মাওয়ার কাছে একটি নৌযান সনাক্ত, উদ্ধারে আটটি জাহাজ
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মানদীতে একটি ডুবন্ত নৌযানের সন্ধান পেয়েছে পিনাক-৬ উদ্ধারকারীরা।
এবিষয়ে কমান্ডার মঞ্জুর জানান, মাওয়ার কাছে পদ্মায় একটি নৌযান সনাক্ত হয়েছে। তবে এখনো নিশ্চিত না, এটি পিনাক-৬ কি না।
আটটি উদ্ধারকারী জাহাজ নৌযানটি উদ্ধারে অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আজ শনিবার সকাল থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ জরিপ-১০ ও কান্ডারি-২।
এদিকে আজ সকালে ভোলায় নদী থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে গত সোমবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবির পর বিভিন্ন স্থান থেকে এখন পর্যন্ত ৪১টি লাশ উদ্ধার করা হলো। এ ঘটনায় এখনো শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে।
লঞ্চ উদ্ধারের কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় উদ্ধারকাজ কিছুটা বিঘ্নিত হয়। তবে আজ সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।
অনুসন্ধানকাজে নিযুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, জরিপ-১০ ও কান্ডারি-২ মাটির নিচে ১৮ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে।
এ পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুসন্ধানি জাহাজ জরিপ-১০ ও কান্ডারি-২ এবং সাইড স্ক্যান সোনার ব্যবহার করে ‘তিস্তা’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব-দ্বীপ’ অভিযানে রয়েছে।
নৌ বাহিনীর সদরদপ্তরের উপপরিচালক কমান্ডার হাবিবুল আলম কান্ডারি-২ থেকে বলেন, দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক দফা খোঁজ করার পর এখন স্রোতের অনুকূলে নদীর তলদেশের মাটির সাথে ‘গ্রাফনল’ বেঁধে দেয়া হচ্ছে। স্রোত যেদিকে যাচ্ছে গ্রাফনলসহ জাহাজটিও সেদিকেই যাচ্ছে। এভাবে প্রায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে ভাটির দিকে ২০ কিলোমিটার এগিয়ে যাচ্ছে কান্ডারি-২।
এছাড়া ডুবে যাওয়ার পর লঞ্চটির ওজন অনুযায়ী এবং স্রোতের তীব্রতায় কোথায় গিয়ে লঞ্চটি পড়ে থাকতে পারে তা হিসাব-নিকাশ করে কয়েকটি সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাবিবুল আলম বলেন, এখন ওই চিহ্নিত এলাকায় জরিপ-১০ কাজ করছে। এছাড়া ‘তিস্তা’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব-দ্বীপ’ এই চারটি জাহাজ বিভিন্ন এলাকায় সাইড স্ক্যান সোনার দিয়ে সন্ধান চালাচ্ছে। নদীর তলদেশ ১০ মিটার থেকে ৪৬ মিটার পর্যন্ত গভীরতায় এসব সন্ধানিদল জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে ‘ইকো সাউন্ডার’ ও ‘সাব বটম প্রোফাইলার’ ব্যবহার করে দুর্ঘটনাস্থলকে ঘিরে ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও চিহ্নিত করা যায়নি লঞ্চটির অবস্থান।
এদিকে দীর্ঘ ছয় দিনেও লঞ্চের অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় ক্ষোভ বাড়ছে স্বজনহারা পরিবারে। অনেকেই লঞ্চ উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে লাশের জন্য সম্ভাব্য স্থানগুলোতে নিজ উদ্যোগে খুঁজে ফিরছেন।
নিখোঁজ স্বজনদের অভিযোগ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বিলম্ব করার কারণে লঞ্চটি পাওয়া যাচ্ছে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার জানান, চেষ্টার কোন ত্রুটি হচ্ছে না। দুর্ঘটনাস্থলে প্রবল ঘূর্ণি স্রোতে এবং পানির গভীরতা প্রায় ৮০/৯০ ফুট। ঘূর্ণির কারণে নদীর তলদেশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
স্রোতের কারণে লঞ্চটি দূরে সরে গিয়ে বালুর নিচে চাপা পরে থাকতে পারে বলে তার ধারণা।
অপরদিকে উদ্ধারকারীরা মনে করছেন, ঘোলা পানির নিচে প্রবল স্রোত থাকায় নদীর তলদেশে কোথাও কোথাও সমতলে হঠাৎ খাদ আছে। সে খাদে আটকে বালুচাপায় থাকতে পারে পিনাক-৬।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার, ২৩টি মৃতদেহ হস্তান্তর, ১২টি দাফন করা হয়েছে। নিখোঁজের তালিকায় রয়েছে ১০৮ জনের নাম। গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে আড়াইশ’ যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে লৌহজং ক্রসিংয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে মাওয়া ঘাটের ১০০ গজ দূরে লৌহজং চ্যানেলে প্রচণ্ড স্রোতের তোড়ে ২৫০ জনেও বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটি কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া রওনা হয়েছিল।