বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৬৮২ কোটি টাকা আত্মসাৎ
নজিরবিহীন জালিয়াতির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৬৮২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১১৫ কোটি টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক একে সন্দেহজনক লেনদেন হিসাবে মনে করছে। এর মধ্যে গুলশান শাখা থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৩০০ কোটি এবং দিলকুশা থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। এই টাকার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা তাদের বের করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনটি আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটেও পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ মনোনীত না করায় নতুন পরিচালনা পর্ষদের সাথে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের এমডিকে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। নয়া পরিচালনা পর্ষদকে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫(৫) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত যেকোনো ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে, যা বেসিক ব্যাংকের নয়া পরিচালনা পর্ষদের ক্ষেত্রে করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে বিতরণকৃত প্রতিটি ঋণ আদায় আযোগ্য। এসব ঋণের বেশির ভাগেই কোনো জামানত রাখা হয়নি। যেটুকু জামানত রয়েছে তার বেশির ভাগই অতিমূল্যায়িত করা। অর্থাৎ এক টাকার সম্পদ ১০ টাকা দেখানো হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হয়েছে ওই খাতে তা ব্যবহার করা হয়নি। আবার জাহাজ কেনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ দেয়া হয়েছে। জাহাজ কেনার টাকা ছাড় করা হয়েছে। অথচ জাহাজ কেনা হয়নি। জাহাজ কেনার কথা বলে টাকা পাচার করা হয়েছে। আবার গ্রাহকদের প্ররোচনায় অন্য ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণ কিনে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পে-অর্ডারের মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা।
আবার অন্য ব্যাংকের খেলাপি ছিল পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় ওই ঋণ আদায় অযোগ্য ছিল। বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা আলোচ্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের আদায় অযোগ্য ১৬৮ কোটি টাকার দায় কিনেছে অন্য ব্যাংক থেকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজী অটো ব্রিকসের অনুকূলে ২৩ কোটি টাকা, এসএন অটোব্রিকসের অনুকূলে ১৩ কোটি টাকা, নোভা ফুডসের অনুকূলে ১৭ কোটি টাকা, আরকে ফুডসের অনুকূলে ৬৭ কোটি টাকা এবং এটলাস ফুডসের অনুকূলে ৪৮ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এসব ঋণ আদৌ আদায় হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাথে কাজ না করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের : বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫(৫) ধারা অনুযায়ী সরকারি মালিকানাধীন যেকোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক মনোনয়নের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইনের এ ধারা লঙ্ঘন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ থেকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ অন্য চার পরিচালককে মনোনীত করা হয়। নয়া পরিচালনা পর্ষদ গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সাথে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে গত প্রায় দেড় সপ্তাহ বাবদ নয়া পরিচালনা পর্ষদ গঠন হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের সাথে যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান ব্যাংকের এমডির সাথেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।
সূত্র: নয়া দিগন্ত