বাজেট ২০১৪–১৫; চিকিৎসা ভাতা বেশি হলেই কর

downloadইলিয়াস কাঞ্চন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মূল বেতন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাতার পাশাপাশি প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা করে চিকিৎসা ভাতা পান তিনি। বছর শেষে চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৭২ হাজার টাকা পান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়কর বিবরণী দাখিলের সময় প্রতিবছরই এই চিকিৎসা ভাতা খরচ হিসেবে দেখান। তাই এই অর্থের ওপর কর দিতে হয় না।কিন্তু আগামী করবর্ষ থেকে এই সুযোগটি আর থাকছে না। আগামী বাজেটে বার্ষিক ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৬০ হাজার টাকার বেশি অর্থ ভাতা হিসেবে পেলে সেই অর্থের ওপর কর দিতে হবে। তাই ইলিয়াস কাঞ্চনকে আগামী করবর্ষ থেকে চিকিৎসা ভাতা হিসেবে পাওয়া বাড়তি ১২ হাজার টাকার ওপর কর দিতে হবে। এই বাড়তি অর্থ তাঁর মোট করযোগ্য আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর নির্ধারণ করা হবে।
এ খবর শুনে ইলিয়াস একটু হতাশ হলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসা ভাতার ওপর করারোপ করা ঠিক হয়নি। চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে যে ভাতা পাওয়া যায়, তার ওপর কেন কর বসবে?’ তিনি মনে করেন, চাকরিজীবীরা যে চিকিৎসা ভাতা পান, তা আসলে তাঁর পরিবারের সব সদস্যদের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। সেই বিবেচনায় একটি পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় বছরে ৬০ হাজার টাকা খুব বেশি নয়।
ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো যাঁরা ভালো বেতনের চাকরি করেন, তাদের সবার ওপর এখন বাড়তি করের বোঝা বসছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় চিকিৎসা ভাতা বাবদ প্রাপ্ত অর্থের ওপর শর্তসাপেক্ষে কর বসানোর প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকৃত খরচ নির্বিশেষে চাকরিজীবী কর্তৃক নগদ চিকিৎসা ভাতার ক্ষেত্রে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা (দুটির মধ্যে যেটি কম হবে) পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে। এর মানে হলো, ওই চাকরিজীবীর বছরে চিকিৎসা বাবদ খরচ যাই হোক না কেন, ভাতা হিসেবে ৬০ হাজার টাকার বেশি পেলেই কর দিতে হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কর বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, এই উদ্যোগটি চাকরিজীবী করদাতার জন্য ভালো হবে। বছরে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা পেলে খরচের বিল-ভাউচার সংরক্ষণ করতে হবে না। এত দিন চিকিৎসা বাবদ খরচ দেখাতে বিল-ভাউচার সংরক্ষণ করতে হতো। সারা বছর এই বিল-ভাউচার সংরক্ষণ করা করদাতাদের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। অতীতে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে অনেকেই চিকিৎসা ভাতার অর্থ করমুক্ত রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন কর বিভাগের আরেক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে করপোরেট সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা করা হয়। এমন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিকিৎসা খরচের অর্থ বিমার আওতায় থাকে। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, একজন করদাতা একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। চিকিৎসা বাবদ তিনি বছরে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা সুবিধার আওতায় খরচ করতে পারেন। এখন তিনি যদি বছরে এক লাখ টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ করেন, পরে বিমা দাবি করে বিল-ভাউচার অফিসে জমা দিয়ে অর্থ তুলে নেন, তাহলে তাঁকে কর দিতে হবে। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা খরচ যদি তাঁর অফিস তথা বিমা কোম্পানি সরাসরি হাসপাতাল, ডাযাগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করেন, তাহলে কর দিতে হবে না। এর মানে হলো বিমার আওতায় থাকা চাকরিজীবীর চিকিৎসা খরচ ব্যক্তিগত হিসাবে জমা পড়লেই কর দিতে হবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend