দেশ-কাল-জনতা ও বঙ্গবন্ধু -মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশেষভাবে স্মরণ করার মাসটি হলো আগস্ট। কারণ, পঁচাত্তরের এই মাসের পনেরো তারিখে দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের মদদে ঘাতকরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্য সব মানুষের মতোই ভালো-মন্দ মিলিয়ে এই মর্তেরই মানুষ। তিনি অতিমানব ছিলেন না। কিন্তু দেশ ও কালের গণ্ডির মাঝে থেকেও তিনি ছিলেন যুগের মহামানব।
কোনো ব্যক্তির জীবনই একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সত্য কথা বলতে, মানুষের মতো ‘মানুষ’ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে একটি প্রাথমিক ও অপরিহার্য শর্তের কারণে। সেই শর্তটি হলো সামাজিক-শ্রম ও সমাজবদ্ধ থাকার প্রক্রিয়া। সমাজবদ্ধ থাকার মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হওয়া পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া। জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ সামাজিক জীব। তারা যুগ যুগ ধরে বিবর্তিত হয়ে মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ যতোটা হয়েছে, সেটিও সম্ভবপর হয়েছে তার সমাজবদ্ধতার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। কোনো মানুষই স্বয়ম্ভু নয়। সে কেবল আপন ইচ্ছা ও আপন শক্তিতে নিজেকে সৃষ্টি ও বিকশিত করতে পারে না। সমাজের বাস্তবতা ও জনগণই চূড়ান্ত বিচারে একজন ব্যক্তিকে সৃষ্টি ও গঠন করে। এসব কথা যেমন সমাজের একজন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা একইভাবে প্রযোজ্য সমাজের ‘মাথায়’ যারা থাকেন তাদের ক্ষেত্রেও। সে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
প্রতিটি মানুষ যেমন সামাজিক গণ্ডির ঊর্ধ্বে নয়, তেমনি সে ‘দেশ ও কালের’ সীমারও বাইরে নয়। যুগের বাস্তবতা একজন মানুষের বৈশিষ্ট্য ও বিকাশের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির দৈহিক ও চেতনাগত সীমাই শুধু নয়, তার বিকাশও সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়। দেশের ‘নেতাদের’ ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। বঙ্গবন্ধু এই ক্রমবিবর্তনের প্রক্রিয়ার বাইরে ছিলেন না।
ইচ্ছা নিরপেক্ষ এসব উপাদানের দ্বারা নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যেই প্রতিটি মানুষকে চলতে হয়। এ কথার অর্থ অবশ্য মোটেও এটি নয় যে, মানুষ কেবল তার পারিপার্শ্বিক সমাজ, জনগণ ও দেশ-কালের বাস্তবতার অন্ধ নিয়ন্ত্রণে চালিত একটি যান্ত্রিক পুতুল মাত্র। ইচ্ছা নিরপেক্ষ এই গণ্ডির দ্বারা সীমিত থাকতে হলেও, সেই সীমার মধ্যেই প্রতিটি মানুষ নিজ দায়িত্বে তার আপন জীবনকে পরিচালনা করে। এই সূত্রেই নির্ধারিত হয় কে বা কারা সমাজের যুগের ‘মাথা’ বা অগ্রনায়কের আসনে অধিষ্ঠিত হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠাটা তার নিজস্ব সাধনার ফল ও কৃতিত্বও বটে।
শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জন্মলগ্ন থেকেই ‘জাতির পিতা’ ছিলেন না। শুরুতে তিনি ছিলেন দুরন্ত কিশোর,— মুজিবুর। অনেকের কাছে মুজিব ভাই। তার পর মুজিবুর রহমান, অথবা শেখ মুজিবুর রহমান। তার পর বহুদিন ধরে মানুষের মুখে মুখে তার নাম ছিল ‘শেখ সাহেব’।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন পরিচয় ‘বঙ্গবন্ধু’।
একাত্তরের পর তিনিই স্বাধীন দেশের স্থপতি ‘জাতির পিতা’।
তিন দশক সময়কালের মধ্যে এভাবেই ঘটেছিল তার অবস্থানের উত্তরণ।
তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনে তাঁর চিন্তাধারা-জীবন দর্শনেও উত্তরণ ঘটেছে। শুরুটা ছিল পাকিস্তান আন্দোলনের ছাত্র-কর্মী হিসেবে। কিন্তু সে সময়ও মুসলিম লীগের মধ্যে উদারনৈতিক ও কিছুটা প্রগতিমুখীন যে প্রবণতা ও অংশ ছিল, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই আবুল হাশেম-সোহরাওয়ার্দী সাহেবের অনুগামী। তিনি ছিলেন ঢাকার নবাবদের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের বিরুদ্ধে। তিনি একইসাথে ছিলেন নেতাজী সুভাষ বোসের ভক্ত। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট—এই তিন দলের ঝাণ্ডা নিয়ে কলকাতায় ‘রশিদ আলী দিবস’ পালনসহ নানা কর্মসূচিতে সঙ্গী-সাথী-অনুগামীসহ তিনি ছিলেন একজন উত্সাহী যৌবনদীপ্ত অংশগ্রহণকারী। মুসলিম লীগের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও তখন থেকেই তার মাঝে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি একটি গভীর মনের টানের দেখা পাওয়া যায়। সাথে সাথে লক্ষ্য করা যায় অসাম্প্রদায়িক বোধের প্রাথমিক উন্মেষ।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি জাতির ওপর পরিচালিত শোষণ-বঞ্চনা, বাংলা ভাষার ওপর আঘাত, প্রতিক্রিয়াশীল অংশের দ্বারা মুসলিম লীগের নেতৃত্ব করায়ত্ত হওয়া ইত্যাদি তাকে অতিদ্রুতই পাকিস্তান সম্পর্কে মোহমু্ক্ত করে তোলে। সাধারণ কর্মচারীদের দাবি নিয়ে সংগ্রাম করে তিনি জেলে যান। মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগের একজন প্রধান সংগঠক হয়ে ওঠেন।
প্রাদেশিক মন্ত্রি-সভায় ‘শেখ সাহেব’ দুইবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নীতি-আদর্শ থেকে সরে আসার কারণে এক সময় আওয়ামী লীগ ভেঙে ন্যাপ গঠিত হয়। চলে নবগঠিত ন্যাপের ওপর আওয়ামী-হামলা-বাজি। ‘শেখ সাহেব’ অচিরেই বুঝতে সক্ষম হন যে, বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু তার নেতা সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। দলের ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও এ্যাসেমব্লিতে ন্যাপ উত্থাপিত স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
আইউবী সামরিক শাসন জারির পর প্রবল নির্যাতন ও আক্রমণের মুখে ‘শেখ সাহেব’ অনেকদিন হতাশায় আচ্ছন্ন থাকার পর আবার চাঙা হয়ে ওঠেন। ‘৬১ সালের শেষ দিকে আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট পার্টি নেতা মণি সিংহ, খোকা রায় প্রমুখের সাথে কয়েকটি গোপন বৈঠকে তিনি মিলিত হন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সূচনা করার কৌশল নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সেই ভিত্তিতে সূচিত হয় ‘৬২-এর সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র-গণ আন্দোলন।
‘৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর ‘শেখ সাহেব’ বুঝতে পারেন যে, এখন স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে সামনে রেখে বাঙালির স্বাধিকারের জন্য জোরেশোরে নামার সময় এসে গেছে। তিনি ৬-দফা দাবি পেশ করে আন্দোলনে নেমে পড়েন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও নামডাকওয়ালা নেতাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তিনি দৃঢ়চেতাভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। আইউব-মোনায়েম সরকারের আক্রমণকে উপেক্ষা করে সাহসী মহাবীরের মতো আপসহীনভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন বাঙালির স্বাধিকারের দাবি নিয়ে। দলের কর্মীরা শুধু নয়, সমগ্র দেশবাসী এই ৬-দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাঁর পেছনে সমবেত হতে থাকে।
সরকার মরিয়া হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তাকে সবদিক থেকে ‘শেষ করে দেয়ার’ চেষ্টায় নামে। কিন্তু ‘শেখ সাহেব’ ছিলেন ইতিহাসের পক্ষে এবং ইতিহাস সৃষ্টির মতো প্রজ্ঞা, জেদ, প্রত্যয় ও দক্ষতাসম্পন্ন। পাক-সরকারের প্রতিটি আঘাত তাঁর জন্য বীরমাল্য স্বরূপ ভূষণ হয়ে ওঠে। ক্রমান্বয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা অসামান্য উঁচু স্তরে পৌঁছে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির একক ও অবিসংবাদিত নেতা। ৬-দফাকে প্রগতিশীল কর্মসূচিতে সমৃদ্ধ করে রচিত হয় ঐতিহাসিক ১১-দফা। সংঘটিত হয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। মুক্ত হয়ে আসেন মহানায়ক। শেখ সাহেব হয়ে ওঠেন ‘বঙ্গবন্ধু’।
‘৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু তাঁর দলকে নিয়ে অভূতপূর্ব বিজয় ছিনিয়ে আনেন। ইয়াহিয়া খান সেই বিজয়কে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয় পরিষদের বৈঠক বাতিল করে দেয়। দেশের অঘোষিত সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু যেন ক্ষমতায় যেতে না পারেন সেজন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সমগ্র বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধু জনতার ক্রোধ ও স্বাধিকারের প্রত্যয়কে ধারণ করে জাতিকে স্বাধীনতার সংগ্রামের পথে এগিয়ে নেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো’। …ইত্যাদি। স্বাধীনতার পথে বাঙালির যাত্রার শীর্ষ পর্যায়ের ও প্রত্যক্ষ অধ্যায়ের সূচনা সেখানে থেকেই। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন স্বাধীনতার জন্য জাগ্রত জাতির ঐক্যের প্রতীক। স্বাধীনতার স্থপতি। জাতির জনক।
একথা ঠিক যে, চূড়ান্ত বিচারে জনগণই হলো ইতিহাসের স্রষ্টা। সাথে সাথে একথাও অসত্য নয় যে, ইতিহাস সৃষ্টিতে ব্যক্তির ভূমিকাকেও অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করা যায় না। ইতিহাসই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জন্ম দেয়। ইতিহাসের নিজস্ব প্রয়োজনেই বিশেষ মুহূর্তে এসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিদেরকে ‘ইতিহাস’ নিজেই জনগণের দ্বারা রচিত হতে থাকা যুগান্তকারী ঘটনাবলীর প্রাণকেন্দ্রে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ইতিহাসের হাতে তৈরি হওয়া সেই ব্যক্তিরাই আবার ইতিহাস নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ামক ওয়ে ওঠেন। জনগণ ও ব্যক্তির ভূমিকা এভাবে পরস্পর পরিপূরক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াতেই ইতিহাস রচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল সেরূপ নিয়ামক। জনগণের সামনে অবস্থান নিয়ে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের স্থপতিরূপে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা, বাংলাদেশের জন্ম—এসব ঐতিহাসিক অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রধানত জনগণের অমোঘ শক্তির ফলে। তাছাড়া তা সম্ভব হয়েছে শেরেবাংলা, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, মণি সিংহ প্রমুখ অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তির ত্যাগ-তিতিক্ষা-অবদানে। এসব কালজয়ী ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি ঠিক ক্রান্তিকালীন সময়টিতে জনগণের সংগ্রাম, আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-সাধনা, মনের কথাকে সবচেয়ে উপযুক্ত ও বলিষ্ঠভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি হলেন বাঙালির প্রিয় নেতা ‘শেখ সাহেব’— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে কারণেই জনগণের অন্তরে ও বাস্তব বিচারে তার অবস্থান অন্য সব ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ঊর্ধ্বে স্থান করে নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা ও তার ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের যেসব ঐতিহাসিক অর্জন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার প্রতীক ও কেন্দ্রবিন্দু। এ বিষয়টিকে অস্বীকার করাটা একটি অন-ঐতিহাসিক পণ্ডশ্রম মাত্র। এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ ও বিতর্ক থাকলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মধ্যদিয়ে তার চূড়ান্ত অবসান হয়ে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত। ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টে একটি ব্যক্তিগত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি। একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যকে চরিতার্থ করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যটি ছিল দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা থেকে কক্ষচ্যুত করে পরাজিত পাকিস্তানি ধারা ফিরিয়ে আনা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারার ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীনতার প্রতীকী পুরুষ ও কেন্দ্রবিন্দুকে, তথা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া এ ধরনের উল্টোমুখী রাজনৈতিক ডিগবাজি সংগঠিত করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। তাই, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা থেকে দেশকে সরিয়ে আনতে হলে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করাটা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। এবং ঠিক সেটিই করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বদলে ফেলে দেশকে সাম্প্রদায়িক, সামরিক-স্বৈরাচারী, পুঁজিবাদী-লুটপাটতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ নির্ভরশীলতার পথে টেনে নামানো হয়েছিল। এ ঘটনাতেই প্রমাণিত হয় যে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি মোটা দাগে সমার্থক ছিল। তা না হলে রাষ্ট্রীয় নীতি বদলানোর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে হতো না এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর রাষ্ট্রীয় নীতি বদলানো হতো না।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে ইতিহাসের গতিধারাকে বহুলাংশে উল্টে দিতে পারলেও, তার সবটুকু অর্জন নিঃশেষ করা যায়নি। তার কারণ, মুক্তিযুদ্ধ যেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর কীর্তি তেমনি তা প্রধানত ছিল জনগণের নির্মাণ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হলেও জনগণকে হত্যা করা যায়নি। তাই, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা আজও জীবন্ত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তা এখনো পূর্ণতা নিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা না পেলেও, তা নিরন্তর জাগ্রত রয়েছে কোটি মানুষের অন্তরে। একইভাবে, বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবও চিরঞ্জীব থাকবেন কোটি জনতার অন্তরে। তা এ কারণে যে, বঙ্গবন্ধু ও জনগণের মিলিত কীর্তি হলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা ও তার ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীনতা। জনতার মৃত্যু নেই, তাই মৃত্যু নেই বঙ্গবন্ধুরও!