শ্রীবরদীতে দেশীয় মাছের তীব্র সংকট

14রমেশ সরকার : শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী এক সময় প্রাকৃতিক মৎস্য ভান্ডারে পরিপূর্ণ ছিল। বর্তমানে এ অঞ্চলে মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জলবায়ুর পরিবর্তণের কারণে এ অঞ্চলে খাল-বিল, ডোবা-নালা, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজনন বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মাছ সোনার হরিণে পরিণত হবে। মাছ ভাত থেকে বঞ্চিত হবে এ এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষ। বিশেষ করে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভাগ্যে মাছ ভাত জুটবেনা। জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রকৃতির বিরোপ প্রভাবের কারণে ভরা বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি শুন্যতার জন্য এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া, এসব জলাশয়ে এখন ধান চাষ করার কারণে কৃষকেরা রাসায়নিক সার ও কীট নাশক ব্যবহার করার ফলেও মাছের বিলুপ্তি হয়েছে বলে ধারনা করছেন অভিজ্ঞজনেরা। এমন পরিস্থিতির জন্য বর্তমানে এ অঞ্চলে মাছের মহা সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা হাট বাজারগুলোতে যে সকল মাছ দেখা যায় তার বেশির ভাগ মাছই মৎস্য খামারে চাষকৃত। দেশীয় প্রাকৃতিক অনেক প্রজাতির মাছ বাজারে দেখতে পাওয়া যায় না। মৎস্য খামারে চাষকৃত মাছের মধ্যে রয়েছে পাংগাস, তেলাপিয়া, কই, স্বরপুঁটি, শিং, কার্প জাতীয় মাছ, রুই, কাতল ও মৃগেল। দেশীয় প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছ যা দেখা যায় তা একেবারেই নগন্য। বাজারে এসকল মাছের দাম অনেকটাই আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। আগে দেশি প্রজাতির ছোট মাছের ভাগ যে টাকায় পাওয়া যেত এখন তার চেয়ে দশগুণ বেশি দিয়েও সে মাছ কিনতে পাওয়া যায়না। অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়েছে যে স্বল্প ও নিু আয়ের মানুষের মাছভাত খাওয়া যেন দুরুহ ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলে মাছের কোনো কমতি ছিলনা। খাল-বিল, ডোবা-নালা ও জলাশয়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। আর বর্ষার এ সময়টাতে গ্রামের লোকেরা মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে প্লাবিত এলাকায় মাছ ধরত। দেখে মনে হত যেন তারা মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেছে। এখন ভরা বর্ষা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। শরৎ ও হেমন্তে প্লাবিত এলাকার পানি নেমে গেলে বিভিন্ন ভাবে বাঁধ দিয়ে লোকজন মাছ ধরত। যা তাদের প্রতিদিনের চাহিদা মেটানোর পর প্রচুর পরিমানে শুটকি করে রাখত। শুটকি মাছের গন্ধে বাড়িতে টিকে থাকতে খুব কষ্ট হত। এসকল জলাশয় থেকে মাছ ধরে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে এ অঞ্চলের জেলেরা অনেকটা নিরুপায় হয়ে অন্য পেশায় অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছে। বয়োজৈষ্ঠ্যদের নিকট মাছের গল্প শুনে  এপ্রন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে শুধুই রুপ কথার মতো মনে হয়।

16

এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে মাছের তীব্র সংকট। যার কারণে মাছের দামও অনেক বেশি। এতে করে স্বল্প ও নিু আয়ের মানুষের মাছ ক্রয় করা খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে পরেছে। স্বল্প ও নিু আয়ের অনেক মানুষ মাছ খাওয়া ভূলে যেতে বসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এসকল মানুষের আমিষের ঘাটতিজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাজারে যে সকল মাছ পাওয়া যায় তার মধ্যে  মৎস্য খামারে চাষ করা মাছের সংখ্যাই বেশি। আবার অনেক লোক স্বাদের ভিন্নতার কারণে এসকল চাষকৃত খেতে পারেনা। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য সরকারিভাবে এ অঞ্চলের ভরাট হয়ে যাওয়া জলাশয়গুলো খনন করে প্রাকৃতিক মাছের প্রজননের জন্য জরুরি পদপে নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। শুধু তাই নয় বিলুপ্ত হওয়া মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। আবার এক শ্রেণীর লোক মৎস্য আইন অমান্য করে কাঁথাজাল কারেন্টজাল ব্যবহার করে নির্বিচারে নিধন করছে প্রাকৃতিক দেশীয় প্রজাতির মাছ। শুধু তাই নয় মাছের প্রজনন সময়ে তারা ডিমওয়ালা মাছ ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনা। এসকল অসচেতন লোকের কারণেও মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। মাছ মানব দেহের পুষ্টির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক জলজ সম্পদ। এটি মানব দেহে আমিষের চাহিদা পূরণ করে। মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আমাদের এ সম্পদ যাতে বিলুপ্তি না হয় সেজন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন সভা সেমিনার করে এ অঞ্চলের জনগণের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে আমাদের জাতীয় জীবনে মানবদেহের জন্য এ মহামূল্যবান মৎস্যসম্পদ রা করা সম্ভব। দিন যতই যাচ্ছে মাছ ততই নিঃশেষ হচ্ছে । তাই এখন থেকে এ ব্যবস্থা সরকারের গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য। তা না হলে এ সম্পদ চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে আমাদের জাতীয় জীবন থেকে। মাছ থেকে বঞ্চিত হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend