বালিজুরি রেঞ্জে বৃক্ষ নিধনে উজাড় হচ্ছে গারো পাহাড়
শ্রীবরদী, শেরপুর : এখন প্রকাশ্যে পাচার হচ্ছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জের মালাকোচা বিটের বন বৃক্ষ। প্রতিদিন ট্রাক, ট্রলি, ভ্যান ও মহিষের গাড়ী প্রবেশ করছে বন বাগানের অভ্যন্তরে। সংরক্ষিত এলাকা থেকে শত শত ঘনফুট কাঠ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এসব বৃক্ষ পাচার নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় কয়েকজন অসাধূ কাঠ ব্যবসায়ী ও বন বাগানের অংশীদার। এর জন্যে বন বিভাগ ও প্রশাসনের নামে টোল আদায় হচ্ছে বনাঞ্চলসহ কয়েকটি পয়েন্টে। এতে ন্যাড়া হচ্ছে গারো পাহাড়। সম্প্রতি কাঠ পাচার বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ তুলেছেন বন বাগানের অংশীদার ও সচেতন মানুষ।
অভিযোগে প্রকাশ, বালিজুরি রেঞ্জের মালাকোচা বিটে রয়েছে ২০০৪ সালে সৃজিত করা হয় একাশি, মেহগিনি ও গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। ক’মাস যাবত নানাভাবে চলছে এসব বৃক্ষ নিধন। গত ২৯ জুলাই সবাই ঈদ নিয়ে ব্যস্ত। সেইদিন বালিজুরি রেঞ্জের মালাকোচা বিটের অভ্যন্তরে এক একর জমির প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের বৃক্ষ প্রকাশ্যে কাটা হয়। পরে রাতেই ট্রলি দিয়ে পাচার করা হয় এসব বৃক্ষ। মালাকোচা এলাকার বন বাগানের অংশীদার ও স্থানীয় ফারুক মিয়া, আমিরুল ইসলাম, মাইনদ্দিন মিয়া, জহুরুল হক, হারুন মিয়া, আজিজুর রহমানসহ অনেকে জানান, বন বাগানের সৃজিত এ বাগান দখল করে রেখেছিল স্থানীয় মিষ্টার মিয়া নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমিত না নিয়েই বৃক্ষ নিধন করে। পরে এসব বৃক্ষ নেয়া হয় কর্ণঝোড়া বাজারের কাঠের অবৈধ ডিপুতে। এসব কাঠ এখান থেকে ট্রাকে করে প্রকাশ্যে পাচার করা হয়। এখনও ওই বাগানের বৃক্ষের মূল গোড়ালিগুলো রয়েছে। যা তদন্ত করলে দেখা যাবে। তাদের মতে, বালিজুরি রেঞ্জ অফিসার মাহবুবুল আলম মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে এ বাগান কর্তনের মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত চলছে বৃক্ষ নিধন। এসব কাঠ পাচারের সময় কর্ণঝোড়া, বালিজুরি, ভায়াডাঙ্গা ও শ্রীবরদীতে বন বিভাগসহ প্রশাসনের নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাক এক হাজার, ট্রলি ৫শ, মহিষের গাড়ি ৩শ ও ভ্যানগাড়ি ১শ টাকা। প্রশাসন এসব দেখেও যেন রহস্যজনক কারণে নিরব। টোল আদায় বা উৎকোচ গ্রহণ অস্বীকার করে বালিজুরি রেঞ্জ অফিসার মাহবুবুল আলম বলেন, ওইদিন আমরা ছুটিতে ছিলাম। পরে শোনেছি। তাছাড়া আমাদের জনবল কম। তাই আমাদের পাহাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সচেতন মানুষের আশংকা এভাবে চলতে থাকলে অচীরে ন্যাড়া হবে গারো পাহাড়। সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সরকারি সম্পদ রক্ষা ও ঐতিহ্যবাহী এ গারো পাহাড়কে রক্ষা করতে এখনই উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।