ডুবে যাওয়া পিনাকের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা
পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমভি পিনাক-৬ নামের লঞ্চটির সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের মেঘনা চেইন কপ্পা এন্ড সাইকেল মার্টের পরিচালক ডুবুরি হাসান দাবি করেছেন, জাহাজটি পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে তিনি এ দাবি করেন।
টানা ৮দিন সরকারিভাবে উদ্ধার তৎপরতার কোনো অগ্রগতি না পেয়ে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক উদ্ধারের কাজ সোমবার স্থগিত করেন। এরপর লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করেছেন বলে দাবি করছেন মো. হাসান। খুব শিগগিরই লঞ্চটি উদ্ধার করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মেঘনা চেইন কপ্পা এন্ড সাইকেল মার্টের পরিচালক মো. হাসান জানান, সোমবার সকালে সনাতন পদ্ধতিতে ২০ জনের একটি দল লঞ্চটির অবস্থান নিশ্চিত করে। এরপর চেইন কপ্পা দিয়ে মাঝ পদ্মায় লাল চিহ্নের একটি ছোট ড্রাম দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে আসার পথে পদ্মায় ডুবে যায় এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও জেলা প্রশাসন ওই লঞ্চে আড়াই শতাধিক যাত্রী থাকার কথা বললেও স্থানীয় পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারপাওয়া যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পিনাকে যাত্রী ছিল সাড়ে তিনশর মতো।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা ও পুলিশ ঘাটের স্পিডবোটে করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সে সময় আনুমানিক ১১০ জনকে জীবিত করা সম্ভব হয়।
এরপর ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের লোকবল ও নৌযান নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রশাসনের ভাষায় ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে তল্লাশি চালানো হয় নদীর ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। কিন্তু পিনাকের অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারায় মাঝ পদ্মায় বেকার বসে থাকতে হয় উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীককে।
এসময় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত উদ্ধারকারী জাহাজ জরিপ-১০, কাণ্ডারী-২, তিস্তা, সন্ধানী, আইটি ৯৪, বদ্বীপ, পেট্রল ক্রাফটসহ ১১টি জাহাজ উদ্ধার অভিযানে নামানো হয়েছিল। কিন্তু ফল শূন্য।
এদিকে পিনাক-৬ ডুবিতে এখন পর্যন্ত নিখোঁজের সংখ্যা ৬১ জন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। নিখোঁজ তালিকায় সবচেয়ে বেশি রয়েছে ফরিদপুর জেলার মানুষ। এই জেলার ২০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিখোঁজ রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার ১২ জন। এ ছাড়াও মাদারীপুর জেলার ১০ জন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচজন, ঝালকাঠি, বরিশাল ও ঢাকার দুজন করে নিখোঁজ রয়েছেন। কক্সবাজার, নরসিংদী ও গাজীপুরের একজন করে এবং শরীয়তপুর জেলার তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
জেলাভিত্তিক নিখোঁজ তালিকা
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার শেখ আলী (৩৫), আল-আমিন (২৮), রবিউল মাতবর (৩০), রোজিনা (২৬), রেজাউল (২৮), একই জেলার সদরপুর উপজেলার সোবহান মাতবর (৩৭), ইতি বেগম (৩০), ইভান মাতবর (৮), শিমুল পারভীন (৩৫), রুবেল (৪০), ফাইজা (৭, দুর্ঘটনার চতুর্থ দিন ফাইজা নামের একটি লাশ শনাক্ত করলেও পরে সেটি ভুল প্রমাণিত হয়), ফাতেহা (৪), শাহিনূর বেগম (২৩), আছমা বেগম (২৮), মাহবুবুর রহমান (৪২), আজিজুল (২৮), রুপালী বেগম (২১), আরজু (৭), ইমরান মাতবর (৬০) ও সোবহান মাতবর (৩০)।
গোপালগঞ্জ জেলার নিখোঁজরা হলেন- মুকসেদপুরের পলি (২৮), মেঘলা (৬), মাকসুদা (২৮), হানিফ (৩), তসলিমা (২৫), ফাতেমা আক্তার স্বর্ণা (১৬), বিল্লাল (২৩), ফরহাদ (২৭), শিল্পী (২৫), ফাহিম (১), মিন্টু মোল্লা (২৬) ও নিজাম (২৭)।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার লিপি (২৫), মিরাজ (৮), সাদিয়া (৯), ফালানী (২০), কফিল উদ্দিন সরকার (৭০), আলী আকবর (৩৮), শাহিনূর (১৭), রাবেয়া (৮), একই জেলার কালকিনি উপজেলার ফরিদা পারভীন (২৫) ও তৃষা (২২) নিখোঁজ রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার আয়েশা (৩৪), সারা (১১), রোজিনা (১২), হালিমা (২০) ও তানজিমা (১৩)।
ঢাকার মগবাজারের আফরোজা (১৭) ও মুগদা এলাকার শিল্পী আক্তার নাসরিন (২৫)।
বরিশাল জেলার উজিরপুরের মিজানুর রহমান (৪০), একই জেলার গৌরনদী উপজেলার ময়না (২০), গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার মিম আক্তার (১৪) ও নরসিংদী জেলার একমাত্র নিখোঁজ রুবেল (২২)।
শরীয়তপুর জেলার নগরকান্দার স্বপ্না বেগম (২৬), আবদুল্লাহ (৩) ও রিক্তা (২২) এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার একমাত্র নিখোঁজ রয়েছে উমেজা (১১)।
এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের মিরা (৬৪) ও মকবুল আহমেদ (৪৪) এবং ঝালকাঠি জেলার মিতু (২৭) ও মেরাজ (৯) নিখোঁজদের তালিকায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, লঞ্চডুবির অষ্টম দিন শেষে উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থ হয়ে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর শনাক্তকরণ তৎপরতা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। সোমবার সকাল ১১টায় মাওয়ায় পদ্মা রেস্টহাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল হাসান বাদল এ কথা জানান।
সেসময় তিনি বলেন, বাস্তবতা বিবেচনা করে, সময় বিবেচনা করে, নদীর পরিস্থিতি ও আবহাওয়া- সব কিছু বিবেচনা করে আমরা মনে করছি, লঞ্চ সনাক্তকরণ তৎপরতা আর চালানোর কোনো অবকাশ নাই। চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বা চালালে ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। তাই এই লঞ্চ সনাক্তকরণ তৎপরতা আমরা স্থগিত ঘোষণা করছি। অনান্য কার্যক্রম- লাশ খোঁজা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে।