শেরপুরের কাঁটাখালী গণহত্যা দিবস আজ : নেই শহীদদের তালিকা, স্থাপিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ
আজ (৬ জুলাই) ঐতিহাসিক কাঁটাখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙামাটিয়া খাঠুয়াপাড়া গ্রামে ঘটেছিল বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। এই যুদ্ধে শহীদ হন কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান, আলী হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেনসহ নাম না জানা আরও অনেক মুক্তিকামী সিপাহী জনতা। স্বাধীনতার প্রায় ৪৩ বছর অতিবাহিত হতে চললেও তালিকায় নাম নেই সেই শহীদদের, নেই কোন স্মৃতিস্তম্ভ, কালের স্বাক্ষী হয়ে পড়ে আছে ঐতিহাসিক কাঁটাখালী ব্রীজ।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখ শনিবার ভোরে কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে ৫৩ জনের মুক্তিযোদ্ধার দল অবস্থান নেন মালিঝি ইউনিয়নের রাঙামাটিয়া গ্রামে আতর আলীর বাড়ীতে। পরিকল্পনামতে ৫ জুলাই রাতে সফলতার সাথে অপারেশন শেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে আশ্রয় নেয় খাটুয়াপাড়ার হাজী নঈমদ্দিন ও হাজী শুকুর মামুদের বাড়িতে। বাড়ির চারপাশে ছিল প্রশস্ত বিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে এলাকার রাজাকার জালালউদ্দিন মিস্ত্রি তার ছোট ভাই হক আলী শেরপুরের তৎকালীন ছাত্রসংঘের নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ ঝিনাইগাতী আহম্মদ নগর পাকিস্থানী ক্যাম্পে খবর দেয়।
৬ জুলাই সোমবার সকালে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্রামে প্রবেশের একটি মাত্র কাঁচা সড়কের দু’দিক থেকে ব্যারিকেড দেয় পাকসেনা ও রাজাকার আলবদররা। গ্রামবাসীদের অনুরোধে মুক্তিযোদ্ধারা বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরার্থে গুলি করতে করতে পিছু হটে। ওই সময় পাক-হানাদারদের বেপরোয়া গোলা বর্ষণে কোম্পানি কমান্ডার ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র নাজমুল আহসান, তার চাচাত ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও ভাতিজা আলী হোসেন শহীদ হন। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান পেলেও, বর্বরোচিত হামলার শিকার হন খাটুয়াপাড়া রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের ৬০/৭০ জনকে কোমরে দড়ি বেঁধে লাঠিপেটা করতে করতে নিয়ে যাওয়া হয় খাটুয়াপাড়া সরকারী রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। পাক-হানাদার বাহিনীর দল আগুন লাগিয়ে দেয় ওই এলাকার বাড়িঘরে। সম্ভ্রমহানি করে কয়েকজন নারীর। ওইসময় অমানবিক নির্যাতন করে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে গ্রামবাসী আয়াতুল্যা, সামেছ মিস্ত্রি, মহেন্দ্র অধিকারী, আব্বাছ আলী, আমেজ উদ্দিন ও বাদশা আলীকে। ওইসময় আহত হন অনেকেই। দালালদের বাঁধার মুখে সেদিন লাশও দাফন করতে পারেননি শহীদদের স্বজনরা। কলার ভেলায় স্বজনরা সেই লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন নদীতে।
একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত স্মরণ হলেই এখনও এলাকাবাসীর গা শিউরে উঠে। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ প্রায় ৪৩ বছর পরও ৩ বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি নিরীহ ৬ গ্রামবাসী শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। আজও ঐতিহাসিক কাঁটাখালী ব্রীজটিকে সংরণ করা হয়নি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক সংগঠন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদেই শহীদের স্বীকৃতিসহ ওই স্মৃতিচিহ্ন সংরণে প্রয়োজনীয় পদপে নেওয়া হবে- এলাকাবাসীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সচেতন নাগরিকদের ওই প্রত্যাশা।