বকশীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার এর ৪২ বছরের রাজনীতি ও চেয়ারম্যান দায়িত্বকালের ৭ বছর
উমর ফারুক রনজু (বকশীগঞ্জ )থেকে : আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন আমার বয়স ৬০ বছর। আমি ৪২ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার জানামতে বকশীগঞ্জ বর্তমানে একটি উপজেলা একটি ঐতিহাসিক নাম। তবে এ নামটি কি ভাবে উৎপত্তি হয়েছিল তা আজ আর সঠিক করে বলার উপায় নাই। তবে এ ব্যাপারে বেশ ক’টি মত প্রচলিত রয়েছে। কেউ বলেন অনেক দিন আগে বকশী নামে নাকি এক অলোকিক মতা সম্পন্ন ফকির ছিলেন তাকে কেন্দ্র করে একটি খাঁনকা বা আস্তানা গড়ে উঠে এবং ঐ আস্তানাকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে এখানে গড়ে উঠে একটি হাঁট। বকশী ফকিরের নামানুসারেই এর নাম হয় বকশী হাঁট। পরবর্তীতে বকশী হাঁট বকশীগঞ্জে পরিনত হয়। আবার কেই বলেন, মোঘল সম্রাট মহামতি আকবরের শাসনামলে মন সরদারদের ও সাময়িক কর্মকর্তাদের কর্তা ছিলেন মীর বকশী। ১৫৮০ সালে বাংলাদেশের সর্বত্র আকবরের ধর্মনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রাহ দেখা দিলে বিদ্রোহ দমনে জনৈক মীর বকশী বাংলায় এসে ছিলেন। অভিযান শেষে নৌপথে দিল্লী ফেরার পথে ভূল করে কিছু সঙ্গীসহ মীর বকশী বর্তমানে বকশীগঞ্জ নামক স্থানে এসে পড়েন। খরস্রোতে দশানী নদীর তীরে অবস্তিত গাছ গাছড়ায় ভরা প্রকৃতির এক মনোরম পরিবেশে ঢাকা এই জায়গাটি স্বপ্নপূরীর মতো দেখাচ্ছিল। এখানকার পাঁখীর কল-কাকলী সরল মানুষের মন কেড়ে নেয়। তিনি বেশ কিছুদিন এখানে বসবাস করেন। এ অবস্থাকে কেন্দ্র করেই এখানে একটি গঞ্জ গড়ে উঠে। সে হিসাবেই মীর বকশী নাম অনুসারেই উক্ত গঞ্জের নাম করা হয় বকশীগঞ্জ। তবে নাম করণ যে ভাবেই হোকনা কেন? এখানে যে রাজ-রাজারা বাস করতো তা স্বীকার করতেই হবে। যেমন বকশীগঞ্জ এর অপর নাম মহেন্দ্রগঞ্জ। কেউ বলেন কর্তমান ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ এবং বাংলাদেশের রাজেন্দ্রগঞ্জের এক সময় প্রভাবশালী নৌঘাঠি ছিল। বর্তমানে কর্ণঝোড়ার রাজা পাহাড়, রাজা রাজেন্দ্রের স্যা বহন করে চলেছে এবং গোঁয়াল গাঁও এর “সোনাবান্দা ঘাট” অপর এক রাজার কীর্তির কথা স্বরণ করিয়ে দেয়।
অবস্থানঃ সীমানা জামালপুর জেলার সদর থেকে ৫৫কিঃমিঃ সোজা উত্তর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত। উত্তরে গারো পাহাড় দেিণ ইসলামপুর পূর্বে শ্রীবরর্দ্দী, পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ। আয়তন ৮১,২১ বর্গ মাইল ২০১,১৬ বর্গ কিঃমিঃ, ইউনিয়ন সংখ্যা ৭টি, মৌজা ২৫টি, লোকসংখ্যা প্রায় ২ লাধিক। ইউনিয়ন গুলো হলো (১) বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, (২) নিলয়িা, (৩) মেরুরচর, (৪) সাধারপাড়া, (৫) বগারচর, (৬) ধানুয়া কামালপুর,(৭) বাট্টাজোড়। উপজেলা উন্নীত হওয়ার বাংলাদেশ এক বিরল দৃষ্ঠান্ত। এক সময় ইউনিয়নটি ছিল দেওয়ানগঞ্জ থানার অন্তগর্ত। দেওয়ানগঞ্জ থেকে বকশীগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১৫কিঃমিঃ। বকশীগঞ্জ ও আশেপাশে কয়েকটি ইউনিয়নের লোকদের অতিকষ্টে সর্বদা যেতে হতো দেওয়ানগঞ্জে। এ অসুবিধা দূরী করণের লে বকশীগঞ্জের সুধী মহল প্রস্তাবিত ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি সতন্ত্র থানা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্ঠা চালান। অত্র এলাকার বিশিষ্ট্য রাজনৈতিক পার্লামেন্ট সদস্য মুরহুম নঈমউদ্দিন আহম্মেদ প্রস্তাবটি বেশ কয়েকবার জাতীয় পরিষদে উপস্থাপন করেন কিন্তু পাকিস্থানী উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয়নি। ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১৯৮২ সালে সাবেক মন্ত্রী এম এ সাত্তার ও বকশীগঞ্জের সুধী মহলের মধ্যে হামিদুর রহমান, ডাঃ আঃ আজিজ সহ অনেকের প্রচেষ্ঠায় থানা উন্নীত হলেও পিছিয়ে ছিল সর্বদিক থেকেই। তাই প্রয়োজন অনুভিত হচ্ছিল উপজেলার। ঠিক এমনি মূহুত্বে এরশাদ সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ লে থানা গুলোকে উপজেলায় উন্নীত করার তৃতীয় পর্যায়ে ১৯৮২ সালের থানা, ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এরশাদ সরকার আমলে সাবেক মন্ত্রী এম এ সাত্তার ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সহ অনেকের অকান্ত পরিশ্রমে উপজেলায় উন্নীত হয়। তবে জনাব এম এ সাত্তারের সঠিক প্রচেষ্ঠা না পেলে বকশীগঞ্জ থানা উপজেলায় উন্নীত হতো কিনা সন্দেহ ছিল। এর-ই রাজনীতির পট পরিবর্তনে আব্দুর রউফ তালুকদার তার বাবা মৃত- মফিজল হক তালুকদার চেয়ারম্যান থাকা কালীন অবস্থায় রাজনীতি সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এমন কি ১৯৮৩ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই জনতার জোয়ারে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ থেকেই জনগণের সাথে ঘনিষ্ট সর্ম্পক গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ আগ্রাসী বন্যার কবলিত ভাষমান মানুষের পাশে দাড়িয়ে দুঃস্থ অসহায় মানুষের চোখে পড়েন। দুস্থ মানুষের পাশে নিরলস ভাবে নিয়োজিত ছিলেন বলেই বকশীগঞ্জ বাসী জননেতা হিসাবে তাকে আখ্যায়িত করেন। সেই সুবাধে ১৯৯০ সালে ২য় দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় জনগণের কাছে থাকা মানুষটিকে ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে ৩য় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরই ৩ বছর অতিবাহিত সময় কালে তিনি উপজেলার শিা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, পুল, কালভাট ও ৭টি ইউনিয়নের আনাচে কানাচের রাস্তা গুলি সরকারী ভাবে ও নিজ অর্থায়নে উন্নয়ন করে গেছেন। তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অত্র উপজেলায় চোরা চালান বন্ধা, শিা বিস্তার ও আইন শৃংঙ্খলার উন্নতি, গ্রামীণ জনগোষ্টির আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ এবং বৌত অবকাঠামো সংস্কার, জন্ম নিবন্ধান, যৌতুক প্রথা, বাল্য বিবাহ রোধ এবং গরীবদের স্যানিটেশন ব্যবহারে ব্যবস্থায় আধুনিকায়নে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি বলেন গণততন্ত্রকে স্থায়ী করতে হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
বকশীগঞ্জে ৭টি ইউনিয়নের গ্রামেগঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগে দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ রউফ তাকুকদার। চেয়ারম্যানের ৭ বছর দায়িত্বকালে উপজেলার গ্রামেগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুদান ছাড়াও নিজ অর্থায়নে বহু মসজিদ, মাদ্রাসা এমনকি শিা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য বিরামহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে উপজেলার অনেকে এক নামে চেনেন জননেতা আব্দুর রউফ তালুকদার হিসাবে। বিভিন্ন কর্মসূচী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদকে মডেল উপজেলা হিসাবে পরিণত করতে চান তিনি। অনেক অসহায় পরিবারকে সাহায্যে করে অভাবের অভিসাপ থেকে মুক্ত করছেন। যেমন- ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের বালুগ্রাও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া (৫৫)কে নিজ তহবিল থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বেকারত্বের অভিসাপ থেকে মুক্ত করেছেন এবং বাট্টাজোড় ইউনিয়নের অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ কে আর্থিন অনুদানে স্বচ্ছল করেছেন। এছাড়াও বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের নামা পাড়া নামক স্থানে ৮০ ল টাকা ব্যয়ে বকশীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কবরস্থানের কাজ হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে সবার সহযোগিতায় এবং আন্তরিকতায় চার ভাগের তিন ভাগ কাজ সমাপ্ত করেছেন। চারপাশে সীমানা প্রাচীর করে রাস্তার সাথে প্রধান ফটক তৈরী করেছেন। বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পশ্চিম পাশে মরোরম পরিবশে ৩ একর জমির উপর এই কবরস্থান নির্মিত হচ্ছে।
ব্রীজ,কালভার্ট সহ উপজেলার ছোটবড় ১০৮ টি প্রকল্পের কাজ এ যাবৎ সবার সহযোগিতা ও তার ঐক্যান্তিক প্রচেষ্ঠায় বাস্তবায়ন করেছেন। সেই সুবাদে তিনি ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রে“য়ারী ৪র্থ পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বকশীগঞ্জ আপামর জনসাধরণ আবারো বিপুল ভোট প্রদান করে তাকে চেয়ারম্যান বির্নাচিত করেছেন বলে এই প্রতিবেদক কে তিনি জানান। তিনি এই প্রতিবেদক কে আরো জানান যতদিন জীবিত আছি ততদিন সবার সহযোগিতায় অত্র উপজেলার গরীব দুঃখী অসহায় মানুষের শাসক নয় সেবক হিসাবে সেবা করে যেতে চাই।