সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন সমাজকল্যানমন্ত্রী
সাংবাদিকদের চরিত্রহীন বলে পেছনে লোক লেলিয়ে দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। শনিবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনায় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে মন্ত্রী বলেন, ‘এরা সবকটা খবিশ, চরিত্রহীন! স্বাধীন কমিশন হলে পরে দেখে নেবো তোমরা (সাংবাদিকেরা) কতটুকু যেতে পারো!’
তার এ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। এ সময় তারা মন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন। সৈয়দ মহসিন আলী তখন সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না।’
সিলেট বিভাগীয় আদিবাসী উদযাপন কমিটি আয়োজিত আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভা শুরু হয় বিকেলে। সভার বিষয়বস্তু আদিবাসী নিয়ে হলেও প্রায় ৪০ মিনিট বক্তৃতায় তিনি ঘুরে ফিরে সাংবাদিকদের নানারকম অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ আক্রমণাত্মক বক্তৃতা দেন। এ ধরনের মন্তব্যে করার সময় অশোভনীয় অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেন তিনি। পরে উপস্থিত সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠান বয়কট করেন। এ সময় মিলনায়তনে হট্টগোল শুরু হয়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বক্তৃতা শুরুতেই সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের সরে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে ‘তোমাদের মুখ দেখতে আসি নাই…’ বলে সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনের সামনে থেকে ক্যামেরা নিয়ে চলে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘এরা কেউ জার্নালিজমে পড়ে সাংবাদিক হয়নি। একমাত্র আমার মেয়ে জার্নালিজমে এমএ করেছে। আর এরা কলেজে ঘোরাঘুরি করে সাংবাদিক বনে গেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যতোদিন দুনিয়া থাকবে ততোদিন ফজরের নামাজের পর মসজিদে কোরআন শরীফ পাঠ হবে। মাদ্রাসা শিক্ষায় আরবির পাশাপাশি বাংলা-ইংরেজি শিক্ষা না দিলে তারা পিছিয়ে পড়বে। আমি একটি অনুষ্ঠানে এ রকম কথা বলেছিলাম, কিন্তু সাংবাদিকরা আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করেছে।’
সৈয়দ মহসিন আলী বলেন, ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ডেকে বলেছেন হাসানুল হক ইনু ১৪ দলের নেতা, আর তুমি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা। সাংবাদিকরা যা ইচ্ছে লেখুক, তাতে কিছু যায় আসে না। তুমি চালিয়ে যাও।’
এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের ‘খবিশ’ ও ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করার পর মিলনায়তনে উপস্থিত সাংবাদিকেরা প্রতিক্রিয়া দেখান। সাংবাদিক গ্যালারিতে থাকা সকল সাংবাদিক নীরবে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও মন্ত্রী গালি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকেরাও তার ওপর চড়াও হলে মন্ত্রী বক্তৃতা বন্ধ করে নীরব থাকেন। অনুষ্ঠান কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকেরা জেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ করে পরে মিলনায়তন এলাকা ছেড়ে চলে যান।
অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রীর এপিএস সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘মন্ত্রীর বক্তৃতাকে বিকৃত করে ইতিপূর্বে কয়েকটি পত্রিকা রিপোর্ট করায় মন্ত্রী ক্ষুব্ধ ছিলেন। সাংবাদিকেরা সামনে দেখে সেই ক্ষোভে মন্ত্রী কিছু কথা বলে ফেলেছেন। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক!’