিলেন অনেকটাই। এই বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পাওয়া স্ট্রাইকার ডেভিড ভিয়াই দর্শনীয় এক গোলে প্রথম এগিয়ে নেন স্পেনকে।
৩৬ মিনিটে ইনিয়েস্তার বাড়ানো বল যায় ভিয়ার মতোই প্রথম খেলতে নামা হুয়ান ফ্রানের পায়ে। গোললাইন ধরে এগোনো এ রাইট ব্যাকের মাইনাসেই পেছনের পায়ে ফ্লিক করে বল জালে জড়ান ভিয়া।
৬৯ মিনিটে ফের্নান্দো তোরেসের করা দ্বিতীয় গোলটিরও উৎস স্পেনের হয়ে শততম ম্যাচ খেলতে নামা ইনিয়েস্তা। ৮২ মিনিটে তৃতীয় গোলটি করেছেন হুয়ান মাতা।