বাংলাদেশের অবৈধ সরকারকে কেবল ভারতই স্বীকৃতি দেয়: খালেদা
বাংলাদেশের দুবারের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন সে দেশের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক ‘দা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ প্রতিনিধি শুভজিং রায়ের সঙ্গে। পত্রিকায় ১ জুলাই প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া ভারতে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন,‘বাংলাদেশিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে আমি মনে । তারা এখানেই ভালো রয়েছেন।’ সাক্ষাৎকারটি খবর বাংলা২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আপনার বৈঠক কেমন হল?
খালেদা জিয়া: অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আমাদের বৈঠক হয়েছে। উনি খুবই চমৎকার মানুষ। আমরা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। যেমন সীমান্ত হত্যা। সীমান্ত হত্যা বন্ধে তিনি প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি নিয়েও আমরা কথা বলেছি। শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ অনেক কমে যায়। তখন ভারত আমাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় লোকজন বিরক্ত হয়।ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমাদের দু দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। কাজেই কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। তাই বলে মানুষ হত্যার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এতে এদেশের মানুষ ভারতের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের উদ্বেগকে সম্মান জানিয়েছেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: বাংলাদেশের প্রতি নরেন্দ্র মোদির মনোভাব কেমন হবে বলে আপনি মনে করছেন?
খালেদা জিয়া: আমি মোদিকে দুটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। একটা তিনি বিজয়ী হওয়ার পর এবং অন্যটি তিনি শপথ নেয়ার পর। আমরা আশা করছি ভারতের নতুন সরকার সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নেবে। মোদি তার শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি একটি প্রসংশনীয় উদ্যোগ। আজ থেকে তিন দশক আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এখন প্রধানমন্ত্রী মোদি সার্কের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরা মনে করি এটি এ অঞ্চলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: নেতা হিসেবে মোদিকে আপনি কেমন মনে করেন?
খালেদা জিয়া: এটা বিবেচনা করবে ভারতের জনগণ। তিনি সুশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়েছেন এবং ভারতের মানুষ তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে বলেই আমি মনে করছি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: তিনি কি আপনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?
খালেদা জিয়া: হ্যা, আমি তাকে শুভেচ্ছা জানানোর সময় তিনি আমাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: আপনার ভারত সফরের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
খালেদা জিয়া: আপনি তো জানেন আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখন ভালো না। দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন এবং তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় ভারতের সাবেক সরকার আপনাদের দলকে সমর্থন দেয়নি, আপনি কি এতে হতাশ ?
খালেদা জিয়া: ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরের সময় প্রকাশ্যে বলেছেন, হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন হবে না এবং মৌলবাদীরা ক্ষমতায় চলে আসবে। তিনি আমাদের দলকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না এটা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি। আমরা তো একটা রাজনৈতিক দল, কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি নই। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে আমরা এতে অংশ নিতে পারিনা। তখন এরশাদও প্রকাশ্যে নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে কিভাবে যেন সব বদলে গেল। এতে কংগ্রেস সরকারের কোনো হাত ছিল কিনা তা আমি জানি না। তবে পরে এরশাদ বলেছিলেন, পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তাকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। আর ভারতই হচ্ছে একমাত্র দেশ যারা ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে । এমনকি কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘও এই একতরফা নির্বাচনকে সমর্থন দেয়নি। বাইরের দেশগুলো এখানে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষকও পাঠায়নি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও এ নির্বাচন মেনে নেয়নি। এটি একটি অবৈধ সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রতি দ্রুত নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিজেও এখন উপলব্ধি করতে পারছে যে, দেশে এবং দেশের বাইরে তাদের কোনো বৈধতা নেই। এজন্য তারা আমাদের বলছে, আগে তাদেরকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। পরে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। .. আমি সুষমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। ৩শ জনের মধ্যে ১৫৪ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দুই চার জন এভাবে নির্বাচিত হতে পারেন। তাই বলে ১৫৪ জন? মন্ত্রীদেরও এভাবেই নির্বাচিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা নিজেও এভাবেই নির্বাচিত হয়েছেন। লোকজনকে দেখানোর জন্য তারা কয়েকজন ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: বিজেপির সঙ্গে সাবেক কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের কোনো পার্থক্য কি আপনার চোখে পড়ে?
খালেদা জিয়া: বিজেপি মাত্র ক্ষমতায় এসেছে। এত তাড়াতাড়ি কিছু বলা ঠিক হবে না। এছাড়া এ বিষয়ে বিচার করবে ভারতের জনগণ। আমরা কেবল দেখব দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলোর সমাধান হচ্ছে কিনা সে দিকেই নজর রাখব।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: আপনি কি মনে করেন কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের প্রতি দেয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি?
খালেদা জিয়া: বাংলাদেশের জনগণ এমনটিই মনে করে থাকে। আসলে ব্যর্থতা বা সদিচ্ছার অভাব যাই বলি না কেন, এতে বাংলাদেশ সরকারেরও দায় রয়েছে। কেননা দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করাটাই আমাদের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: আপনি কি মনে করেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেস সরকারের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং এ কারণেই বাংলাদেশিরা উপকৃত হয়নি?
খালেদা জিয়া: এটিও কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা। বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। দু দেশের জনগণের স্বার্থকে ঘিরেই সেই সম্পর্ক গড়ে ওঠা উচিত, কোনো ব্যক্তি বা কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজৈনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে নয়। নির্বাচনের জন্য আমি কোনো পক্ষকেই দায়ি করছি না। তবে আওয়ামী লীগের জোরাজুরিতেই ঘটনাগুলো ঘটেছিল। তখন ভারত সরকারও তাদের সমর্থন দেয়। এরশাদকেও জোর করে নির্বাচনে আনা হয়েছিল। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে নির্বাচনে ভারত একটা ভূমিকা পালন করেছে মাত্র।