চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে আওয়ামী লীগ নেতার দাপট

ctg_EC_office_bgবৃহস্পতিবার সকালে নিজের মেয়ের পরিচয়পত্র নিতে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পটিয়া উপজেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কামাল উদ্দিন। কিন্তু ডকুমেন্ট না থাকায় প্রার্থী ছাড়া কাউকে পরিচয়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানান কোতোয়ালী থানা নির্বাচনী কর্মকর্তা শফিকুর রহমান। এ সময় নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দেওয়ার পরও কামালউদ্দিনকে পরিচয়পত্র না দেওয়ায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে তিনটার দিকে ১০/১২ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্রশস্ত্রসহ জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে আনোয়ার হোসেন নামে এক কর্মচারীকে তুলে নিয়ে যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে নজিরবিহীন এ ঘটনার পর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে । তবে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। ঘটনার পর খোরশেদ আলমকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, কথা কাটাকাটির জের ধরে কয়েকজন যুবক আনোয়ারকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। আনোয়ার নিরাপদে ফিরে এসেছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে আনোয়ারের ফিরে আসার সত্যতা না মেলায় পুনরায় জানতে চাওয়া হয় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে। এ সময় অপহরণের ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কারা নিয়ে গেছে আমি জানি না। তবে তারা আনোয়ারকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে তার পরিবার ও অন্যান্য কর্মচারীদের জানিয়েছেন।’

ঘটনা প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার প্রতিবাদে এক কর্মচারীকে অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি। আমরা ফোর্স পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ঘটনা অস্বীকার করে পুলিশের প্রয়োজন নেই দাবি করায় তারা ফিরে এসেছে।’

কর্মচারীরা জানান, আনোয়ারকে চট্টমেট্রো থ: ১১৬৪১৭ নম্বরের একটি সিএনজি অটোরিক্সায় করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শফিককে তাদের হাতে তুলে দিলে আনোয়ারকে ফেরত দেয়া হবে বলে ফোন করে জানায় তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা নির্বাচন অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে সবার সামনে একজনকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনা কার্যালয়ের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিকাল সাড়ে চারটার দিকে জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, মুল ফটকের বাইরে একটি পুলিশের গাড়ি অবস্থান করছে। কার্যালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ঘটনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন।

ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন জানান, মেয়ের পরিচয় পত্র না পাওয়ায় একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি চলছিল। এসময় কোন কারণ ছাড়াই শফিক আহমেদ কক্ষে প্রবেশ করে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টা তাৎক্ষণিকভাবেই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক বিষয়টি দেখছেন। কাউকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিত করার এ ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আমরা কামাল সাহেবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছি। অবশ্য, এ ঘটনার প্রতিবাদে যা হয়েছে তাও শোভন হয়নি। ’

এদিকে, আনোয়ারের ভাই মো. মঞ্জু জানান, তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রায় তিনঘণ্টা পর মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় আনোয়ারকে নগরীর টেক্সটাইল গেইট এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend