কলম্বিয়া ম্যাচে জাপানের সূর্যোদয়ের অপেক্ষা
সূর্যোদয়ের দেশের বিশ্বকাপ-সূর্য অস্তমিত প্রায়! দুই ম্যাচে এক পয়েন্ট পাওয়ায় ব্রাজিল আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আর সেই ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্য গ্রুপের শেষ ম্যাচে জাপানের জয়ের বিকল্প নেই।
কিন্তু আইভরি কোস্ট আর গ্রিসের বিপক্ষে যারা জিততে পারেনি, কলম্বিয়ার বিপক্ষে কী করে জিতবে তারা! বিশেষত এই ‘লস কাফেতেরস’রা যখন মনে করাচ্ছে কার্লোস ভালদেরামা, ফাউস্তিনো আসপ্রিয়াদের সেই কিংবদন্তিতুল্য দলটিতে! মঙ্গলবার রাত দু’টায় কুইয়াবার পানতানাল অ্যারেনায় শুরু হওয়া ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে জাপানের সামনে তাই বিশাল চ্যালেঞ্জ।
ধরা যাক, সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হল ‘ব্লু সামুরাই’।
সেটিও কিন্তু তাদের নকআউট পর্বের টিকেটের নিশ্চয়তা দেবে না। নিজেদের জয়ের পাশাপাশি জাপানের তাকিয়ে থাকতে হবে আইভরি কোস্ট-গ্রিসের মধ্যে গ্রুপের অন্য ম্যাচের দিকে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপ থেকে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে কেবল কলম্বিয়া। জাপান (১), আইভরি কোস্ট (৩) ও গ্রিস (১) প্রত্যেকের সামনেই তাই সম্ভাবনা আছে জেমস রদ্রিগেসের দলের সঙ্গী হওয়ার।
দলটি ছিল রাদামেল ফালকাওয়ের। ইনজুরির কারণে এই ফরোয়ার্ড বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলে কলম্বিয়ার সম্ভাবনাকেও অনেকে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন আটলান্টিক মহাসাগরে। কিন্তু হোসে পেকারমান ঠিকই দলটিকে আবার দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি রদ্রিগেসকে কেন্দ্র করে। প্রথম দুই ম্যাচে গ্রিসকে ৩-০ ও আইভরি কোস্টকে ২-১ গোলে যে হারাল কলম্বিয়া, সেটি ওই প্লে-মেকারের দুর্দান্ত ফুটবলশৈলীতে।
তবে কলম্বিয়ান কিংবদন্তি ভালদেরামা মূল কৃতিত্ব দিচ্ছে আর্জেন্টাইন কোচ পেকারমানকে, “আমাদের ছেলেরা ইতিহাস তৈরি করছে। প্রফেসরের (পেকারমান) প্রতি আমার শ্রদ্ধার কমতি নেই। কলম্বিয়ান ফুটবলের আত্মপরিচয় ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।”
সেই পেকারমান কিন্তু নকআউট পর্বে পৌঁছেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন না। বরং জাপানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সতর্কতা ঝরেছে তাঁর কণ্ঠে, “আমাদের এখনো জাপানের মুখোমুখি হওয়া বাকি। নকআউট পর্বের খেলার সম্ভাবনা থাকায় ওদের কাছ থেকে তীব্র লড়াইয়ের আশা করছি। দেখি আমরা তা কিভাবে সামাল দিতে পারি।”
ভালোভাবে সামাল দিতে পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও নিশ্চিত হয় কলম্বিয়ার। তবে তাতে লাভ না ক্ষতি হবে – সে অঙ্ক করা যাচ্ছে না এখনই। কারণ এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়নকে শেষ ষোলোতে খেলতে হবে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপের বিপক্ষে। সেটি ইতালি বা উরুগুয়ে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তো তাদের বিপক্ষে খেলা ভালো হবে নাকি এই গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে ‘ডি’ গ্রুপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন কোস্টারিকার বিপক্ষে খেলাটি সহজ- সে সমাধানে পৌঁছা কঠিন বৈ কি! অবশ্য মাঠে নামার আগেই কলম্বিয়া জেনে যাবে ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপের নাম। কারণ ওই গ্রুপের খেলাটি যে হবে আগে। সে কারণে দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে তাদের সামনে।
জাপানের নকআউট পর্বের সম্ভাবনাটা সূর্যটা মেঘের আড়ালে। ঝলমলে পারফরম্যান্স দিয়ে সেই আড়াল দূর করে দেওয়ার প্রত্যয় তাদের শিবিরে। বিশেষত নকআউট পর্বে যাওয়ার স্বপ্নটা যখন এখনো একেবারে মুছে যায়নি। কোচ আলবের্তো জাক্কেরোনির তাই দিয়েছেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি জয়ের তাগিদ, “আমাদের ভালো খেলেই পরের ম্যাচ জিততে হবে।” আর প্লে-মেকার কেইসুকে হোন্ডার উচ্চারণটি তো প্রায় শপথের মতো, “আমাদের জন্য এই ম্যাচটি ফাইনালের মতো। জীবন বাজি রেখে আমরা তাতে লড়ব।” আইভরি কোস্টের কাছে ১-২ গোলে হার এবং গ্রিসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর এর কোন বিকল্পও নেই ‘ব্লু সামুরাই’দের সামনে।
এর আগে দল দুটি পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছিল দু’বার। তাতে কলম্বিয়ার জিতেছে এক ম্যাচে, অন্যটি হয়েছে ড্র। জাপানের জন্য ইতিহাসের পিছু টেনে ধরা আছে আরো। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যে তিন বার লাতিন আমেরিকার দলের বিপক্ষে খেলেছে তারা, জিততে পারেনি তার কোনো বারই।
তবে এসব পরিসংখ্যানের দিকে তাকানোর সময় এখন নেই জাপানের। তাদের বিশ্বকাপ ঝুলে আছে সামনের ম্যাচটির উপর। অস্তমিত বিশ্বকাপ-সূর্যকে আবার ঝলমলে আলোয় ফিরিয়ে আনার জন্য সেই ম্যাচে যে তাদের জিততেই হবে!
তা প্রতিপক্ষ কলম্বিয়াই হোক, আর রেকর্ডের যত পিছু টেনে ধরাই থাকুক।