ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোই ভরসা
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাগলাপাড়া-বকশীগঞ্জ সড়কে পাগলাঝোড়া খালের ওপর নির্মিত এলজিইডির সেতুটি প্রায় ১০ বছর আগে ধসে পড়ে। এর পর থেকে সেতুটির পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পাগলাপাড়া গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুকন উদ্দিন বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। সাঁকোটি বেশ বিপজ্জনক। গত তিন বছরে পাগলাপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক সোরহাব আলী, ইদ্রিস আলী ও শেখেরচর গ্রামের ফরহাদ হোসেন সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া সাঁকো থেকে পড়ে অনেক পথচারী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এত কিছুর পরও সরকার সেতুটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি।
বকশীগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয় জানায়, উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের বিনোদর চরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাগলাঝোড়া খালটি। উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য পাগলাপাড়া-বকশীগঞ্জ সড়কের পাগলাঝোড়া খালের ওপর ১৯৯৬ সালে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০০৩ সালের শেষের দিকে বন্যার সময় সেতুটি ধসে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, সেতুটি ধসে পড়ার ১০ বছর হলেও এটি পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে ওই ইউনিয়নের পাগলাপাড়া, বেতমারী, শেখেরচর, গুমেরচর, তড়িয়াপাড়া, মেরুরচর, আবুল পাড়া, নয়াপাড়া, ভোলাকিপাড়া ও জাকির পাড়ার গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা ১০০ মিটার দের্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। ১০ গ্রামের চার শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে জানকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলাক্ষিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলাক্ষিয়া আর জে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, জানকিপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও জানকিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় আসতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধসে পড়া সেতুটি মাটির নিচে দেবে গেছে। খালের দুই পাশে দুটি স্তম্ভের (পিলার) ভগ্নাংশ দাঁড়িয়ে আছে। ওই দুই পিলারের সঙ্গে সংযোগ করেই সাঁকোটি বানানো হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা কোনোমতে সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন।
জানকিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নূরনাহার বলে, ‘নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে খুব ভয় লাগে। সাঁকোর ওপরে উঠলে মনে হয়, এই বুঝি পড়ে গেলাম। বর্ষায় সাঁকো পার হওয়ার ভয়ে অনেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।’
পাগলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনারকলি বলেন, ‘এ সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে আমার বড় ভাই সোরহাব আলীর মৃত্যু হয়। তিনি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন টাকার অভাবে তাঁর দুই সন্তান লেখাপড়া করতে পারছে না।’ আনারকলির প্রশ্ন, এভাবে আর কয়টা প্রাণ গেলে সরকারের টনক নড়বে।
নিলাক্ষিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ধসে পড়া সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সামান্য পানির স্রোতেই এটি ধসে পড়ে। এর পর থেকেই গ্রামের বাসিন্দারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সুবিধাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী এ কে এম হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ওই খালের ওপর ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।